প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৪:১০:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
বিশেষ ধর্মীয় প্রতিবেদন।।ইসলামে রিযিক (জীবিকা) শুধু উপার্জন নয়; এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত নিয়ামত, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাকওয়া,আমল ও আখলাক। কোরআন ও সহিহ হাদিসে এমন বহু গুনাহর কথা বলা হয়েছে,যেগুলো মানুষের রিযিকের বারকাহ উঠিয়ে নেয়, অভাব ডেকে আনে এবং দুনিয়া–আখিরাত উভয় ক্ষতির কারণ হয়।নিচে কোরআন ও হাদিসের নির্ভরযোগ্য রেফারেন্সসহ এমন ২০টি গুনাহ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো—

১. সুদ (রিবা)
সুদ এমন একটি অপরাধ,যার বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।সুদের অর্থে কোনো বারকাহ থাকে না; বাহ্যিকভাবে বাড়লেও ভেতরে ধ্বংস লুকিয়ে থাকে।
কোরআন:
> “যদি তোমরা তা পরিত্যাগ না করো,তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা জেনে নাও।”
— সূরা আল-বাকারা: ২৭৯
২. অকৃতজ্ঞতা (কুফরুন নিআ’মাহ)
আল্লাহ প্রদত্ত রিযিককে তুচ্ছ করা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা রিযিক কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
কোরআন:
> “তোমরা কৃতজ্ঞ হলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও দেব; আর অকৃতজ্ঞ হলে আমার শাস্তি কঠিন।”
— সূরা ইবরাহীম: ৭
৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা
রিযিক ও হায়াত বৃদ্ধির সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
হাদিস:
> “যে ব্যক্তি তার রিযিক বৃদ্ধি ও আয়ু দীর্ঘ করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।”
— সহিহ বুখারি: ২৯৮৬
৪. অসততা
ব্যবসা বা লেনদেনে মিথ্যা ও অসততা সাময়িক লাভ দিলেও দীর্ঘমেয়াদে রিযিকের বারকাহ নষ্ট করে দেয়।
হাদিস (অর্থগত):
> “সত্যবাদী ব্যবসায়ীর ওপর আল্লাহর রহমত থাকে।”
৫. প্রতারণা
প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হারাম এবং বারকাহহীন।
হাদিস:
> “যে প্রতারণা করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
— সহিহ মুসলিম: ১০২
৬. সালাত অবহেলা
আজান ও সালাতকে হালকা মনে করা আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল করে, যার প্রভাব রিযিকে পড়ে।
কোরআন:
> “ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সালাতে গাফিল।”
— সূরা আল-মাউন: ৪–৫
৭. গীবত
অন্যের পেছনে নিন্দা করা আমল ধ্বংস করে এবং রিযিকের বারকাহ গ্রাস করে।
কোরআন:
> “তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?”
— সূরা আল-হুজুরাত: ১২
৮. অহংকার
অহংকার আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে।
হাদিস:
> “যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
— সহিহ মুসলিম: ৯১
৯. যাকাত আটকে রাখা
যাকাত না দিলে সম্পদ পবিত্র থাকে না এবং ধ্বংসের পথে যায়।
কোরআন:
> “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না—তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
— সূরা আত-তাওবা: ৩৪–৩৫
১০. কর্মচারীদের ওপর জুলুম
অন্যের হক নষ্ট করা আল্লাহর সাহায্য বন্ধ করে দেয়।
হাদিস:
> “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করো।”
— ইবন মাজাহ: ২৪৪৩
১১. পণ্যের দোষ গোপন করা
লেনদেনে স্বচ্ছতা না থাকলে বারকাহ তুলে নেওয়া হয়।
হাদিস:
> “দোষ গোপন করলে বরকত তুলে নেওয়া হয়।”
— সহিহ বুখারি (অর্থগত)
১২. লোভ
অতিরিক্ত লোভ মানুষকে কখনো তৃপ্ত হতে দেয় না।
হাদিস:
> “আদম সন্তানের যদি দুই উপত্যকা সম্পদ থাকে, তবুও সে তৃতীয়টি চাইবে।”
— সহিহ বুখারি: ৬৪৩৯
১৩. বাবা–মাকে অবহেলা
বাবা-মায়ের সন্তুষ্টির সঙ্গে রিযিক ও আয়ু বৃদ্ধি জড়িত।
হাদিস:
> “বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখলে আল্লাহ রিযিক ও আয়ু বাড়িয়ে দেন।”
— সহিহ মুসলিম (হাসান অর্থে)
১৪. জুলুম করে সম্পদ অর্জন
জুলুমের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দুনিয়ায়ও শান্তি আনে না।
কোরআন:
> “জালিমরা কখনো সফল হয় না।”
— সূরা আল-আনআম: ২১
১৫. সদকা অবহেলা
সদকা রিযিক বৃদ্ধি ও বিপদ দূর করে।
হাদিস:
> “সদকা সম্পদ কমায় না।”
— সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮
১৬. হিংসা
অন্যের নিয়ামতের ওপর হিংসা করা নিজের আমল নষ্ট করে।
হাদিস:
> “হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন কাঠ খেয়ে ফেলে।”
১৭. নারী ও শিশুদের প্রতি জুলুম
দুর্বলদের প্রতি অন্যায় আল্লাহর গজব ডেকে আনে।
হাদিস (অর্থগত):
> “দুর্বলদের হক নষ্ট করার ব্যাপারে সাবধান।”
১৮. মিথ্যা কসম
ব্যবসায় মিথ্যা শপথ সাময়িক বিক্রি বাড়ালেও বরকত ধ্বংস করে।
হাদিস:
> “মিথ্যা কসম বিক্রি বাড়ায়, কিন্তু বরকত নষ্ট করে।”
— সহিহ বুখারি: ২০৮৭
১৯. অলসতা
রিযিক চেষ্টা ও পরিশ্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
হাদিস:
> “হে আল্লাহ! আমি অলসতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।”
— সহিহ মুসলিম
২০. তাকদির নিয়ে অসন্তুষ্টি
আল্লাহর ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্টি হৃদয়ের প্রশান্তি ও ভবিষ্যতের রিযিক নষ্ট করে।
হাদিস:
> “যে আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তার হৃদয় পরিপূর্ণ করে দেন।”
— তিরমিজি: ২৫১০
উপসংহার
ইসলামের দৃষ্টিতে রিযিক শুধু উপার্জনের ফল নয়; এটি আল্লাহর আনুগত্য,নৈতিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।উপরোক্ত গুনাহগুলো পরিহার করে তাকওয়ার পথে চললেই রিযিকে বরকাহ,অন্তরে প্রশান্তি এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
















