সারাদেশ

রাজধানীর যানজটকে সহনীয় ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন-ডিএমপির কমিশনার, হাবীবুর রহমান

  প্রতিনিধি ৩ অক্টোবর ২০২৩ , ৫:৩৩:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।যানজট রাজধানীর অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা।যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হয় মূল্যবান কর্মঘণ্টা, অতি মূল্যবান জ্বালানিও। ২০ মিনিটের দূরত্ব পেরোতে সময় লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা।তাই রাজধানীর যানজটকে সহনীয় ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন সদ্য যোগ দেওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান। সোমবার (২ অক্টোবর) ডিএমপি সদর দফতরে তার সভাপতিত্বে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভার আলোচনার ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে একটি নির্দেশনা জারি করেছেন ডিএমপি কমিশনার।সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বলেন,আমরা যানজটের কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করার উদ্যোগ নিয়েছি।সাধারণ মানুষসহ সব স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও বেশি উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে চাই।’

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরের যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে।সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর লাগোস ও ইকোরোদু।এরপরে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের দুই শহর ময়মনসিংহ (নবম) ও চট্টগ্রাম (১২তম) রয়েছে।

যান চলাচলের এই ধীরগতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও।সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলেছে, যানজটের কারণে ঢাকাবাসীকে প্রতি ২ ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট সড়কে বসে কাটাতে হয়।বছরে জনপ্রতি গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হয় যানজটে।বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অসহনীয় যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।এতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েকশ’ কোটি টাকা।

নবনিযুক্ত ডিএমপি কমিশনার এক নির্দেশনায় বলেছেন, রাজধানীর সব বাস স্টপেজ বা বাস-বে’র সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।বাস স্টপেজ বা বাস-বে’র বাইরে কোনও বাস দাঁড়াবে না।রাস্তার মোড়গুলো ফ্রি রাখতে হবে।যেখানে পার্কিং নিষেধ সেসব মোড়ে রিকশা,ভ্যান,মোটরসাইকেল ইত্যাদি কোনও যানবাহন দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না।যেসব রাস্তায় রিকশা চলাচলের অনুমতি নেই,সেখানে রিকশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।আন্তজোন বা বিভাগকেন্দ্রিক প্রোপার রেশনিং এবং কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।দুই বা ততধিক জোন কিংবা বিভাগগুলোকে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।ফ্লাইওভারের মুখে বাসযাত্রী ওঠাবে বা নামাবে না। একইসঙ্গে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ জটলামুক্ত রাখতে হবে।

ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে,কোনও অবস্থাতেই মূল রাস্তার ওপর হকার বা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতে দেওয়া যাবে না।বহিরাগত জেলা বা মেট্রোর কোনও সিএনজি বা যানবাহন ঢাকা শহরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ভারী যান (দেড় টনের বেশি ওজনবিশিষ্ট) নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ঢাকা মহানগরীতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।ব্যাটারি-চালিত রিকশার বিষয়ে যথাযথ বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। রেকারিং যথাযথভাবে করতে হবে।আন্তজেলা রুটের বাস ঢাকা মহানগরীর ভেতর দিয়ে অযাচিতভাবে যত্রতত্র চলতে দেওয়া যাবে না।সব রাস্তার বাম লেন অত্যাবশ্যকভাবে সচল রাখতে হবে। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নিতে হবে।

ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়,রাস্তায় টিআই, সার্জেন্ট এবং অন্যান্য ট্রাফিক সদস্যদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এডিসি ও এসি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও সড়কে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।প্রয়োজনে রোটেশন পদ্ধতিতে রাস্তায় বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।ব্যবহার ও আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।কোনও অবস্থাতেই কারও সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা যাবে না। মামলা,রেকারিং এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সময় অবশ্যই বডিওর্ন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content