অপরাধ-আইন-আদালত

রাজধানীতে বাড়ি-ফ্ল্যাট করলেও তার মায়ের বসবাস গ্রামের ভাঙা ঘরে!

  প্রতিনিধি ১০ জুলাই ২০২৪ , ৫:২২:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।।দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হওয়া ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপক হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের গ্রামের বাড়িতে তেমন সম্পদ বা দৃশ্যমান স্থাপনা নেই।তবে ঢাকার বনশ্রীতে দোতলা ভবন,খিলক্ষেতের কনকর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও গাজীপুরের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি রয়েছে তাদের নামে।

বুধবার (১০ জুলাই) সরেজমিন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক হুজ্জত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বেতবাড়ি এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।তিনি মৃত মোহাম্মদ আলী ও হামিদা খাতুনের সন্তান।

তাদের পৈতৃক বাড়িতে আধাপাকা ও টিনশেডের দুটি ঘর রয়েছে।এর মধ্যে একটি রুমে হুজ্জত উল্লাহ ও অপরটিতে তার বড় ভাই হাবিবুল্লাহ বসবাস করেন।আরেকটি ঘরে তার বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাই স্কুলশিক্ষক শহিদুল্লাহ থাকেন।ঢাকায় সরকারি বড় অফিসে চাকরি করে কোটি টাকা কামিয়ে রাজধানীতে বাড়ি-ফ্ল্যাট করলেও তার মায়ের বসবাস গ্রামের জীর্ণ ঘরে।বয়সের ভারেও ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন এই নারী। দেখে মনেই হবে না বড় সরকারি কর্মকর্তার মা তিনি।তবে মামলার বিষয়টি এখনও বৃদ্ধা মায়ের কানে পৌঁছায়নি।কিন্তু দুদিন আগে হুজ্জত মাকে কল করে দোয়া চেয়েছেন।হুজ্জত উল্লাহর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।ছেলে তাসিন জাপান প্রবাসী।

এর আগে সোমবার (৮ জুলাই) দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুটি মামলা করেন।এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান,ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক হুজ্জত উল্লাহ ঈদ বা পারিবারিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে আসেন না। চাকরির সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস করছেন। বড় পদে চাকরি করলেও এলাকার কাউকে তেমন সহযোগিতা করেননি।তিনি নিজ নামে এলাকায় ৬-৭ বিঘা ফসলি জমি ক্রয় করেছেন।ঢাকায় যাওয়ার পর থেকেই জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত হন।এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার এক প্রতিবেশী ভাগিনা আবুল বাশার।এই সময়ে তিনি ঢাকার বনশ্রীতে দোতলা একটি ভবন,খিলক্ষেত এলাকায় কনকর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও গাজীপুরের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি কিনেছেন।

তার শ্বশুরবাড়ি একই জেলার ধনবাড়ী উপজেলার ভাইঘাটের পালপাড়ায়ও দৃশ্যমান কোনও সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার শ্যালক জাপান প্রবাসী হওয়ার সুবাদে তার ছেলে তাসিনকে জাপানে পাঠানো হয়েছে।হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ব্যালেন্স বা ঢাকায় গোপনে আরও সম্পদ গড়েছেন কিনা তা জানা নেই পরিবার ও স্থানীয়দের।হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রীর মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করায় স্থানীয়রাও হতবাক।উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়েও এলাকার লোকজনকে কোনও সহযোগিতা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।

বেতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন,আমার মামা হুজ্জত উল্লাহ চাকরির সুবাদে ঢাকায় জমি বেচাকেনার ব্যবসা করতেন।এ জন্য তিনি আমাকে ঢাকায় নিয়েছিলেন।তার ব্যবসায় সহযোগিতা করতাম।বর্তমানে মামা ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকার বনশ্রীতে দোতলা একটি ভবন,খিলক্ষেত এলাকায় কনকর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও গাজীপুরের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি রয়েছে।আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার জায়গার একপাশে ঘর তুলে ক্রোকারেজের ব্যবসা করছি।বাকি অংশে গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট একটি ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে।তিনি ঢাকায় জমি কেনাবেচায় জড়িত হয়ে অনেক টাকা ঋণী হয়েছেন।এর আগেও দুদকে একটি মামলা হয়েছিল।সেটি নিষ্পত্তি করতে তার ১২ শতাংশ জায়গা বিক্রি করতে হয়েছে।আবারও নতুন করে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।এসব মামলা কীভাবে হয় তা জানি না।’

হুজ্জত উল্লাহর ছোট ভাই রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল্লাহ বলেন,ঢাকায় তার কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বিষয়টি জানা নেই।এই বিষয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কখনও কথা হয়নি।প্রায় ২৪ বছর হলো ঢাকায় তার বাসায় যাওয়া হয় না।বাড়ি এলেও পারিবারিকভাবে তেমন একসঙ্গে বসা হয় না।ভাই ও ভাবির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় পারিবারিকভাবে সম্মানহানি হচ্ছে।’

হুজ্জতের বড় ভাই হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে সামান্য কিছু ফসলি জমি রয়েছে।এ ছাড়া ঢাকায় কোনও সম্পদ আছে কিনা জানি না।শুনেছি একটি বিল্ডিং রয়েছে।এই বিষয়ে কোনও কথা হয় না।মাঝে মধ্যে এলাকায় এলে একসঙ্গে খাওয়া হলেও সম্পত্তি অর্জন বা ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা হয় না। কী মামলা হয়েছে বা কেন মামলা হয়েছে এটা আমরা জানি না।তবে দুদিন আগে সে মাকে ফোন করেছিল। শুধু বলেছে একটা সমস্যায় আছি, দোয়া কইরো।’

উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন,মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। হুজ্জত উল্লাহকেও তেমনভাবে চিনি না।’

প্রসঙ্গত,ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হুজ্জত উল্লাহর সম্পদবিবরণী চেয়ে নোটিশ জারির পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি তা দাখিল করেন।এটি যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়,তিনি নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর খাতে মোট এক কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার ৭০৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।একই সঙ্গে এক কোটি ৯০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। হুজ্জত উল্লাহ বর্তমানে ডিপিডিসির এইচআর শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

অন্যদিকে,হুজ্জত উল্লাহর স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে করা এজাহারে বলা হয়,মাহমুদা খাতুনের সম্পদের হিসাব বিবরণী চাওয়ার পর তিনিও ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দুদকে তা দাখিল করেন।সেটি যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়,মাহমুদা খাতুনের স্বামী হুজ্জত উল্লাহর সহায়তায় নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর খাতে মোট এক কোটি ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।একই সঙ্গে ৮৯ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ টাকার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করা বিবরণীতে গোপন করেছেন।

আরও খবর

Sponsered content