জাতীয়

রংপুরে নৌকায় ভোট চাইলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ২ আগস্ট ২০২৩ , ৪:৪০:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সেবা করার সুযোগ দিতে রংপুরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো?”

এসময় সমস্বরে সবাই ‘হ্যাঁ’ বলে ওঠেন এবং হাত নেড়ে সম্মতি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি এটুকু বলতে পারি, বাবা, মা ভাই বোন সব হারিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের জনগণ এটাই তো আমার সংসার, এরাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে আমি খুঁজে পাই আমার বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ, বোনের স্নেহ।

“কাজেই আপনাদের জন্য যদি প্রয়োজন হয়,এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মত জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত,এই কথাটাও আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই। রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নেই।আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।”

সমাবেশের শুরুতেই রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।

এসব প্রকল্পকে রংপুরবাসীর জন্য উপহার হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যানে কাজ করে আর বাকি যারা ছিল,অনেকেই ক্ষমতায় ছিল এই রংপুরের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কেউ কাজ করে নাই। খালি নৌকা মার্কা আসলেই কাজ হয়,নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন,নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই বিদেশ থেকে আনা পুরাতন কাপড় পরতে হয় না। আপনাদের অর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে,যে এক বেলা ভাত পেত না,সেই মানুষের এখন দুই বেলা-তিন বেলা খাবার সুযোগ হয়ে গেছে;সেই ব্যবস্থাও আমরা করেছি।

“এ দেশের কৃষক, শ্রমিক প্রত্যাকের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।এর সুফল আপনারা পাচ্ছেন,দেশের মানুষ পাচ্ছে।আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে, আমি আপনাদের হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি।”

বর্তমান সরকারের আমলে গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে হবে উন্নত দেশ।একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়।নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই কৃষকে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়,নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এসেছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে।নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

“কাজেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন,এটাই আমি আপনাদের কাছে চাই।”

তিনি বলেন,যে বাংলাদেশকে একসময় মানুষ করুণা করত, এখন সেই বাংলাদেশকেই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চেনে।

এসময় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেন শেখ হাসিনা।

ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই পরিবহণ ব্যয় বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,খাদ্য সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে,তেল পাওয়া যায় না,ভোজ্যতেলের অভাব,সারের দাম বেড়েছে,গমের দাম বেড়ে গেছে।এ অবস্থায়ও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে বাংলাদেশ।

“রংপুরের জমি সোনার জমি।এখানে সব ধরনের ফসল ভালো হয়।এখানে এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে।যার যেটুক জমি আছে চাষ করেন। নিজের এলাকায়,বাড়িতে, অফিসে; প্রতিটি জায়গায় গাছ লাগাবেন।যার যেখানে যতটুকু জমি আছে আপনারা ফসল ফলাবেন। কোনো জমি যেন ফেলে রাখা না হয়।এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ।”

উৎপাদিত এসব ফসলের উদ্বৃত্ত যেন সংরক্ষণ করা যায় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রংপুরের মানুষের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন,আমি জানি রংপুর সুগার মিল অনেক দিন ধরে বন্ধ আছে,এই সুগার মিল যেন পুনরায় চালু হয়,বেসরকারি খাতকে আমরা দিয়ে দেব,যাতে এই সুগার মিল চালু করতে পারে।প্রত্যেক বিভাগে আমরা একটা করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দিয়েছি,যেহেতু রংপুর নতুন বিভাগ এখানেও আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবে।যে ফসল ফলাবেন,কাজে লাগার পর উদ্বৃত্ত অংশ যাতে সংরক্ষণ করা যায় আমরা সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি।এরই মধ্যে সান্তাহারে চিলিং সিস্টেমযুক্ত খাদ্য সংরক্ষণাগার করেছি।

“রংপুরের মত প্রত্যেক বিভাগে খাদ্য সংরক্ষণাগার করে দেবো।শুধু আলু না,আলু শাক সবজি তরকারি সবকিছু যেন রাখা যায় সেই ব্যবস্থা রেখে অত্যান্ত আধুনিক খাদ্য সংরক্ষনাগার করব।আমাদের দেশে যেন খাদ্যের কোনো অভাব না হয়।আমি চাই প্রতিটা অঞ্চল যেন সমান ভাবে উন্নত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।”

এসময় বিএনপির নানা সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন,এই রংপুরের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি অগ্নি সন্ত্রাস করে,রাস্তায় বাসে আগুন দিয়েছে,কত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে,এরা কি মানুষেরর জাত?এরা মানুষের জাত না। ক্ষমতায় থাকতে লুট করে খেয়েছে,আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

“রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে,পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে,নতুন বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে।

“জ্বালাও পোড়াও করে ধ্বংসই করতে পারে ঐ খালেদা জিয়া,তার পুত্র তারেক জিয়া আর তাদের দলের লোকেরা। দেশের লোকের কল্যাণ করতে জানে না।দেশের টাকা লুটপাট করে পাচার করে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে।

“কোথা থেকে আসে এত বিলাসিতা সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের টাকা লুট করে খেয়েছে,দেশের মানুষের টাকা লুট করে খেয়েছে,তারা দেশ ধ্বংস করে আর আমরা সৃষ্টি করি।”

এ সময় তার সরকারের করা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা,দেশের মানুষের জীবন মান উন্নত করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।স্বাক্ষরতার হার ৯৬ এ ক্ষমতায় এসে আমি ৪৫ ভাগ থেকে ৬৫ ভাগে উন্নত করেছিলাম।খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে কমিয়ে ফেলে।আর কমাবেই না কেন বলেন?খালেদা জিয়া মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল,অংকে আর উর্দুতে নাকি পাস করেছিল।

“তার ধারণা সে ফেল করেছে আর বাংলাদেশের কোনো মানুষই পাস করবে না,কেউ পড়বে না।ছয়বছর ক্ষমতায় ছিল,স্বাক্ষরতার হার কমাল।আমরা ক্ষমতায় এসে দেখি সেই ৬৫ ভাগ নেমে ৪৪ হয়েছে।”

ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের দুর্নীতির মামলার রায় প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তারা দেশ ধ্বংস করে আর আমরা সৃষ্টি করি।”

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক,সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এতে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন।

এর আগে সবশেষ ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা।একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই সফরে পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

প্রায় ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরকে কেন্দ্র করে জেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশস্থলের আশপাশে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য।

মহাসমাবেশ সফল করতে রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা ভোর থেকেই মিছিল নিয়ে নগরীতে প্রবেশ করতে থাকেন।সকাল ১০টা থেকে দলে দলে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।

জনসভায় যোগ দিতে হেলিকপ্টারে করে বুধবার দুপুর সোয়া ১টায় রংপুর সেনানিবাসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি যান সার্কিট হাউজে।সেখানে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মহাসমাবেশে যোগ দেন তিনি।

আরও খবর

Sponsered content