সম্পাদকীয়

যাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছিল-তবুও শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন

  প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২৫ , ৫:০২:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন কিছু নেতা আছেন,যাদের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসক,ঔপনিবেশিক শক্তি বা বিদেশি ক্ষমতাসমূহ মৃত্যুদণ্ডের রায় জারি করেছিল।

কিন্তু তাঁরা ভয় পাননি।সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।এবং শেষ পর্যন্ত নিজেদের জাতি ও রাষ্ট্রকে বিজয়ের পথে নিয়ে গেছেন।

নিচে এমন কয়েকজন ইতিহাস প্রসূত নেতার তালিকা দেয়া হলো—
১) মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক (তুরস্ক)
• ১৯২০ সালে অটোমান সামরিক আদালত তাঁকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।
• তিনি পিছিয়ে যাননি—তুর্কি স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
• শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।
• বিশ্ব ইতিহাসে ‘‘death sentence to nation-builder’’—এর অন্যতম বড় উদাহরণ।

২) হো চি মিন (ভিয়েতনাম)
• ফরাসি ঔপনিবেশিক সরকার তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে (অনুপস্থিতিতে)।
• তিনি দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যান।
• শেষ পর্যন্ত স্বাধীন ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠাতা নেতায় পরিণত হন।
• ‘‘Unkillable revolution’’–এর প্রতীক।

৩) ইমন দে ভ্যালেরা (আয়ারল্যান্ড)
• ১৯১৬ সালের ঐতিহাসিক Easter Rising–এ অংশ নেওয়ার কারণে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
• পরে দণ্ড কমানো হয়, কিন্তু তিনি সংগ্রাম থেকে সরে যাননি।
• তিনি পরবর্তীতে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হন।
• আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতার ইতিহাসে অন্যতম প্রধান স্থপতি।

৪) মেনাচেম বেগিন (ইসরাইল)
• ব্রিটিশরা তাঁকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
• বেগিন সংগ্রাম চালিয়ে যান—ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
• পরবর্তীতে তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হন
• এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

৫) নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু (ভারত)
• ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বহুবার কঠোর শাস্তি, গ্রেফতার এবং মৃত্যুদণ্ডের হুমকির মুখে ফেলে।
• তিনি পালিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA) গঠন করেন।
• তাঁর আন্দোলন ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টি করে এবং ভারতের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে।
• উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী “death sentence defier”।

৬) মাওলানা বাকের খান (ঢাকা, ১৮৫৭)
• ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ঢাকায় ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহ সংগঠিত করেন।
• তাঁকে গুলি বা ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
• যদিও তিনি শহীদ হন,তবুও তিনি ছিলেন বাংলায় সশস্ত্র প্রতিরোধের অগ্রদূত।
• তাঁর নেতৃত্ব ১৮৫৭–এর বিদ্রোহকে বাংলায় ছড়িয়ে দেয়।
(তাঁরা বিজয়ী হয়ে বাঁচেননি, কিন্তু সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হন।)

৭) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (বাংলাদেশ): মৃত্যুদণ্ডের মুখ থেকে ফিরে আসা সবচেয়ে ঐতিহাসিক উদাহরণ

১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” দায়ের করে—যার পরিণতি ছিল সরাসরি মৃত্যুদণ্ড।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু মাথা নত করেননি।আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ঘোষণা ছিল—“আমি আমার জাতির মানুষের অধিকার নিয়েই কথা বলেছি।”এরপর দেশের সাধারণ মানুষ বিস্ফোরিত হয় গণঅসন্তোষে—
• শ্রমিক
• ছাত্র
• কৃষক
• দিনমজুর
• লাখো সাধারণ মানুষ

রাজপথে নেমে এক স্লোগানে দেশ কাঁপিয়ে তোলে—“শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি চাই!

ফলাফল
• পাকিস্তান সরকারের রাজনৈতিক পর্দা ভেঙে পড়ে
• আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়
• বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়
• তিনি ফিরে আসেন জনসমুদ্রে

• ১৯৭০ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়।
১৯৭১ সালেও পাকিস্তানের খুনি ইয়াহিয়া খানের সাজানো আদালত বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন।
• এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭১–এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব
• জাতি তাঁকে ঘোষণা করে “জাতির পিতা”

৮) জননেত্রী শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ)
• ১৭ নভেম্বর ২০২৫-এ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ (ICT-1) তাঁকে অদ্যতন সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মোকাবেলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে

• ইতিহাসে এমন নেতারা আছেন যারা মৃত্যুদণ্ডের মুখে থেকেও পিছিয়ে যাননি — তাদের দীর্ঘ সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত তাদের দেশের জন্য নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে।

• শেখ হাসিনা-র ঘটনাও বর্তমান সময়ে এমনই এক নতুন অধ্যায়: একটি রায় তাঁকে মৃত্যু দণ্ড দিয়েছেন,কিন্তু অনেকেই বিশ্বাস করেন এটি তাঁর জন্য শেষ স্কোর নয়,বরং নতুন লড়াইয়ের শুরু।

• আপনার আমার ভরসা ও আশা হলো — ঐতিহাসিক নেতাদের মতো তিনি আবার ফিরে আসবেন,জনগণের জন্য লড়াই চালাবেন এবং দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন।

সারসংক্ষেপ
মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ইতিহাসে বহু নেতাকে থামাতে পারেনি।
বরং সেই রায়ই তাদেরকে আরও শক্তি দিয়েছে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার।

এই নেতারা প্রমাণ করেছেন—
একজন মানুষের মৃত্যু ভয় যদি জাতির অধিকার রক্ষার চেয়ে ছোট হয়ে যায়,তবে তাকে থামানোর ক্ষমতা কোনো আদালত,কোনো শাসক,কোনো রাষ্ট্রযন্ত্রের থাকে না।
জয়বাংলা-জয় হোক,মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির।জয় শেখ হাসিনা।জয় আপামর জনতার।

আরও খবর

Sponsered content