সারাদেশ

মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক পংকজ নাথের মহড়ায় যোগ দেন

  প্রতিনিধি ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩:১২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর আজ বুধবার নিজ সংসদীয় এলাকায় ফিরেছেন বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ। এ সময় দুই উপজেলায় বিশাল মহড়া করেছেন তিনি। উপজেলা দুটির প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক এ মহড়ায় যোগ দেন। তাঁর এলাকায় ফেরা নিয়ে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই চলছিল ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি।

পঙ্কজ নাথের অনুসারী নেতা-কর্মীদের একটি সূত্র জানায়, আজ বেলা একটার দিকে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ স্পিডবোটে বরিশাল থেকে মেহেন্দীগঞ্জে আসেন। এর আগে তিনি সকালে বিমানযোগে ঢাকা থেকে বরিশালে আসেন। তাঁর এলাকায় ফেরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মাঠে জড়ো হতে থাকেন। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের এসব মিছিলের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।

বেলা একটার দিকে পঙ্কজ নাথ মেহেন্দীগঞ্জে পৌঁছালে স্থানীয় স্টিমারঘাটে ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করেন অনুসারীরা। পরে মিছিলসহকারে তিনি উপজেলা পরিষদ মাঠে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটেন। পরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় যোগ দেন পঙ্কজ নাথ। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। এলাকার উন্নয়নকে আমি সবার আগে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সত্যের জয় হবেই।’

পঙ্কজ নাথ তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সাহস হারাবেন না। আমরা অন্যায় করিনি। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করব।’ কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যাঁরা ষড়যন্ত্র করেছেন এবং করছেন, জনগণ তাঁদের সব ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেবে।’ এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চান এবং বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্রের ফর্মুলা নিয়ে মাঠে নেমেছে। আমাদের সবাইকে এসবের ব্যাপারে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, সহসভাপতি সুভাষ চন্দ্র সরকার, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোমানা আক্তার, ১০টি ইউপির চেয়ারম্যানরাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা।

বিকেলে পঙ্কজ নাথ হিজলা উপজেলা পরিষদ মাঠে অনুরূপ কর্মসূচিতে যোগ দেন। কেক কেটে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন। পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় যোগ দেন।সেখানেও ব্যাপক মহড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় আগে থেকেই।

সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের এলাকায় ফেরা নিয়ে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই চলছিল ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি।
দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল। এই খবরে এলাকায় পঙ্কজ নাথের বিরোধী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ-উল্লাস করেন। এরপর আজকেই প্রথম পঙ্কজ নাথ এলাকায় এসেছেন।

অব্যাহতির চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যপদসহ অন্যান্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ। উপরিউক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

পঙ্কজ নাথের ঘনিষ্ঠ উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেওয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী জবাব জমা দিয়েছেন পঙ্কজ নাথ। নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি এই জবাব দেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে গত ইউপি নির্বাচনের সময় কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে। দুই পক্ষের এক পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল খান। এই পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট। অপর পক্ষে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২৮ আগস্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত নেতা-কর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়। আহত নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। অন্যদিকে হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের অনুসারী।

আরও খবর

Sponsered content