সারাদেশ

মেট্রো স্টেশনে দিক ভুল করলেই জরিমানা!

  প্রতিনিধি ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ৫:৫৫:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে রাজধানীবাসীর কাছে স্বস্তির বাহনের নাম এখন মেট্রোরেল।যাত্রীরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অতি দ্রুত চলে যেতে পারছেন। প্রতিদিনই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে সময় সাশ্রয়ী এই গণপরিবহনে। তবে যাত্রী বাড়ার সঙ্গে অনেকেই মেট্রোরেল ভ্রমণে অভ্যস্ত না থাকায় গুনছেন জরিমানা।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন ঘুরে দেখা যায়,অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে কোন দিক দিয়ে বের হবেন তা নিয়ে ধাঁধায় পড়ে যান।দিক ভুল করে অন্যদিকেও চলে যান।রাস্তার এ পারে নামবেন নাকি ওপারে নামবেন- তা ভাবতেও খেই হারিয়ে ফেলছেন অনেকে।কেউ কেউ আবার ভুল করে কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকে পড়েন স্টেশনে। এমনই একজনের দেখা পাওয়া যায় স্টেশনে।

বেসরকারি চাকরিজীবী শিখা আক্তার মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে কোন দিকে যাবেন তা বুঝতে না পেরে ফের তার এমআরটি পাস পাঞ্চ করে ঢুকে পড়েন স্টেশনে।তবে এমআরটি পাস সংগ্রহ করে রাখায় রক্ষা পান জরিমানার হাত থেকে।

এ বিষয়ে কথা হয় মেট্রোরেলের বিজয় সরণি স্টেশনের দায়িত্বে থাকা মুহসিন আলীর সঙ্গে।তিনি বলেন,ঢাকা মেট্রোরেলের জরিমানার নিয়ম অনুযায়ী,যদি কেউ একবারের জন্য এমআরটি পাস সংগ্রহ করে দিক ভুল করেন একই স্টেশনে আবার প্রবেশ করে তাহলে তাকে পুনরায় টিকিট কেটে বের হতে হবে।এতে তাকে সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ২০ টাকা হিসেবে জরিমানা গুনতে হবে।আর কেউ যদি এমআরটি পাস কেনার পর একই ভুল করেন তাহলে ৫ মিনিটের মধ্যে যদি তিনি দিক পরিবর্তন করে বের হয়ে যান তাহলে তাকে কোনো জরিমানা গুনতে হবে না।তবে ৫ মিনিট সময় অতিক্রম করলে তার কার্ড থেকে ভাড়ার দূরত্বের দ্বিগুণ টাকা জরিমানা করা হয়। যা কিনা তার কার্ডে জমা থাকা অর্থ থেকে কেটে নেয়া হয়।

এমন অনেকেই মেট্রোরেল ভ্রমণে অভ্যস্ত না থাকায় জরিমানার মুখোমুখি হচ্ছেন।তাদের জন্য মেট্রোরেল স্টেশনে দিক নির্দেশনা অনুসরণ করার তাগিদ দেন কর্তৃপক্ষ।ট্রেন থেকে নেমে সিঁড়ি বা এক্সসেলেটর দিয়ে নেমে আপনি যেদিকে নামতে চান তা দেখে বের হবেন।

মেট্রোরেলে আর যেসব কারণে জরিমানার বিধান রয়েছে:

১) এক ঘণ্টা ওভারটাইম ৬০ টাকা।অর্থাৎ আপনি টিকিট কেটে বা আপনার এমআরটি পাস বা র‌্যাপিড পাস দিয়ে এন্ট্রি গেইট থেকে ঢুকলেই টাইম কাউন্টিং শুরু হবে।এরপর ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিটসের বেশি সময় পেইড জোনে থাকলেই জরিমানা হবে। সুতরাং অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না।

২) সিঙ্গেল ভ্রমণ টিকিট কার্ড হারিয়ে ফেললে ১২০ টাকা। অর্থাৎ আপনি টিকিট কেটে ভিতরে যাওয়ার পর অসাবধানতায় কার্ডটি হারিয়ে ফেললে ১২০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

স্টেশনে টিকিটের জন্য ভিড় করছেন যাত্রীরা। ছবি: আবু সাঈদ নিশান

৩) এমআরটি পাস বা র‌্যাপিড পাস এন্ট্রি করে এক্সিট ঠিকভাবে না করে বের হয়ে গেলে যদি ওইদিনের মধ্যে ইএফও (এক্সেস ফেয়ার অফিস) থেকে ঠিক করিয়ে নেন তাহলে আপনার এন্ট্রি অবস্থান সময় অনুযায়ী ৭৮/৯৬ টাকা কাটবে।আর যদি পরদিন এক্সিট করেন তাহলে ১২০ টাকা কাটবে।

৪) এমআরটি পাস দিয়ে এন্ট্রি করে একই স্টেশনে ৫ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর এক্সিট করলে ৬০ টাকা কাটবে।যদি ট্রেন না পাওয়া যায় বা বিশেষ প্রয়োজনে আপনি ট্রাভেল না করে চলে আসেন তাহলে যথোপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে ইএফও (এক্সেস ফেয়ার অফিস) কাউন্টার ইনচার্জের কাছে যথোপযুক্ত কারণ বলবেন।উনি কার্ড আপডেট করে দেবেন এবং আপনি এক্সিট হবেন।তাহলে কোনো টাকা কাটবে না। কার্ড আপডেট না করে এক্সিট হলে আর টাকা কেটে নিলে এরপর তর্ক করে লাভ হবে না।সুতরাং আগেই কাউন্টারে জানান।

৫) অনেক সময় ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে তখন পিজি এক্সিট গেটে এক্সিট এক্সামশন মোড করা থাকে।তখন গেট দিয়ে পাঞ্চ করে বের হলে অতিরিক্ত টাকা কাটার কথা না।যদি টাকা কাটে তখন আপনি অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চাইতে পারবেন।সেক্ষেত্রে আপনাকে এক্সিট গেটের ডিসপ্লেতে খেয়াল করতে হবে,কত টাকা কেটেছে।

৬) সিঙ্গেল ভ্রমণ টিকিটের ক্ষেত্রে আগের মতোই ভাড়ার অতিরিক্ত ট্রাভেল করলে বাকি টাকা জরিমানা দিতে হবে।

৭) একটি এমআরটি পাস দিয়ে শুধু একজন যেতে পারবেন। এ ছাড়া অন্যদের টিকিট লাগবে।যদি কাউকে এক পাসের বিপরীতে একাধিক জনের এন্ট্রি পাওয়া যায় তাহলে কার্ডধারী ছাড়া বাকি সবার জন্য ১২০ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।

মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর।এর একদিন আগে ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। আর গত ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়।এরও একদিন আগে ৪ নভেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উত্তরা থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ উদ্বোধন করেন।প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ,প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।

মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে।জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর।মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।

আরও খবর

Sponsered content