অপরাধ-আইন-আদালত

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকেই একসঙ্গে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের

  প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২২ , ৩:৫৮:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।আদালত ফটকের সামনে থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকেই একসঙ্গে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের,ঘটনার পর থেকেই তদন্তে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এটি বলে আসছেন।

২০ নভেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ওই চারজনসহ মোট ১২ জঙ্গিকে সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকার আদালতে আনা হয়েছিল। হাজিরা দেওয়ার পর চার জঙ্গিকে আলাদা করে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।প্রশ্ন উঠেছে,ওই চার জঙ্গিকে পুলিশ আলাদা করে হাজতখানায় নেবে—এটা কি জানতেন বাইরে থাকা তাঁদের সহযোগীরা।

আদালতের আসামিদের হাজতখানায় নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা কোনো কিছু না ভেবেই ওই চার জঙ্গিকে আলাদা করেছিলেন,নাকি ঘটনাটি পরিকল্পিত—এই নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

হামলার পরিকল্পনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে মেহেদী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন রিমান্ডে।তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সেদিন হাজতখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।চার জঙ্গিকে আলাদা করে হাজতে নেওয়ার বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জসিম উদ্দীনের সঙ্গে গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেছে তিনি ফোন ধরেননি।পরে এ বিষয়ে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

অবশ্য ঘটনার পর হাজতখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশের পাঁচ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এরই মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সহযোগীরা পালিয়ে যাচ্ছেন বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের
পুলিশ সূত্র বলছে,ব্লগার,লেখক ও প্রকাশক হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও জঙ্গিদের কেউ কেউ কারাগারে মুঠোফোন ব্যবহার করতেন।ছিনিয়ে নেওয়ার পুরো পরিকল্পনা তাঁদের আগেই মুঠোফোনেই জানিয়ে দেন কারাগারের বাইরে থাকা জঙ্গিরা।সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী,আদালতের ফটকে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন তাঁরা।

কাশিমপুর কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার কিছু আগে কারাবন্দী তিন জঙ্গির কাছ থেকে তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করেন তাঁরা।তবে ওই মুঠোফোন কীভাবে কারাগারে ঢুকল,সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

কারাগারে কীভাবে জঙ্গিদের কাছে মুঠোফোন গেল,এ বিষয়ে কাশিমপুর কারাগার-২–এর জেলার মুহাম্মাদ এনায়েত উল্লাহর বলেন,এ সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে চান না।

২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে পুলিশকে মারধর ও চোখে পিপার স্প্রে করে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে যান জঙ্গিরা। তাঁরা হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।এ ছাড়া আরও কয়েকটি হত্যা মামলারও আসামি তাঁরা।

জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন,চারজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আরাফাত রহমান ও আবদুস সবুর ওরফে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজনকে নিতে পারেননি বাইরে থাকা জঙ্গিরা।

এ ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান নামের এক জঙ্গিকে গত বুধবার যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।তিনি জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় হামলাকারীদের দলে ছিলেন।

সিটিটিসির উপকমিশনার এস এম নাজমুল হক বলেন, হামলার পরিকল্পনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে মেহেদী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন রিমান্ডে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content