শিক্ষা

মাউশির ১১৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর

  প্রতিনিধি ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:৫৬:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রামের (সেসিপ) আওতায় ১১৮৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর।মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে দীর্ঘ ২০ বছর মাঠ পর্যায়ে কাজ করায় এই দক্ষ জনবল রাখতে চায় মাউশি।নিয়োগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্মতি জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।তবে চার কারণে অসম্মতি জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের চার কারণের মধ্যে আছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭ সালের প্রজ্ঞাপন, অর্থ বিভাগের ২০০১ সালের পরিপত্র, ক্যাবিনেট ডিভিশনের রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ এবং সিভিল রিভিউ পিটিশনের (১৮১/২০১৮) রায়।চার জায়গাতেই বলা হয়েছে,উন্নয়ন খাত থেকে জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

এসব কারণকে যৌক্তিক মানতে নারাজ সেসিপ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুল হাকিম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন,যে পিটিশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে প্রস্তাবিত ১১৮৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত জনবলের কেউ সম্পৃক্ত ছিলেন না।আবার রুলস অব বিজনেসের বিধি ১৩ দেখিয়ে নিয়োগের সুযোগ নেই বলে জানানো হয়।অথচ বিধি ৩৩-এ বলা আছে,আইনে সাংঘর্ষিক কিছু থাকলে বা প্রয়োজনে ধারা বা উপধারা সংযোজন বা বাতিল করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।এর ধারাবাহিকতায় এসব শর্ত শিথিল করে সবার আগে নিয়োগের নীতিগত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পরে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সেসিপে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত ১১৮৭টি পদসহ জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে ২০১৯ সালের ২৪ জুন নীতিগত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ৬ মে এক পরিপত্রে বিভিন্ন পদে এই জনবল নিয়োগের সম্মতি প্রকাশ করে। চলতি বছর ৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ বিভাগের এক পরিপত্রে ৮০১টি পদ সৃজনে সম্মতি জানায় অর্থ বিভাগ।মাউশির অর্গানোগ্রামে এই নিয়োগের শর্ত দেওয়া হয়।এখন পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়নি।প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১৮৭টি পদে নিয়োগ দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ২০ জুন আরেকটি পত্র দেওয়া হয়।পরে চার কারণে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে নিয়োগের সুযোগ নেই বলে জানায় অর্থ বিভাগ।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে।এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে আমাদের অনেক কর্মকর্তা আছেন।ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা চাকরি হারাবেন।এতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে। প্রতিবছর চুক্তি বাড়ালেও চাকরির নিশ্চয়তা না থাকায় হতাশার কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব হয় না।বহুবছর কাজ করায় আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে দক্ষতা অর্জন করেছেন তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে তাঁদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। ’
সেসিপের কার্যক্রম ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়।এর মূল লক্ষ্য ছিল মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা।প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নে সেসিপ এডিবি থেকে পুরস্কৃত হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নে এ কাজ অব্যাহত রাখতে প্রথমে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এবং পরে আরো পাঁচবার মেয়াদ বাড়ানো হয়, যা চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হতে যাচ্ছে।

মাউশির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন,‘মাধ্যমিক শিক্ষায় এ জনবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,যাঁদের ছাড়া মাঠ পর্যায়ের কাজ কোনোভাবেই চলবে না।এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করায় অনেক দক্ষতা অর্জন করেছেন। তাঁদের ছেড়ে দিলে নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়।আবার নতুনদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতেও অনেক সময়ের প্রয়োজন।২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।শিক্ষার জন্য আমাদের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই মুহূর্তে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।তাই পুরনো জনবল আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।

মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন,আমাদের মাঠ পর্যায়ের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনায় এসব পদ সংরক্ষণ করতে হবে।আবার দক্ষ জনবলও হাতছাড়া করা যাবে না।প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে বা রাজস্ব খাতে নিয়োগ দিয়ে হোক—তাঁদের দক্ষতা আমাদের কাজে লাগাতেই হবে। ’

আরও খবর

Sponsered content