অর্থনীতি

বেক্সিমকোর জমি এবং প্রধান কার্যালয় ‘বেল টাওয়ার’ নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে-সরকার

  প্রতিনিধি ২৫ নভেম্বর ২০২৫ , ৬:০২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের কারখানা,জমি এবং প্রধান কার্যালয় ‘বেল টাওয়ার’ নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।১ হাজার ৩২২ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে— এমন এক সময়ে যখন সরকার আন্তর্জাতিক লিজিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিপর্যস্ত এ শিল্প গ্রুপের টেক্সটাইল ইউনিটগুলো পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে জনতা ব্যাংক বেক্সিমকোর বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রির ঘোষণা দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সুদসহ বকেয়া ঋণ পরিশোধে এসব সম্পদ নিলামে তোলা হবে।আগ্রহী ক্রেতাদের ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দর প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে,ব্যাংকটি অ্যাসেস ফ্যাশনস লিমিটেডের সম্পদ নিলামে তোলার ঘোষণাও দিয়েছে।৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী,বেক্সিমকোর যে সম্পদগুলো নিলামে তোলা হচ্ছে,এর মধ্যে রয়েছে— গাজীপুরে ৩,৫২৭ ডেসিমেল জমি ও কারখানা,আশুলিয়ায় ১৪৬.৬৫ ডেসিমেল এবং নারায়ণগঞ্জে ৪৪০ ডেসিমেল জমি।এছাড়া কোম্পানির ধানমন্ডিস্থ ১৫ তলা করপোরেট অফিস বেল টাওয়ার–ও বিক্রির তালিকায় রাখা হয়েছে।

এর আগে ২১ নভেম্বর,বেক্সিমকো গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান— ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেডের ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ (মূল্যায়ন ১,৭৫৪.৭ কোটি টাকা), আরবান ফ্যাশনস (মূল্যায়ন ৭২৪.২৬ কোটি) এবং অ্যাপোলো অ্যাপারেলস (মূল্যায়ন ৮১৬.৪ কোটি)— এর সম্পদ নিলামে তোলার আরেকটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংকটি।

হঠাৎ নেওয়া এ নিলাম উদ্যোগ এসেছে এমন সময়ে, যখন দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান— জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগ ‘রিভাইভাল’ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সংগঠন ‘ইকোমিলি’— বেক্সিমকোর কারখানাগুলো পুনরায় চালু করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।

এই দুই সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,দীর্ঘমেয়াদি ঋণসংকটের কারণে বেক্সিমকোর কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়।তারা লিজ চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ছিল।

রিভাইভাল ও ইকোমিলি,বেঞ্চমার্ক পিআর-এর মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে,আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় জনতা ব্যাংকের হঠাৎ স্থাবর সম্পদ ও যন্ত্রপাতি বিক্রির সিদ্ধান্তে “স্তম্ভিত” হওয়ার কথা জানায়।

তারা জানায়,কারখানার টিকে থাকা ঘিরে স্থানীয় সম্প্রদায়, শ্রমিক পরিবার,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,বিদ্যালয় ও দোকানদার— যাদের জীবিকা বেক্সিমকো কারখানার সঙ্গে জড়িত— এদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সবাই দ্রুতই কারখানা পুনরায় চালু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।

সংস্থাগুলো বলে,জাতীয় শিল্পসম্পদ নিলামে তোলা একটি সংবেদনশীল বিষয়।এ সিদ্ধান্ত যথাযথ সতর্কতা,স্বচ্ছতা এবং বিশেষজ্ঞ,শ্রমিক ও শেয়ারহোল্ডারদের মতামত নিয়ে গ্রহণ করা উচিত।

তারা জনতা ব্যাংককে নিলাম প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলে,এ সিদ্ধান্ত দক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেতৃত্বে বহুল প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগকে ব্যাহত করতে পারে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতে যে নতুন করে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ বাড়ছে,তাও এ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করে।

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফোনকল ও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা— কোনোটিরই জবাব দেননি তিনি।বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরীও কোনো মন্তব্যের জন্য সাড়া দেননি।

আরও খবর

Sponsered content