আন্তর্জাতিক

বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদকারী দেশ ভেনিজুয়েলার

  প্রতিনিধি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৪:৩৫:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি -এর তথ্য অনুযায়ী,২০২৩ সালে ভেনিজুয়েলা মাত্র ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে।এই আয় অন্যান্য প্রধান রপ্তানিকারক দেশ যেমন সৌদি আরব (১৮১ বিলিয়ন ডলার),যুক্তরাষ্ট্র (১২৫ বিলিয়ন ডলার) এবং রাশিয়া (১২২ বিলিয়ন ডলার) থেকে অনেক কম।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভেনিজুয়েলার সম্পর্ক বেশ জটিল।তেল, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে দেশদুটির মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের।এই উত্তেজনার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ভেনিজুয়েলার তেল অর্থনীতি।দেশটির কাছে বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে।কিন্তু তেল রপ্তানি করে তারা এখন আগের তুলনায় খুব সামান্যই আয় করে।

ভেনিজুয়েলার তেলের পরিমাণ কত?

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী,ভেনিজুয়েলায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের মজুদ রয়েছে,যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব,যাদের মজুদের পরিমাণ ২৬৭.২ বিলিয়ন ব্যারেল।এরপর ইরানের ২০৮.৬ বিলিয়ন ব্যারেল এবং কানাডার ১৬৩.৬ বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ রয়েছে।এই চারটি দেশ মিলে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি তেলের মজুদের মালিক।

তুলনামূলকভাবে,যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রয়েছে,যা তাদের অবস্থানকে বিশ্বে নবম স্থানে রেখেছে। এর মানে হলো,ভেনিজুয়েলার তেলের মজুদ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রমাণিত তেলের মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ১.৭৩ ট্রিলিয়ন ব্যারেল।

ভেনিজুয়েলার তেলক্ষেত্রগুলো কোথায়?

ভেনিজুয়েলার তেলের মজুদ মূলত দেশটির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ওরিনোকো বেল্ট নামক একটি বিশাল এলাকায় কেন্দ্রীভূত। এই অঞ্চলটি প্রায় ৫৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। ওরিনোকো বেল্টে অত্যন্ত ভারী অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়।এই তেল খুব ঘন ও আঠালো,তাই এটি উত্তোলন করা সাধারণ তেলের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং ব্যয়বহুল।এই অঞ্চল থেকে তেল উৎপাদন করতে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়।

ভারী অপরিশোধিত তেল সাধারণত হালকা তেলের তুলনায় কম দামে বিক্রি হয়।দেশটির তেল উৎপাদন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন।এর মধ্যে রয়েছে পুরনো অবকাঠামো,অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ,অব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।এসব কারণে ভেনিজুয়েলা তার বিশাল তেলের মজুদ পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছে না।

ব্যাপক সরকারি ভর্তুকির কারণে ভেনিজুয়েলায় পেট্রোলের দাম বিশ্বের সবচেয়ে কম।সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত,সেখানে ৯৫ অকটেন পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ০.৮৪ ভেনিজুয়েলান বলিভার,যা প্রায় ০.০৪ ডলার।এটি লিবিয়া এবং ইরানের চেয়ে সামান্য বেশি, যেখানে পেট্রোলের দাম প্রায় ০.০৩ ডলার প্রতি লিটার। সারা বিশ্বে পেট্রোলের গড় দাম প্রতি লিটার ১.২৯ ডলার।

ভেনিজুয়েলা কতটা তেল রপ্তানি করে?

অবজারভেটরি অফ ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি -এর তথ্য অনুযায়ী,২০২৩ সালে ভেনিজুয়েলা মাত্র ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে।এই আয় অন্যান্য প্রধান রপ্তানিকারক দেশ যেমন সৌদি আরব (১৮১ বিলিয়ন ডলার),যুক্তরাষ্ট্র (১২৫ বিলিয়ন ডলার) এবং রাশিয়া (১২২ বিলিয়ন ডলার) থেকে অনেক কম।

সময়ের সাথে সাথে তেল রপ্তানি কমেছে কেন?

ভেনিজুয়েলা ওপেক (OPEC) এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এটি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি সংগঠন যা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্ববাজারে তেলের দামকে প্রভাবিত করার জন্য একযোগে কাজ করে।

একসময় ভেনিজুয়েলা একটি প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ ছিল।কিন্তু ১৯৯৮ সালে হুগো শ্যাভেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর রপ্তানি দ্রুত কমতে শুরু করে।তিনি দেশের তেল খাতের পুনর্গঠন করেন এবং পিডিভিএসএ-তে পরিবর্তন আনেন।রাজনৈতিক অস্থিরতা,অব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাবে উৎপাদনও কমে যায়।

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর অধীনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ভেনিজুয়েলার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ২০১৯ সালে তা আরও কঠোর করে।এই পদক্ষেপগুলোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে যায় এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে দেশটির প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়ে। এর ফলে দেশটির তেল রপ্তানি আরও কমে যায়।

এর ফলস্বরূপ,যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং ভেনিজুয়েলা তার তেল বাণিজ্যের একটি বড় অংশ চীনের দিকে সরিয়ে নেয়। চীন,ভারত ও কিউবার মতো দেশগুলো তাদের প্রধান ক্রেতা হয়ে ওঠে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

নভেম্বর ২০২২-এ,মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ শেভরনকে ভেনিজুয়েলা থেকে সীমিত পরিমাণে তেল উৎপাদন এবং রপ্তানি পুনরায় শুরু করার জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী লাইসেন্স দেয়।২০২৩ সালেও বাইডেন প্রশাসন শেভরনের লাইসেন্স নবায়ন করে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় ফিরে আসে।মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন এতে বলা হয়,যেসব দেশ ভেনিজুয়েলার তেল আমদানি করবে,যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।এই পদক্ষেপটি চীন,রাশিয়া এবং ভারতের মতো দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।এই শুল্কের ফলে ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ভেনিজুয়েলার তেল কেনা বন্ধ করে দেয়,কিন্তু চীন শুল্কের হুমকি সত্ত্বেও আমদানি অব্যাহত রাখে।

৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ নাগাদ,ভেনিজুয়েলার তেল রপ্তানি দৈনিক ৯০০,০০০ ব্যারেল ছাড়িয়ে যায়,যা গত নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।তবে,এই পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের স্তরের তুলনায় এখনও অনেক কম।

আরও খবর

Sponsered content