শিক্ষা

বিজ্ঞান ও সমাজ পড়ান কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারী

  প্রতিনিধি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫:৫৮:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

কালিগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি।।গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সব বিষয়ের জন্য ১৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে ১৪ জন শিক্ষক রয়েছেন।প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক বাদ দিয়ে রয়েছেন ১২ জন সহকারী শিক্ষক।এছাড়া ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের জন্য একটিমাত্র পদ শূন্য রয়েছে।স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির দুজন (কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারী) ও চতুর্থ শ্রেণির পাঁচজন কর্মচারী রয়েছেন।সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও এখানে প্রায়ই কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারীকে পাঠদান করানো হয়।দীর্ঘ দিন ধরে বিষয়টি চলতে থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমানের দৃষ্টিগোচর হয়।

চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দেবনাথ বলেছেন‘শিক্ষার্থী বেশি থাকায় ষষ্ঠ,সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে দুটি করে শাখা করা হয়েছে।কিন্তু শাখার অনুমোদন না থাকায় সরকারিভাবে আমরা শিক্ষক পাচ্ছি না।শিক্ষকের সংকট রয়েছে বিধায় মাঝেমধ্যে তাদের দিয়ে পাঠদান করানো হয়’

জানা গেছে,গত ২১ সেপ্টেম্বর ইউএনও অন্য একটি কাজে পরিদর্শনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান ইউএনও।বিষয়টি নিয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে অফিস কক্ষে যান। কিন্তু স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন।

পরে সহকারী প্রধান শিক্ষকের খোঁজ করলে তাকেও স্কুলে পাওয়া যায়নি।তখন ইউএনওর কাছে বিষয়টিতে অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে হলে স্কুলটির ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখার শ্রেণিকক্ষে যান তিনি।সেখানে গিয়ে দেখেন স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর রায়হান মিয়া বিজ্ঞানের পাঠদান করছেন। এসময় তার আচরণ ও ক্লাস নেওয়ার ধরন শিক্ষকসুলভ না হওয়ায় ইউএনও তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন।

পরে তিনি তার পরিচয় দেন এবং জানান এই বিষয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে আছেন,তাই তিনি পক্সি দিচ্ছেন।এ সময় ইউএনও ক্লাসের শিক্ষার্থীদের (ছাত্র ও ছাত্রী) সাথে কথা বলে জানতে পারেন এই স্যার (কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর) প্রায়ই তাদের ক্লাস নেন।ইউএনও ওই ক্লাস রুম থেকে পাশের ৬ষ্ঠ শ্রেণির খ শাখার ক্লাস রুমে যান।সেখানে গিয়ে দেখেন সামাজিক বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছেন মো. মনিরুজ্জামান নামে একজন।এখানে তার পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বলে জানান।তখন তিনিও বলেন এই বিষয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে তাই তিনি পক্সি দিচ্ছেন।

তবে এখানেও ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় এই স্যার (অফিস সহকারী) প্রায়ই ক্লাস করান। এরই মধ্যে ইউএনও আসার খবর শুনে স্কুলটির সহকারী প্রধান শিক্ষক নিখিল দেবনাথ উপস্থিত হন ও ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান স্কুলের একটি কাজে বাইরে গেছিলেন।পরে ইউএনও স্কুলের অফিস কক্ষে হাজিরা খাতা (উপস্থিতি নির্ণায়ক খাতা) দেখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।পরিদর্শন বইয়ে সই না করে সহকারী প্রধান শিক্ষককে বলে যান পরিদর্শন বই নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই সংবাদদাতার কথা হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব শিক্ষার্থী জানান,এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও এখানে কোনো নিয়ম-নীতি মান্য করা হয় না।যে কারণে এখানে প্রতি বছর ফলাফলও প্রত্যাশিত সাফল্যও আসে না।

চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৫৬৪ জন। শিক্ষার্থী বেশি থাকায় ষষ্ঠ,সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে দুটি করে শাখা করা হয়েছে।কিন্তু শাখার অনুমোদন না থাকায় সরকারিভাবে আমরা শিক্ষক পাচ্ছি না।শিক্ষকের সংকট রয়েছে বিধায় মাঝেমধ্যে তাদের দিয়ে পাঠদান করানো হয়। তবে তাদের মধ্যে একজন অনার্স ও অন্যজন বিএ পাশ করেছেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর-ই-জান্নাত বলেন,উপজেলার সব স্কুলেই দুই-একজন করে শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে।তবে যেহেতু এনটিআরসি এখন নিয়োগ দিচ্ছে, পর্যায়ক্রমে স্কুলগুলোর শূন্যপদ পূরণ হয়ে যাবে।তবে আমার জানা মতে চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষার একজন শিক্ষক ছাড়া আর কোন পদ শূন্য নেই।তবে তারা কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারী দিয়ে ক্লাস করিয়ে থাকলে বিষয়টি আমার জানা নেই।এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব রুটিনে করে থাকতে পারে।তবে আমার সব স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।’

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আসতে বলেছি।তারা এলে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও খবর

Sponsered content