জাতীয়

বিজয় আমরা এনেছি,এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত করেই চলতে হবে-প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ , ১:১৭:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বিজয় আমরা এনেছি,এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত করেই চলতে হবে।আবার যেন ওই খুনি, যুদ্ধাপরাধী,যাদের আমরা বিচার করেছি,তারা ক্ষমতায় এসে এই দেশকে ধ্বংস করতে না পারে।সে দিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে ও লক্ষ্য রাখতে হবে।’দেশকে ধ্বংস করতে খুনি ও যুদ্ধাপরাধীরা যেন আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।

সরকার প্রধান আরোও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই জনগণ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সরকার আসলে জনগণের সেবক এবং একটা সরকার ইচ্ছা করলেই যে জনগণের উন্নয়ন করতে পারে আওয়ামী লীগ সেটা প্রমাণ করেছে।

তিনি বলেন, নইলে বিএনপি বিজয়ের মাসে (১০ ডিসেম্বর) বিজয় উৎসব না করে যেদিন থেকে পাকিস্তানি বাহিনী দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে সেদিন ঘোষণা দেয় যে সরকার উৎখাত করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এতই সোজা (আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা), আওয়ামী লীগ পারে। আইয়ুব খানকে উৎখাত করেছি, ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি, জিয়া যেখানেই গেছে আন্দোলন তার বিরুদ্ধে হয়েছে, এরশাদকে উৎখাত করেছি,খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট চুরির পর তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল সেটাও বাতিল হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগ পারে। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা এত সোজা নয়।

তিনি আরও বলেন, তবে তারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে যেমন ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি তার ভোগান্তি এ দেশের মানুষের হয়েছে।

‘তাই মানুষকেও সজাগ থাকতে হবে। আবার তারা ভোগান্তিতে পড়বে, নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে এগিয়ে গিয়ে গড়ে তুলবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হবে, আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য আমাদের ই-গভর্নেন্স, ই-বিজনেস ই-জনগোষ্ঠী সবকিছু আমরা এভাবে করবো। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা সবকিছুকেই আমরা সেভাবে গড়ে তুলবো এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এর গতিকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের বিজয়ের মাসে বিজয়ের দিনে এটাই প্রতিজ্ঞা হবে যে বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো। উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি এখন উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।

অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বক্তৃতা করেন।

আরও বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ জননেতা আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও সিমিন হোসেন রিমি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন সভা সঞ্চালনা করেন।

দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ পঙ্গু করার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রই এদেশে ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে কিন্তু সেই ক্ষমতায় আসাটা অত্যন্ত দুরূহ ছিল।

তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের সমর্থন করে,ভোট আমাদের আছে কিন্তু নির্বাচনে কারচুপি করে হোক,ষড়যন্ত্র করে হোক, চক্রান্ত করে হোক বার বার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের শক্তিই সব থেকে বড় শক্তি আর একটা বিশ্বাস আর উপরে রাব্বুল আলামিন তো আছেনই কাজেই সেই মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এ দেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। তারপর আবার একটা চক্রান্ত হলো (২০০১ সালের নির্বাচনে) আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ফলে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। অগ্নি-সন্ত্রাস, নির্যাতন কিনা হয়েছে এদেশে। কিন্তু, প্রতিটি সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে থেকেছে। আর আমরা সরকারে যখন থেকেছি এই প্রত্যেকটা জিনিস আমরা মোকাবিলা করেছি।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামাতসহ আরও কিছু পার্টি মিলে দাঁড়ালো কিন্তু আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে কোথায় লেফটিস্ট আর কোথায় রাইটিস্ট। যারা লেফটিস্ট তারা মনে হলো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। অর্থাৎ সেই জামাত-বিএনপি তাদের সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম,স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম—সব যেন এক হয়ে এক প্লাটফর্মে।

‘সত্যি, সেলুকাস কী বিচিত্র এ দেশ। সেকথাই মনে হয়, কোথায় তাদের নীতি আর আদর্শ, কোথায় কী,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, কী কারণে যারা হত্যাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হত্যার বিচারের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, মানি লন্ডারিংয়ে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে যে দলের প্রধান সাজাপ্রাপ্ত আসামি—তাদের নেতৃত্বে এতো বড় বড় তাত্ত্বিক এতো বড় বড় কথা বলে, এতো কিছু করে তারা এক হয়ে যায় কীভাবে। কীভাবে এক হয়ে যায় সেটাই আমার প্রশ্ন।

আরও খবর

Sponsered content