প্রতিনিধি ৮ অক্টোবর ২০২৫ , ৬:১২:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।তারেক জিয়া যেভাবে দাবি করেছেন যে বিএনপি আমলে সাংবাদিকদের ওপর কোনো নির্যাতন হয়নি, তা পুরোপুরি মিথ্যা–!তারেক জিয়া একটা মিথ্যুক।এই মিথ্যুকের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ন্যূনতম ইচ্ছাও ছিল না।কিন্তু যখন সে নির্লজ্জভাবে বলে—২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে সাংবাদিকদের ওপর কোন নির্যাতন হয়নি—তখন চুপ থাকা মানে সত্যকে অপমান করা।বরং সেই সময়ের অব্যবহিত পরেই আওয়ামী লীগ সরকারই এসব সাংবাদিক হত্যার বিচার করে এবং সাংবাদিক নিরাপত্তার প্রশ্নে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনে।

বাস্তবতা হলো,ওই সময়টা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্য ছিল এক বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্ন।২০০২ সালের ৩ মার্চ খুলনায় দৈনিক পূর্বাঞ্চল-এর হারুনুর রশিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন; ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনায় বোমা হামলায় শহীদ হন BBC ও নিউ এজ-এর মানিক চন্দ্র সাহা; ২৭ জুন একইভাবে নিহত হন দৈনিক জনমভূমি-এর সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু; ২২ আগস্ট আজকের কাগজ-এর কামাল হোসেন অপহৃত হয়ে গলা কাটা অবস্থায় উদ্ধার হন; আর ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর ফরিদপুরে সমকাল-এর গৌতম দাস অফিসে শ্বাসরোধে খুন হন। একই সময় ২০০২ সালের নভেম্বরে সাংবাদিক সেলিম সামাদকে “বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সহযোগিতা”র অভিযোগে গ্রেপ্তার করে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়—যার নিন্দা করেছে Amnesty International,RSF ও CPJ। আবার ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর Weekly Blitz-এর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়, শুধু ইসরায়েলে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে চাওয়ার অপরাধে।
এই সময়ের প্রতিটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রিপোর্টে বাংলাদেশকে সাংবাদিকদের জন্য “বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি” বলা হয়েছে। IFJ ২০০৫ সালের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল—মাত্র এক বছরে ৪০০-এর বেশি সাংবাদিককে মৃত্যু-হুমকি দেওয়া হয়েছে, ৩২০ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন,এবং অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন।অথচ কোনও ঘটনারই বিচার বিএনপি সরকারের আমলে হয়নি—বরং হত্যাকারী ও হামলাকারীরা রাজনৈতিক সুরক্ষা পেয়েছিল।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত আমলে সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার কার্যত থেমে ছিল,কিন্তু পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এসব ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু ও সম্পন্ন করে।আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা হত্যায় ২০১৬ সালে ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, হুমায়ুন কবির বালু হত্যায় ২০১৪ সালে ৩ জনকে যাবজ্জীবন,এবং গৌতম দাস হত্যায় ২০১৩ সালে ৯ জন বিএনপি নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়—যা দীর্ঘদিন অবহেলিত ন্যায়বিচারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখা হয়। হারুনুর রশিদ ও কামাল হোসেন হত্যার মামলাগুলো পুনরায় তদন্তের আওতায় আনা হয়,যদিও এখনো বিচারাধীন।অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক সেলিম সামাদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে ফেরেন,এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী মুক্তি পান ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হন।
তারেক জিয়ার বক্তব্য তাই শুধু একটি মিথ্যা নয়,বরং সাংবাদিক সমাজের ত্যাগ ও রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নির্মিত এক কলঙ্কজনক মিথ্যার পাহাড়।

















