প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১:৫২:২১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক,বরিশাল।।বরিশালে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ছাত্র-জনতার একটি অংশের “বরিশালে হয় আওয়ামী লীগ থাকবে,নয়তো আমরা থাকবো”—এমন বক্তব্য এবং বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. মঞ্জুর মোর্শেদের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে গুরুতর আইনগত প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনার পটভূমি
সম্প্রতি বরিশালে এক সমাবেশে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্ব অস্বীকার করে হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দেয়।এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. মঞ্জুর মোর্শেদ সমর্থনসূচক বক্তব্য দিয়ে বলেন—আওয়ামী লীগকে যেখানেই পাওয়া যাবে,সেখানেই প্রতিহত করা হবে;যা করার করা হবে,এরপর পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হবে।
আইনগত বিশ্লেষণ
১. সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশ্ন
বাংলাদেশের সংবিধানের
অনুচ্ছেদ ৩৭ (সমাবেশের স্বাধীনতা)
অনুচ্ছেদ ৩৮ (সংগঠনের স্বাধীনতা)
অনুচ্ছেদ ৩৯ (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা)
অনুযায়ী,কোনো বৈধ রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার হুমকি বা বাধা দেওয়া সংবিধান পরিপন্থী।আইনজ্ঞদের মতে,কোনো সরকারি কর্মকর্তা এমন বক্তব্য দিলে তা রাষ্ট্রীয় নিরপেক্ষতার পরিপন্থী হতে পারে।
২. পুলিশ আইন ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
পুলিশ আইন,১৮৬১ এবং বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন (BPR) অনুযায়ী—
পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে না।
আইন নিজের হাতে নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া বা জনতাকে উসকানি দেওয়া পেশাগত অপরাধ।
ডিআইজির বক্তব্যে “প্রতিহত করা হবে” ও “যা করার করা হবে”—এই শব্দচয়ন আইন বহির্ভূত শক্তি প্রয়োগে উৎসাহ দেওয়ার শামিল হতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা।
৩. ফৌজদারি অপরাধে প্ররোচনার আশঙ্কা
দণ্ডবিধি,১৮৬০ অনুযায়ী—
ধারা ১০৭ (অপরাধে প্ররোচনা)
ধারা ৫০৫ (উস্কানিমূলক বক্তব্য)
এই ধারাগুলোর আলোকে,কোনো সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য যদি সহিংসতায় উৎসাহ দেয়,তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
৪. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড
বাংলাদেশ যেসব আন্তর্জাতিক চুক্তির স্বাক্ষরকারী,যেমন—
ICCPR (International Covenant on Civil and Political Rights)
এসব চুক্তি অনুযায়ী রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হয়।আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,পুলিশ কর্মকর্তার এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ আইন বিশেষজ্ঞ বলেন,
“কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা যদি রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য দেন বা জনগণকে প্রতিহত করতে উৎসাহ দেন, তাহলে তা আইনের শাসনকে দুর্বল করে এবং সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়।”
একজন সাবেক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন,“পুলিশের দায়িত্ব অপরাধ প্রতিরোধ ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা—রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া নয়।”
উপসংহার
বরিশালের সাম্প্রতিক ঘটনায় রাজনৈতিক বক্তব্য ও প্রশাসনের মন্তব্য মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।আইন ও সংবিধানের শাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বক্তব্যগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট অবস্থান জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

















