রাজনীতি

বরিশালে মেয়র সাদিক-আফজালুল বিতণ্ডা

  প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২২ , ৬:২৭:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:-আওয়ামী লীগের সভায় আফজালুল করিমকে উদ্দেশ করে মেয়র সাদিক বলেন, ‘আপনি কেন এক পক্ষে বলতেছেন? আপনি তাইলে ডিসি-ইউএনওর সঙ্গে যাইয়া পার্টি করেন, আমাদের সঙ্গে সংগঠন করার দরকার নাই আপনার।’

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভায় বাকবিতণ্ডা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিমের বাকবিতণ্ডা হয়।

এ বিতণ্ডার মূলে রয়েছে গত বছরের ১৮ আগস্ট ইউএনওর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা।

গত বছরের ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের দ্বন্দ্ব হয়।

পরে নিরাপত্তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহসহ প্রায় ৬০ নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে মেয়র সাদিকপন্থি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

এ ঘটনায় মেয়র সাদিকসহ ৬০০ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। পরের দিন মেয়র সাদিকের বাসভবনও ঘেরাও করেছিল পুলিশ। পাশাপাশি বরিশাল ও ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অনেকে।

শনিবার দুপুরে নগরীর কালীবাড়ি রোডে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ সভায় এক বছর আগের ওই ঘটনা নিয়েই বিতণ্ডায় জড়ান দুই নেতা। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ফেসবুক পেজ থেকে করা লাইভে বাকবিতণ্ডার বিষয়টি লক্ষ করা গেছে। একপর্যায়ে লাইভটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ওই সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না বলেন, ‘শোক দিবস উপলক্ষে এবার শোকের মাসব্যাপী প্রোগ্রাম করা হচ্ছে বরিশালে। ব্যতিক্রমধর্মী প্রোগ্রাম আমরা করছি আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে।

‘১৮ আগস্ট যে ঘটনা ঘটল বরিশালে, গ্রেপ্তার হলাম, জেল খাটলাম, কোর্টের বারান্দায় হাজিরা দিলাম মাসের পর মাস– তারপর যদি আমরা শুনি মহানগর বা জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এই বিষয়ে আলোচনা করতে বারণ করে, তখন কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। এরা আসলে কী চায়? কেন ১৫ আগস্টের প্রোগ্রামে ১৮ আগস্টের ঘটনা বলা যাবে না? কেন নিষেধ করা হচ্ছে? তাহলে কি যারা নিষেধ করছে কথা বলতে, তারা ১৮ আগস্টের ঘটনায় যে আমরা আহত হয়েছি, মার খেয়েছি তাতে আনন্দিত হয়েছিল? তারাও কি এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত? আমাদের নেতার ওপর গুলি চালানো হয়েছিলে ১৮ আগস্ট। আমরা সব প্রোগ্রামে এ বিষয়ে কথা বলব।’

মান্নার বক্তব্যের প্রসঙ্গে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেক দূর যেতে হবে, তাই কাউকে হৃদয়ে আঘাত দিয়ে কথা না বলাই ভালো। কারও মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি না থাকাই ভালো, আমিও পরিষ্কার করি। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে। এখন যদি আপনারা মনে করেন আমার পেছনে শওকত হোসেন হিরনের একটা তকমা আছে, এইটা আপনারা ভুইলা যান। আমার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে। আমার বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের শিষ্য ছিলেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর লগে রাজনীতি করেছেন। আমি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে রাজনীতি কইরা এখন মেয়রের সঙ্গে রাজনীতি করি।’

আফজালুল করিমের বক্তব্যের মাঝে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি স্যরি, আপনি মুরব্বি। শওকত হোসেন হিরনের তকমা না, শওকত হোসেন হিরন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিল, আপনি (আফজালুল) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাংগঠনিকভাবে তকমার কোনো বিষয় নাই এখানে।’

আফজালুল করিম এরপর বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। অনেক চড়াই-উতরাই গেছে, কিন্তু আমাকে টলাইতে পারে নাই। আওয়ামী লীগ পরিবারের বাইরে কোনো চিন্তা নাই। মান্না একটা কথা বলছে, একজনের সঙ্গে আমি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। ১৫ আগস্ট উপলক্ষে আমরা মাসব্যাপী যে প্রোগ্রাম করছি, সেটা কেন্দ্রীয়ভাবে যেমন প্রশংসিত, মাঠ পর্যায়েও প্রশংসিত। আমি একজনকে একটা কথা বলছিলাম, নামটা প্রকাশ করব না– সেটা হলো, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে প্রোগ্রামগুলোতে ১৮ আগস্টের ঘটনার বক্তব্য থাকবে। আমাদের নেতার গায়ে গুলি করা হইছে, ৪০ জন আহত হইছে, দুইজনের চোখ উৎপাটন করা হইছে। এই ঘটনা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। আমাদের মেয়র মহোদয়ের বিরুদ্ধে দুইটা মামলা করা হয়। পরের দিন সকাল ১০টায় ২০০-৩০০ পুলিশ যখন মেয়র মহোদয়কে গ্রেপ্তার করে রাখে, তখন সেখানে সর্বপ্রথম আসা ব্যক্তিটি আমি। বক্তব্য দিয়ে জাতির সামনে এই ঘটনা তুলে ধরা ব্যক্তিটি আমি।

‘একদিন একজনকে বলছি “ডিসি ও টিএনও” এই শব্দ দুইটি ব্যবহার করে বক্তব্য না দেওয়া ভালো, ১৮ তারিখের ঘটনা বলা ভালো। মেয়র মহোদয় কর্মীবান্ধব নেতা। তবে ওই দুইটি ওয়ার্ড আমাদের ইউজ না করাই ভালো। দলেও আমরা আছি, প্রশাসনেও আমরা। দল হিসেবে প্রশাসনকে তো আমাদেরই সুরক্ষা দিতে হবে। আগামীতে নির্বাচন আছে। একজন ডিসিকে যদি গালাগাল করা হয় বা কটাক্ষ করা হয়, তাহলে ৬৪ জন ডিসি হার্ট হয়ে যায়, আবার একজন টিএনও বা ওসিকে নিয়ে কটাক্ষ করলে সব টিএনও ও ওসি হার্ট হয়ে যায়। আমি বলছি, ওই দুইটা ওয়ার্ড না বলাই ভালো।’

এ সময় মেয়র সাদিক বলেন, ‘এখন যারা মাইর খাইছে, গুলি খাইছে, আমরা কি প্রতিবাদ করছি কখনও? যারা মাইর খাইছে, তারা বলতে পারবে না? আপনারা তো জিজ্ঞাস করলেন একজন মেয়রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে না জিজ্ঞাসা করে কীভাবে মামলা দেয়? আপনে এখন ডিসি-টিএনওর কথা বলতেছেন। এইটা তো কোনো কথা না।’

আফজালুল করিম তখন বলেন, ‘আমি তো জাতির স্বার্থে বলেছি এগুলো।’

সাদিক বলেন, ‘আপনি তো একতরফা এই কথাগুলো বললে হবে না। আপনি সহ-সভাপতি, আপনাকে সব জায়গায় সম্মান দেব, সব ঠিক আছে। আপনি তো বলতে পারেন না নেতাকর্মীরা ১৮ আগস্টের কথা বলতে পারবে না। আপনি সাফাই দিলে আমিও তো সাফাই দিতে পারি অনেক। আপনি ১ নম্বর সহ-সভাপতি হিসেবে আপনার আরও অনেক কিছু বলার ছিল। এখানে প্রশাসনের লোক আছে, বাইরের লোকও আছে। আপনি কেন একপক্ষে বলতেছেন? আপনি তাইলে ডিসি-ইউএনওর সঙ্গে যাইয়া পার্টি করেন, আমাদের সঙ্গে সংগঠন করার দরকার নেই আপনার।’

আফজালুল করিম বলেন, ‘আমার বিবেকে অপরাধী মনে হয়েছে, তাই বলেছি। হতে পারে আমার ভুল, তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি।’

তখন সাদিক দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘অনেক কথা তো আমারও বলার আছে। আপনি যে পাল্টা কাউন্টার দিলেন, তাতে তো আওয়ামী লীগের এই ফোরামে আসার আপনার দরকার নাই। আপনি ডিসি-এসপিদের অফিসে যান। আপনাদের এসব কথার কারণে তারা আমাদের দিকে আঙুল তোলার সাহস পায়।’

আফজালুল করিমের বক্তব্যের মাঝেই তার সঙ্গে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ একাধিকবার বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ফেসবুক লাইভ বন্ধ করে দেন মেয়র সাদিক।

সভায় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

Sponsered content