অপরাধ-আইন-আদালত

বরিশালে বিএনপি নেতার পরিবারসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুরে মালামাল লুট

  প্রতিনিধি ২২ মার্চ ২০২৫ , ৪:৩৯:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

বরিশাল ব্যুরো॥সাবেক বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গুড়িয়ে দিয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল মহানগর বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে।তিনি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের শ্বশুর।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সিটি করপোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের ধান গবেষণা সড়কের একতা লেনে এই ঘটনা ঘটে।এসময়ে প্রতিষ্ঠান মালিক ষাটোর্ধ্ব নারীকে মারধর করা হয়।তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন,সিটি করপোরেশন কয়েকদিন ধরেই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রেখেছে।সাধারণত রাতে সিটি করপোরেশন কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায় না।শুক্রবার ২৪ নং ওয়ার্ডে আমরা কোন উচ্ছেদ অভিযান চালাইনি যেখানে সেখানে কারো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না।

মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন ধান গবেষণা সড়কে জমি নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে একজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভাঙার খবর শুনেছি।তবে এখনো থানায় কোনো পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাইনি।অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,রাত সাড়ে ৮টার মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত এবং ২৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি এসে আক্কেল আলীর সম্পত্তিতে নির্মিত গুদাম ঘরের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভাঙতে শুরু করে।তারা দেয়ালের একাংশ ভেঙে গুদাম ঘরে ঢুকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যান।খবর পেয়ে আক্কেল আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগম বুলবুলি ঘটনাস্থলে আসলে সংঘবদ্ধ লোকজন তাকে মারধর করেন।

বুলবুলি বেগম বলেন,খবর পেয়ে আমি ধান গবেষণা সড়ক আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে আসি।এসে দেখি ফিরোজ কমিশনার দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের গুদাম ঘর ভাঙছে।গুদাম কেন ভাঙছে জানতে চাইলেই লোকজন লেলিয়ে দেন আমাকে মারধর করতে।তারা আমার বুকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়।ফিরোজ কমিশনার আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙেছে আবার আমাকেও মারধর করেছে।আমি দুইবার স্ট্রোক করা রোগী।ওদের মারধরে ভেবে ছিলাম ঘটনাস্থলেই মারা যাবো। পরে কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করে এবং পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আহতর ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক হিরণ বলেন,৫আগস্টের পরে ফিরোজ কমিশনার আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল।তিনি সরাসরি জানিয়েছেন,টাকা না দিলে আমাদের সবকিছু মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন।এমনকি আমার বাবার কবরস্থান ভেঙে ক্লাবঘর বানানোর হুমকি দেয়।তার কথায় রাজি না হওয়ায় গতকাল শুক্রবার রাতে লোকজন নিয়ে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভেঙে গুড়িয়ে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।

তিনি আরে বলেন,তারা আমার বৃদ্ধা মাকে মারধর করে আটকে রাখেন।পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেন।তাকে প্রথমে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।কিন্তু ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন।আমরা তাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।আহত মা কিছুটা সুস্থ হলে থানায় অভিযোগ দিবো।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন,মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রাইভিউল কবির স্বপন, তার ছেলে শাওন,নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিব,বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে ৫ আগস্টের পর এলাকায় বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি করে আসছে।তাদের কথা না শুনলে মারধরের পাশাপাশি মালামালের ক্ষতি করা হয়।নগরীর ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফিরোজ আহম্মেদ এর ফ্যামিলি দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দলের সাথে বিভক্ত।যে দলই ক্ষমতায় আসুক এলাকায় বিচার সালিশ সহ তাদের ইশারা ছাড়া কিছুই হয় না।আর এই আক্কেল আলী বরিশাল জাগুয়া ইউনিয়নে বিএনপি দলের আগমনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন।তখন নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ড ওই ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অভিযোগ অস্বীকার করে ফিরোজ আহমেদ বলেন,এলাকার মানুষের অনেক দিনের দাবি ছিল একতা লেনটি প্রশস্ত করার। কিন্তু আক্কেল আলীর গুদাম ঘরের জন্য সড়ক প্রশস্ত করা যাচ্ছিল না।সিটি করপোরেশন থেকে রাস্তার জমি দখল করে রাখা দোকানটি ভেঙে দেয়া হয়েছে।কাজের জন্য আমরা শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম।আক্কেল আলীর ছেলেরা এসে মারধর করে শ্রমিক ধরে নিয়ে গেছে।

ফিরোজ আহমেদের ভাই রাইভিউল কবির স্বপন বলেন,ধান গবেষণা সড়কের ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে তিন চার মাস আগে।আক্কেল আলীর ছেলেরা ড্রেনের কাজ করতেই দিচ্ছিল না।ঘটনার দিন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কাজ করতে গেলে তাদের মারধর করে।আমাদের দাবি হচ্ছে সড়ক প্রশস্ত করতে যারা বাধা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সেলিনা বেগম বলেন, আক্কেল আলীর পরিবার তাদের জমি ছাড়াও আরো বেশি জমি দখলে রেখেছিল।সেটা উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন অনেকবার নোটিশ দিয়েছে এবং টেন্ডার দিয়েছেন।সবশেষ শুক্রবার কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে আক্কেল আলীদের দোকানের দক্ষিণ দিকের দেয়ালটি ভেঙে দেয়।এসময়ে আক্কেল আলীর স্ত্রী এসে ফিরোজ কমিশনারকে থাপ্পড় মারেন।এতে জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠলে মারধরের হাত থেকে তাকে আমি রক্ষা করার সময় নিজেও আহত হয়েছি।

উল্লেখ্য,দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে ফিরোজ আহম্মেদ কে ২০২৩ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রেজভী স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে লিখিতভাবে ‘আজীবন বহিষ্কার’ করার ঘোষণা দিয়েছেন।তারপর থেকে আ.লীগের রাজনীতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠে ফিরোজ আহম্মেদ।আ.লীগের পক্ষ হয়ে বিএনপি বিরুদ্ধে সকল প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিল। ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে দেশের সব সিটি করপোরশন ও পৌরসভার নির্বাচিত মেয়রদের অপসারণ করা হলে বরিশাল নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল ফিরোজ আহম্মেদ পূর্বের মতইক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করছে।তার জামাই বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের ক্ষমতা বলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares