শিক্ষা

ববিতে সিফাত অনুসারীদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের রুম ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ!

  প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:০৫:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

রবিউল ইসলাম রবি (ববি) থেকে:-বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের ই বাংলা হলে শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের একাংশের স্বঘোষিত নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত আহত হওয়ার ঘটনার পর,এবার প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের নেতাদের অনুসারীদের রুম ভাংচুর ও রুমের মধ্যে থাকা জিনিসপত্র লুটের অভিযোগ উঠেছে।

হামলার ভয়ে ক্যাম্পাসে আসতে না পেরে এরইমধ্যে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মৌখিকভাবে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে,হল প্রশাসনকে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আর এতে তারা বাধাগ্রস্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করবে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানাগেছে,গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ভোরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা হলের ৪০১৮ নম্বর রুমে একদল যুবক গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাতের উপর হামলা করে।ওই ঘটনায় আহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের একাংশের স্ব-ঘোষিত নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত বরিশাল মেট্রোপলিটনের বন্দর থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন,মামলা‌টিতে ৭ জন নামধারীসহ আরও ৭-৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আর এরইমধ্যে ছাত্রলীগের অপর একটি অংশের নেতা আলীম সালেহী, রিয়াজ উদ্দিন মোল্লাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।

তবে ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে রিয়াজ উদ্দিন মোল্লার বন্ধু ও সহপাঠী আমিনুল ইসলাম তুহিনের কক্ষে ভাংচুর ও রুমে থাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট এবং পরেরদিন বুধবার দিবাগত রাতে আশরাফুল ইসলাম দিপ নামে অপর এক শিক্ষার্থীর রুম তছনছ করার অভিযোগ উঠেছে সিফাত অনুসারীদের বিরুদ্ধে। আর এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতে রাতের বেলা অনেকটাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শের-ই বাংলা হলের ৫০১০ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম তুহিন বলেন,সিফাতের ওপর হামলার ঘটনার পর রাতে আমার কক্ষে সিফাতের অনুসারীরা ভাংচুর চালায।এসময় তারা রুমে গিয়ে কম্পিউটার,দৈনন্দিন ব্যবহারের ইলেকট্রিক পণ্য,লাগেজ ভাংচুর করে এবং বইপত্র নিয়ে যায়।পরে ‍বুধবার আমার কক্ষে তাদের অনুসারী দুজন শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে দেয়া হয়।বিষয়টি আমি হলের প্রভোষ্ট স্যারকে জানিয়েছি,তারা পরের দিন সেখানে গেছেন এবং ওই ‍দুই ছাত্রকে কক্ষটি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছেন।তবে হামলার আতঙ্কে ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় কি হয়েছে বলতে পারছি না।

পরের রাতে আরও এক শিক্ষার্থীর কক্ষে হামলা চালানো হয়েছে,তবে সে ভয়ে কিছু বলতেই চাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন,রিয়াজ উদ্দিন বন্ধু হওয়ায় আমার ওপর এ হামলা, মাস তিনেক আগে রাজনীতি বাদ দিয়ে চাকুরির জন্য লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেছি। মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষে এখন ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি।সিফাতের ওপর হামলার ঘটনার সাথে আমি কোনভাবে জড়িত নই,তারপরও আমার কক্ষে হামলা চালানো হয়েছে।আমি ক্যাম্পাসে শান্তি চাই।

আরেক ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম দিপ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,হলের ৩০১২ নম্বর কক্ষে তিনি থাকেন।বুধবার দিবাগত রাতে ১০-১২ জন মিলে তার রুমে প্রবেশ করে তাকে না পেয়ে গালাগাল করে এবং জিনিসপত্র তছনছ করে। এখন সেই কক্ষে জুনিয়রদের ওঠানোর পায়তারা করছে সিফাতের অনুসারীরা।

এবিষয়ে প্রক্টর ও হলের প্রভোস্টকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভুক্তভোগী ২ শিক্ষার্থী জানায় তাহমিদ জাহান নাবিদ,শরিফুল ইসলাম নিলয় নেতৃত্বে খালিদ রুমি,নাওয়ার,তমালসহ হামলায় ১৫-২০ জন অংশ নেয়।

এদিকে এসব ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় যাদের নাম বলছে ভূক্তভোগীরা।তাদের নেতৃত্ব দেয়া তাহমিদ জামান নাভিদ ও শরিফুল ইসলাম নিলয় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আর শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া জানান,বিষয়টি ভূক্তভোগীরা জানানোর পর তিনি হলের রুমগুলো পরিদর্শন করবেন।সেইসাথে ঘটনার তদন্ত শেষে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম জানান,লিখিত নয়,ভূক্তভোগী এক শিক্ষার্থী ফোন করে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে।আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবসন্থা নেয়ার জন্য প্রভোষ্টসহ হল প্রশাসনকে বলেছি।এছাড়া তাদের হলে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।এতে তারা কোথাও তারা বাধাগ্রস্থ হলে তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।

উল্লেখ্য,ক্যাম্পাস সূত্রে জানাগেছে,আমিনুল ইসলাম তুহিন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন মোল্লা ও আশরাফুল ইসলাম দিপ হচ্ছেন জিসান আহমেদের অনুসারী।এদিকে সিফাতের দায়ের করা মামলার আসামি আলিম সালেহী একসময় সিফাতের সাথেই ছিলো,তবে আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।ক্যাম্পাসে একসময় ছাত্রলীগের পৃথক ৫ টি গ্রুপ থাকলেও বর্তমানে তিনটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content