জাতীয়

বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কয়লা ব্যবসায়ীরা!

  প্রতিনিধি ১৮ মে ২০২৩ , ৩:৫৮:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।দৃশ্যপট কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীর পাড়ে কয়লার মোকাম।মোকামের ৬০০ গজের মধ্যে সরকারের তিন মন্ত্রণালয়ের পৃথক চার ইজারাদারের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে টোল।এতে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে। তবে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কয়লা ব্যবসায়ীরা।

চলতি বছর বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ঘাট সম্প্রসারণ করে ইজারা মূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। প্রতিকার পেতে কয়লা ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামেন।

ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাট কয়লা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাজ্জাদ ইবনে সোলায়মান বলেন, ‘কয়লার ভৈরব মোকামের পরিচিতি এখন দেশজুড়ে।বছরে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এই মোকামে। অথচ ৬০০ গজের মধ্যে চারটি জায়গা ইজারা দিয়ে এক মুরগি চারবার জবাই করা হচ্ছে।চেয়েও এই ক্ষতির প্রতিকার পাচ্ছি না।বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভৈরব নদী বন্দর ও বাণিজ্য শহর। ব্রিটিশ আমল থেকে নদীপথকে কেন্দ্র করে ভৈরবে ব্যবসার প্রসার ঘটে। বর্তমানে নদীপথের গুরুত্ব কমে গেলেও শেষ হয়নি।ভৈরবে কয়লার মোকামের বিস্তৃতি নদীকে ঘিরেই।

■ চারটি ইজারাঘাট নিয়ন্ত্রণ করছেন কয়লা ব্যবসায়ীরা। ■ মোকামের নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং ব্যবসায়ীদের স্বল্প মাশুলে ঘাট ব্যবহারের সুযোগ দিতে সমিতির মাধ্যমে ইজারা নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সকালে মোকামে গিয়ে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের ইজারাস্থল জেটি এলাকায়। রেলপথ মন্ত্রণালয় ইজারা দিয়েছে মুড়িং ঘাট। এর মধ্যে দেড়গজ এলাকা নিয়ে পৃথক ইজারা দিয়েছেস্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন।চারটি ইজারাঘাট নিয়ন্ত্রণ করছেন কয়লা ব্যবসায়ীরা।মূলত মোকামের নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং ব্যবসায়ীদের স্বল্প মাশুলে ঘাট ব্যবহারের সুযোগ দিতে কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মাধ্যমে ইজারা নেওয়া হচ্ছে।

ভৈরব কয়লা ব্যবসা সমবায় সমিতির সহসভাপতি বাদল মিয়া বলেন,বছরে এক হাজার কোটি টাকার অধিক মূল্যের লেনদেন থেকে সরকার অনেক টাকা রাজস্ব পাচ্ছে।আবার চারটি ঘাট ব্যবহার করতে গিয়ে দিতে হচ্ছে রাজস্ব।আবার বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে।কেউ কেউ চাঁদা দাবি করে বসেন। এত চাহিদা পূরণ করে সঠিক ব্যবসা করা কঠিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের ইজারা এলাকা ৫০ গজ।কর্তৃপক্ষের অধীন একটি বড় জেটি রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে কর্তৃপক্ষ ইজারা এলাকা বাড়িয়ে ৫০০ গজে সম্প্রসারণ করে।এতে দুই লাখ টাকার ইজারা মূল্য ২০ লাখের ওপরে গিয়ে ঠেকে। ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যায়।এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দাবি,পুরো এলাকা একটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে যেন ইজারা দেওয়া হয় এবং ইজারামূল্য যেন সহনীয় মাত্রায় রাখা হয়।ইস্যুটি নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।কিন্তু সুফল আসছে না। এ অবস্থায় তাঁদের কাছ থেকে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা আসে।এরই মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নেতারা। গত মঙ্গলবার সকালে মোকাম এলাকায় দাবির পক্ষে মানববন্ধন করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।

সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন,কয়লা মোকামের সঙ্গে অসংখ্য মানুষের জীবিকা জড়িত। পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিকের ঘরে খাবার যায় এই মোকামের কল্যাণে। আশা করি,রাজস্ব বাড়ানোর কথা বলে সম্ভাবনাময় ব্যবসাটির গতি থামিয়ে দেওয়া হবে না।

অভিযোগ বিষয়ে কথা হয়,আশুগঞ্জ ও ভৈরব বাজার নদী বন্দরের উপপরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে।তিনি বলেন, সীমানা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ভৈরব এখন বন্দর। বন্দরের কারণে ব্যবসায়ীদের সুযোগসুবিধা বেড়েছে। আবার বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

চার বিভাগের ইজারা প্রসঙ্গটি নিয়ে তাঁর ভাষ্য, বিষয়টি বিব্রতকর। সমস্যা সমাধানে ইস্যুটি আন্তমন্ত্রণালয়ে আলোচনা হচ্ছে।কয়েক দিনের মধ্যে কেবিনেট মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হবে এবং কোনো একটি সমাধান বের হয়ে আসবে।

চাঁদাসহ অনৈতিক আর্থিক দাবির অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন তিনি।এ ব্যাপারে তাঁর ভাষ্য, নিয়ম হলো মালামাল ওঠানো ও নামানোর কাজে জেটি ব্যবহারের।কিন্তু ব্যবসায়ীরা জেটির মধ্যে কোনো কোনো সময় কয়লা মজুত করার চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে আমাদের বারণ থাকে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের ভুল–বোঝাবুঝি আছে।

আরও খবর

Sponsered content