প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৩:১৫:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর,পাকিস্তান বাংলাদেশকে বহু রকম আর্থিক দায় এবং সম্পদ মুছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।স্বাধীনতার পর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হতো—যা ছিল বৈদেশিক সম্পদ,ব্যাংক ব্যালান্স,ভ্রাম্যমান সম্পদ এবং অন্যান্য বৈদেশিক দেনার সমষ্টি।সেই সময়ের এই অর্থমূল্য আজকের মাপের হিসাবে প্রচণ্ড বড়,যা স্বাধীনতার প্রাকৃতিক ও মানবিক বিনিয়োগের সাথে তুলনীয়।

স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এই পাওনা আদায় করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থান,পারমাণবিক ও অর্থনৈতিক চাপ এবং ক্ষমতার অস্বচ্ছতা বাংলাদেশের পাওনা আদায়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।এ কারণে আজও এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর অর্থনৈতিক ও ন্যায়নৈতিক দাবি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে,বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক খাতে প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পাকিস্তানের কাছে এই পাওনা আদায় করা মানে শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয়, বরং জাতীয় মর্যাদা ও ইতিহাসের প্রতি ন্যায় প্রতিষ্ঠা।
এর জন্য কয়েকটি করণীয় নির্দেশ করা যেতে পারে:
১. ডিপ্লোম্যাটিক উদ্যোগ: পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে এই পাওনা আদায়ের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত বা ওআইসি,সংযুক্ত রাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার মাধ্যমে তোলা।
২. আইনগত প্রস্তুতি: ইতিহাসিক নথি,আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আইনি ভিত্তি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের পাওনার আইনি দাবিকে শক্তিশালী করা।
৩. অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও অর্থনৈতিক চাপে পাকিস্তানকে এই পাওনা পরিশোধের জন্য প্ররোচিত করা।
৪. সচেতনতা ও গণমাধ্যম: জনগণকে সচেতন করা এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা যাতে পাকিস্তানের ন্যায়পরায়ণ ভূমিকার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ তৈরি হয়।
এখন সময় এসেছে,ইতিহাসের ন্যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার।পাকিস্তানের কাছে পাওনা আদায় কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়,এটি আমাদের জাতীয় সম্মান ও মুক্তিযুদ্ধের আত্মার প্রতি সমর্পণ।মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপণ করা আমাদের পূর্বপুরুষরা যে ত্যাগ করেছেন,তার পূর্ণ সম্মান জানাতে হলে এই দাবি বাস্তবায়িত করা অতি জরুরি।
স্বাধীনতার চেতনা এবং জাতির ঐক্যের সঙ্গে একজোট হয়ে এই ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে—কারণ ইতিহাস কখনও ভুলে যায় না,এবং মানবিক ন্যায়ও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে পারে না।

















