জাতীয়

নেটিজেনদের মুখে মুখে ছিল ‘ডিবি হারুনের ভাতের হোটেল’

  প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:৫১:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।পুরাতন বছর বিদায় নেওয়ার সঙ্গে নতুন বছরের শুর।২০২৩ সাল ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল।চলতি বছরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়।দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাত খাইয়ে টাইমলাইনে এসেছে ডিবি কার্যালয় ও ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।নেটিজেনদের মুখে মুখে ছিল ‘ডিবি হারুনের ভাতের হোটেল’।তবে নেটিজেনদের এসব মন্তব্য ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমে বলেন ‘ডিবি হারুনের ভাতের হোটেল’ কথাটি মানুষ রসবোধ থেকে বলছে।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। হাসিমুখে ডিবিপ্রধানের সঙ্গে তার খাবার খাওয়ার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।এতে দেখা যায়,হারুন অর রশীদ নিজে গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন।জানা যায়,ওইদিন খাবারের মেন্যুতে ছিল খাসির মাংস,মুরগির মাংস,একাধিক মাছের তরকারি,রোস্ট ও সবজি।এছাড়া আম,মালটা, আঙুর ও ড্রাগন ফলও ছিল খাবারের টেবিলে।মধ্যাহ্নভোজ শেষে ডিবির একটি সাদা গাড়িতে করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে তার বাসায় পৌঁছে দেন ডিবি সদস্যরা।

তবে এ ঘটনায় ভাত খাইয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াকে ন্যক্কারজনক বলেন গয়েশ্বর।তিনি বলেন, আপ্যায়ন করে সেটার ছবিসহ ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড।যারা কাজটি করেছে- এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচায়ক,এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক।এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে আমরা হাভাতে?ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোটা দেওয়া’।

নিতাই রায় চৌধুরীকেও মধ্যাহ্নভোজ করান ডিবিপ্রধান:-

২৯ আগস্ট ব্যক্তিগত কাজে ডিবি কার্যালয়ে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। এসময় তাকেও দুপুরের খাবার খাওয়ান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ নিপুণ রায়ের বাবা নিতাই রায় চৌধুরী।নিতাই রায়ের খাবার মেন্যুতে ফলের পাশাপাশি মাছ,মাংস ও ভাতের ব্যবস্থা ছিল। ওইদিনও ডিবিপ্রধান নিজ হাতে খাবার তুলে দিয়ে বিএনপি নেতাকে আপ্যায়ন করেন।

হত্যার হুমকির অভিযোগ নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলম। ওইদিন দুই সহযোগীসহ ডিবি কার্যালয়ে দুপুরের খাবার খান তিনি।তবে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে পুলিশ কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও খাবার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হিরো আলম।আমাদের আলুভর্তা আর ডাল দেওয়া হয়েছে।এটা ঠিক না।দুরকম খাবার দিচ্ছেন, ঠিক নাকি?অপু বিশ্বাস এলে অনেক খাবার দিছেন,নেতা এলেও অনেক কিছু খেতে দিছেন।আর আমারে খালি আলুভর্তা,ডাল,ভাজি দিছেন।এ সময় হিরো আলম বলেন,‘আমাদের আলুভর্তা আর ডাল দেওয়া হয়েছে।এটা ঠিক না।দুরকম খাবার দিচ্ছেন,ঠিক নাকি? অপু (অপু বিশ্বাস) এলে অনেক খাবার দিছেন,নেতা আসলেও অনেক কিছু খেতে দিছেন।আর আমারে খালি আলুভর্তা,ডাল,ভাজি দিছেন।’

ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও গানবাংলা (জিবি) টিভির প্রধান নির্বাহী (সিইও) কৌশিক হোসেন তাপস গত ১৯ ডিসেম্বর ডিবি কার্যালয়ে দুপুরের খাবার খান। কিছু বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল।ডিবি কার্যালয়ে সেসব বিষয় সমঝোতার পর সেখানে দুপুরের খাবার খান তারা।তাদের খাবারের মেন্যুতে ছিল ভাত,মাংস,মাছ, ডাল,লাল শাক,সবজি ও ভর্তা।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ২৯ নভেম্বর দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজন করেন।ওইদিন ডিবি কার্যালয় থেকে বের হলে সাংবাদিকরা তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান।তখন শামীম ওসমান বলেন,হারুন ভাইয়ের নয়,উনার স্ত্রী আমার বোন তার হোটেলে খেয়েছি।

শামীম ওসমান আরও বলেন,হারুন ভাই আমার অনেক আগের পরিচিত।একসঙ্গে রাজনীতি করেছি।সে কারণেই দেখা করতে আসা।পাশাপাশি নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে নিয়ে অনেকেই ষড়যন্ত্র করছে।এসব তথ্য তাকে দিয়েছি।সাধারণ মানুষ হিসেবে তথ্যগুলো দিয়ে গেলাম।হারুন ভাই ক্যাপাবল অফিসার,তিনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

ভাত খেয়েছেন শাহজাহান ওমর:-

গত ৬ ডিসেম্বর দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে ভাত খান বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। খাবারের মেন্যুতে ছিল ভাত,মাংস,মাছ,ডাল,সবজি ও ভর্তা। খাবার শেষে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে আলাপে নিজের অভিযোগের কথা জানান শাহজাহান ওমর।সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের শাহজাহান ওমর বলেন,আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি।আমার ছেলে-মেয়ে,স্ত্রী এমনকি আমার জুনিয়র আইনজীবীর মোবাইল ফোনে কল করে নানান কথা বলা হচ্ছে।ওই বিষয়টিই হারুন সাহেবকে জানাতে এসেছিলাম।

সরকারের সঙ্গে আপস করে জামিন পেয়েছেন কি না,এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাশিমপুরে আপস করে কেমন করে? ২৯ নভেম্বর নরমাল প্রসেসে আমার জামিন হয়েছে। ৩০ নভেম্বর (আওয়ামী লীগে) জয়েন করেছি।’

এছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে অনেক তারকা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের মধ্যাহ্নভোজ করিয়েছিলেন ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে যা বলছেন ডিবি প্রধান:-
‘ডিবি হারুনের ভাতের হোটেল’ নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন,এটা রসবোধের প্রশ্ন।বাঙালি রসবোধ সম্পন্ন জাতি।বাংলা সাহিত্যে রসবোধ প্রয়োগ আমাদের মানসিক খোরাক জোগায়।আমি মনে করি রসবোধপ্রবণ একটি বিষয় হলো ভাত খাওয়ানো।আমরা আসলে কাউকে ডেকে এনে ভাত খাওয়াই না।কেউ যদি কাজের জন্য আমাদের কাছে আসেন, তার কাজটা করে দেওয়ার চেষ্টা করি।পাশাপাশি লাঞ্চ টাইম হলে লাঞ্চের অফার করি। তিনি যদি অফার গ্রহণ করেন তাহলে খেয়ে যান।

হারুন অর রশীদ বলেন,বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মানুষ আমাদের কাছে আসে।একটা সময় থানায় যেতে মানুষ ভয় পেতো।যেখানেই অপরাধ ঘটুক,আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করি।এখন আমি একজন ডিআইজি,আমার কাছে শত শত লোক কোনো না কোনো কাজ আসেন।আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ,আমরা যদি কাউকে আপ্যায়ন করি এটাতো খারাপ কিছু নয়।আর যারা রসবোধ থেকে ভাতের হোটেল বলেন,তারাও ভালো অর্থে বলেন,খারাপ অর্থে বলেন না। এতে আমরা উৎসাহিত হই।এতে আমরা ডিমরালাইজড বা হতাশ নই।এটা পুলিশের মানবিক দিক।

আরও খবর

Sponsered content