প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৩:০০:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
**তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের মামলা, খালাস ও নির্বাচনযোগ্যতা

আইনের ধারা কী বলছে? আইনজীবীরা কী বলছেন?**
মাজহারুল ইসলাম।।আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও নির্বাচনযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।বিশেষ করে কয়েকটি মামলায় খালাসের পর তাকে ‘সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনযোগ্য’ হিসেবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা আইনগতভাবে কতটা সঠিক—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংবিধান ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা।
তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের মামলা: সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন
আদালত ও দুদক সূত্র অনুযায়ী—
মামলার সংখ্যা ও ধরন
মোট মামলা: প্রায় ৩৬টি
ধরন:
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে মামলা
মানি লন্ডারিং
অবৈধ সম্পদ অর্জন
ক্ষমতার অপব্যবহার
গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর অবস্থা (সংক্ষেপে)
মামলা নিম্ন আদালতের রায় আপিল/পরবর্তী অবস্থা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা ২০১৮ সালে দণ্ড পরবর্তীতে আপিল/পুনর্বিবেচনায় খালাস বা দণ্ড স্থগিত (বিভিন্ন ধাপে)
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দণ্ডাদেশ আপিলাধীন/পরবর্তীতে রায় পরিবর্তন
মানি লন্ডারিং মামলা সাজাপ্রাপ্ত আইনি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন
👉 গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
সব মামলায় একই দিনে খালাস হয়নি এবং সব মামলায় রাজনৈতিক অধিকার পুনর্বহালের স্পষ্ট আদেশ নেই—এটাই আইনি বিতর্কের মূল কেন্দ্র।
আইনের ধারা কী বলছে? (নির্বাচনযোগ্যতা)
প্রযোজ্য আইন
1. Representation of the People Order (RPO), 1972
2. বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ
3. দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪
4. ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC)
RPO, 1972 – ধারা ১২(১)(গ) অনুযায়ী:
কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিত হন,
তবে দণ্ড ভোগ শেষ হওয়ার ৫ বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত
তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ:
আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আইন দ্বারা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।
খালাস মানেই কি সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনযোগ্যতা?
আইনজীবীদের মতে—না,বিষয়টি এত সরল নয়।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া ইসলাম বলেন:
> “খালাস দুই ধরনের—একটি হলো দণ্ড বাতিল,অন্যটি হলো রাজনৈতিক অধিকার পুনর্বহাল।
আদালত যদি স্পষ্টভাবে অধিকার পুনর্বহালের আদেশ না দেন,তাহলে RPO অনুযায়ী ৫ বছরের বাধা কার্যকর থাকে।”
সুপ্রিম কোর্টের একজন আপিল আইনজীবীর বক্তব্য:
> “অনেক মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন—এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন হলো,খালাসের তারিখ থেকে ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে কি না—এই হিসাব ছাড়া নির্বাচন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”
খালাসের তারিখ ও আইনি জটিলতা
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে—
কিছু মামলায় খালাস/দণ্ড স্থগিত হয়েছে ২০২২–২০২৩,২০২৪,২০২৫ সালের দিকে
সব মামলার ক্ষেত্রে ৫ বছর পূর্ণ হয়নি
নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রতিটি মামলার আলাদা আলাদা খালাসের তারিখ যাচাই বাধ্যতামূলক
👉 ফলে “সব মামলা শেষ = নির্বাচনযোগ্য”—এই দাবি আইনসম্মত নয়।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী?
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়—
মনোনয়ন যাচাইয়ের সময় আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় কপি প্রয়োজন
কেবল রাজনৈতিক ঘোষণা বা মিডিয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায় না
কোনো ভুল সিদ্ধান্ত হলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জযোগ্য
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও মিডিয়ার ভূমিকা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন—
নির্বাচনের আগে তারেক রহমানকে ‘আইনগতভাবে ক্লিন’ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে
কিছু সংবাদমাধ্যম আইনি জটিলতা এড়িয়ে রাজনৈতিক বয়ানকে প্রাধান্য দিচ্ছে
এটি শুধু মিডিয়ার নিরপেক্ষতা নয়—নির্বাচনী আইনের শাসনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
উপসংহার: আইন বনাম রাজনৈতিক প্রচারণা
আইনজীবীদের অভিমত স্পষ্ট—
খালাস মানেই তাৎক্ষণিক নির্বাচনযোগ্যতা নয়
RPO ও সংবিধানের বিধান উপেক্ষা করে কোনো প্রার্থী বৈধ হতে পারেন না
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে আদালত ও নির্বাচন কমিশন—সংবাদমাধ্যম নয়
গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রয়োজন—
আইনভিত্তিক আলোচনা
মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা
রাজনৈতিক প্রচারণা নয়,আইনের শাসন














