সারাদেশ

ধলেশ্বরী শাখা নদীর সেতুর নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়েও শেষ হচ্ছে না!

  প্রতিনিধি ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ , ১:৪০:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি।।ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকায় ধলেশ্বরী শাখা নদীর সেতুর নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়েও শেষ হচ্ছে না।নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শেষ করছে না।অথচ এই সেতুর কাজ শেষ হলে মুন্সিগঞ্জের মানুষ মাত্র ২০ মিনিটে ঢাকা আসতে পারবেন।এখন তাঁদের ঢাকা আসতে দুই ঘণ্টা লাগছে। এ ছাড়া সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় নদীর দুই পারের কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সেতুর নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেয়া পারাপারের বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ।নদীর দুই পারের মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিত্যদিন খেয়ানৌকা পারাপারের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হচ্ছে।এতে একদিকে অর্থ অন্যদিকে সময়ের অপচয় হচ্ছে।

এলজিইডির কেরানীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান,টঙ্গীবাড়ি,লৌহজং এলাকার মানুষ যাতে খুব অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন, সে জন্য দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকায় ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।ওই উদ্যোগের অংশ হিসাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর ২০১৮ সালের ১০ জুন সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২৫২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।এর নাম মোল্লারহাট সেতু।

এলজিইডির কেরানীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে,সেতুটির নির্মাণকাজ ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু ধলেশ্বরী শাখা নদীর দুই পারে কিছু ইটভাটা স্থানান্তর ও অন্যান্য জটিলতার কারণ দেখিয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার সময় দুই বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়।সেতুর নির্মাণ কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।কিন্তু আজও তাঁরা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়,মোল্লাবাজার এলাকায় ধলেশ্বরী শাখা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজে কেরানীগঞ্জের মোল্লাবাজার এলাকায় স্থাপিত দুটি পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বছরখানেক আগে।তার পাশে স্প্যান বসানোর জন্যে রডের গাঁথুনি দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে সেতুর অপর প্রান্তে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় সেতুর দুইটি পিলারের ওপর স্প্যান বসানো হয়েছে।মোল্লাবাজার এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে কর্মরত রড মিস্ত্রী জানান,মাঝেমধ্যে এখানে সেতুর কাজ চলে।আবারও বন্ধ হয়েও যায়।শুধু পিলার ও স্প্যান নির্মাণের কাজ চললেও অন্য কাজের গতি নেই।ঠিকাদার কোম্পানির লোকজন মাঝেমধ্যে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে। কিন্তু পুরোদমে কাজ হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান,এ পর্যন্ত চার–পাঁচবার সেতুর নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে।সেতুর দুই পারের জমি অধিগ্রহণ নিয়েও জটিলতা দেখা দেওয়ায় নির্মাণকাজ বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে। জমির সমস্যাটি সমাধান হওয়ায় মাসখানেক পরে আবার কাজ শুরু হয়েছে।তবে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে না।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান সদর এলাকার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম জানান,নির্মাণাধীন সেতুর সঙ্গে ধলেশ্বরী শাখা নদী দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ খেয়া পারাপার হচ্ছে।এতে জনপ্রতি ৫ টাকা,মোটরসাইকেল ২০–৩০ টাকা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা পারাপারে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।সেতু নির্মাণ হলে মানুষের এসব দুর্ভোগ কমে যেতো। জনগণের স্বার্থে সেতুটি অতি দ্রুত নির্মাণ করা দরকার।

মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল গফুর মিয়া বলেন,টঙ্গীবাড়ি বেতকা চৌরাস্তা থেকে সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর চৌরাস্তা দিয়ে মোল্লারহাট সেতুর গোড়ার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার।সেখান থেকে ঢাকার পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত সড়কপথে দূরত্ব ছয় কিলোমিটার।এটি অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট।অথচ সিরাজদিখান হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকার দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার।আর সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা।মুন্সিগঞ্জ থেকে তিন ঘণ্টার আগে ঢাকা যাওয়ার কথা চিন্তাই করা যায় না।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন,‘কিছুদিন আগে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন।তিনি শুনেছেন সেতু নির্মাণে নানা সমস্যার কারণে কাজটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।সেতুর কাজটি অতিসত্বর শেষ করার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content