প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৮:৫৯:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।দীপু চন্দ্র দাসের জীবন ছিল খুবই সাধারণ।ছোট একটি পরিবার—স্ত্রী আর একমাত্র ছোট সন্তান। জীবিকা বলতে গার্মেন্টসে একটি সামান্য চাকরি।পকেটে থাকত একটি পুরনো বাটন ফোন।সেই ফোনেই দিনের শেষে কথা হতো স্ত্রীর সঙ্গে,বাবা-মায়ের সঙ্গে।সংসারের টানাপোড়েন, বাজারের হিসাব,সন্তানের অসুখ—এই ছিল তার দুনিয়া।

দীপু কখনো রাজনীতি করতে চায়নি।নেতা হওয়ার স্বপ্ন তো দূরের কথা,সে শুধু চেয়েছিল একজন ভালো বাবা ও দায়িত্বশীল স্বামী হতে।নিজের শ্রমের টাকায় পরিবারকে একটু ভালো রাখবে—এই ছিল তার সমস্ত চাওয়া। শান্তিতে বাঁচতে চেয়েছিল সে।
কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা তাকে সেই ন্যূনতম শান্ত জীবনটুকুও দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মিথ্যা অপবাদ,নির্মম পরিণতি
সম্প্রতি দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।অভিযোগ যাচাই,আইনি প্রক্রিয়া বা নিরাপত্তা—কোনোটাই নিশ্চিত না করেই একদল উগ্র জনতা তাকে ঘিরে ধরে।এরপর ঘটে সেই ভয়াবহ ঘটনা—দীপুকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু একজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়নি; ছিন্নভিন্ন করেছে একটি পরিবার,অনাথ করেছে একটি শিশুকে,নিঃস্ব করেছে একজন স্ত্রীকে।
প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা
এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—
অভিযোগ প্রমাণের আগেই কেন একজন নাগরিককে বিচারহীন হত্যার শিকার হতে হয়?
কোথায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?
কেন বারবার ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে সহিংসতার হাতিয়ার বানানো হচ্ছে?
আইনজ্ঞদের মতে,ধর্ম অবমাননার অভিযোগ রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্তযোগ্য বিষয়,কোনোভাবেই জনতার হাতে বিচার সমর্থনযোগ্য নয়।এটি সরাসরি সংবিধান,মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের পরিপন্থি।
নীরব কান্না,অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
দীপুর স্ত্রী এখন বাকরুদ্ধ।সন্তানের চোখে বাবার প্রশ্ন—যার কোনো উত্তর নেই।একটি পুরনো বাটন ফোন পড়ে আছে,যে ফোনে আর কোনোদিন “বাবা আসছি” বলা হবে না।
দীপু চন্দ্র দাস কোনো অপরাধী ছিল না।সে ছিল এই দেশের অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষের একজন—যার একমাত্র অপরাধ ছিল সাধারণভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা।

















