প্রতিনিধি ২৭ অক্টোবর ২০২৫ , ৬:২৮:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।দুর্নীতি দমনের শপথ নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা,সেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শীর্ষ পদেই নিয়োগ নিয়ে উঠেছে ২০০ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মাধ্যমে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এই বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে দুদকের চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত করেছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

এই লেনদেনকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ‘বাকিতে ঘুষ’ পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করছে।চুক্তি অনুযায়ী,১০০ কোটি টাকা নগদ পরিশোধ করা হয়েছে এবং বাকি ১০০ কোটি টাকা চেয়ারম্যান পদে যোগদানের পর দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে পরিশোধের করেছে।একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এতথ্য জানিয়েছেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ড. মোমেনের বিতর্কিত অতীত: অভিযোগের পাহাড়
অনুসন্ধানে দেখা যায়,দুদকের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন সময়ে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।তার কর্মজীবনের কয়েকটি অধ্যায়জুড়ে রয়েছে বিতর্ক।
১. কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী (CPGCBL)-এর চেয়ারম্যান থাকাকালীন দুর্নীতি:ড. মোমেন CPGCBL-এর চেয়ারম্যান থাকাকালে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো একটি মেগা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি: অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।প্রকল্পের ব্যয় কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে এই অর্থ লোপাট করা হয়।
সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ: প্রকল্পের প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের তামার তার কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন।এছাড়া, প্রায় ৪ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ (পুরাতন লোহালক্কড়) কোনো প্রকার নিলাম ছাড়াই বিক্রি করে সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
২. বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি থাকাকালীন দুর্নীতি ও অনিয়ম:বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে তার कार्यकाल ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত।
গণহারে চাকরিচ্যুতি: ২০০৬ সালের পর তিনি বিএনপি-জামায়াত পন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী সন্দেহে প্রায় ২১৭৭ জনকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যা তৎকালীন সময়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
ঋণের অর্থ আত্মসাৎ:বিশ্বব্যাংক থেকে বিমানের উন্নয়নের জন্য ৩০৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হলেও তার একটি বড় অংশ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে ড. মোমেনের বিরুদ্ধে।এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের করা একটি তদন্ত প্রতিবেদনেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিলেছিল বলে জানা যায়।
৩. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব থাকাকালীন দুর্নীতি:স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।
বদলি ও পোস্টিং বাণিজ্য:পুলিশ প্রশাসনে বদলি ও পোস্টিংকে কেন্দ্র করে তিনি শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।অর্থের বিনিময়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
দুর্নীতির মূলোৎপাটনের দায়িত্বে থাকা একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যদি এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়,তবে তা জাতির জন্য একটি অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।তারা বলছেন,দুদকের মতো একটি সংস্থাকে সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি।যদি নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে,তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান জনগণের আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে।
এইসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত দুদকের শীর্ষ পদের এই নিয়োগ কেলেঙ্কারি এবং ড. মোমেনের অতীত কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলোর একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আসল সত্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছে পুরো দেশ।

















