রাজনীতি

দীর্ঘ ছয় বছরের যন্ত্রণাদগ্ধ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ১৭ মে ১৯৮১ স্বদেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর ২০২২ , ২:৫৫:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থা একটি দেশের গণতন্ত্রের মাপকাঠি স্বরূপ।সেই হিসেবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য।নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনমতের প্রতিফলন ঘটে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে।

এ ছাড়া তিনটি গণভোট,তিনটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে।এসব নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যেমন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে,তেমনি বিশ্বনন্দিত হয়েছে। হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের দুঃসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে মুক্তি পেতে গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচনও।নির্বাচনের সময় আসলেই যে একটি গোষ্ঠী উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে,তা মোটামুটি সব নির্বাচনেই পরিষ্কার হয়েছে।

২০২৪-এর দ্বাদশ নির্বাচনও যে এক্ষেত্রে ভিন্ন হবে না,তা ইতোমধ্যে ওই পক্ষের কথা ও আচরণে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
ঘটনা-১।

১৯৮১ সালের ১৭ মে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ছয় বছরের যন্ত্রণাদগ্ধ প্রবাস জীবন কাটিয়ে এ দিন স্বদেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্দেশ্য, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫, প্রায় দুই দশক পরিকল্পিত উপায়ে বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের নাম-নিশানা মুছে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল, তার অবসান ঘটানো। বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র ছিল, দেশীয় চাপ ছিল। কিন্তু সবকিছু উতরে পরবর্তীতে তা-ই হয়েছে;যা দেশে ফিরে জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চেয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী সেদিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন;এমনকি যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না।

জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।

ঘটনা-২।

৭ মে, ২০০৭। ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের চক্রান্তে গঠিত সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সিদ্ধান্ত হয়- শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সেই চক্রান্তও ব্যর্থ হয়। দেশে ফেরার আগ মুহূর্তে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘যত বাধা আসুক না কেন, আমি দেশে ফিরবই। ’ এরপর তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাতে চক্ষুশূল হয় সে সময়ের সরকারের।

১৬ জুলাই যৌথবাহিনী তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে। সেদিন শেখ হাসিনা নির্ভীক চিত্তে জাতির উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথানত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন, আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।

এরপর ৩৩১ দিন কারাগারে বন্দি থাকার পর মুক্তি পেয়ে জাতির ক্রান্তিমুক্তির সংগ্রামে নামেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশ ও জনগণের কাছে প্রত্যাবর্তনের মতো শেখ হাসিনার ২০০৭ সালের ৭ মের দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তনও ছিল কোটি কোটি বাঙালির জন্য ত্রাণস্বরূপ। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে দেশে তখন শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা চলছিল। দলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল।

রাজনীতিবিদদের বিশেষ আইনে কারান্তরিণ করে রাখা হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের পথ সুগম হয় শেখ হাসিনার আগমনে। ওরা টোকাই কেন গ্রন্থে তিনি লিখেছেন-‘দেশ ও জনগণের জন্য কিছু মানুষকে আত্মত্যাগ করতেই হয়, এ শিক্ষাদীক্ষা তো আমার রক্তে প্রবাহিত। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এরপর প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার জীবনের অনিশ্চয়তা ভরা সময়গুলোয় আমি তো দেশের কথা ভুলে থাকতে পারিনি?’

শিরোনামের সঙ্গে সংগতি না থাকা ওপরের ঘটনাগুলো উল্লেখ করার কারণ হলো পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ এই দুটিই ছিল সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল এবং এই দুই ক্রান্তিকালেই একমাত্র ত্রাণকর্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই কৃষক-শ্রমিক-জনতা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল। সাহস করেছে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। মোট চারবার এবং পর পর তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনিই দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছেন। আজ যখন গোটা বিশ্বসহ বাংলাদেশ নানা সমস্যা বিশেষত অর্থনৈতিক সংকটে দগ্ধ; তখন রাজনৈতিক পরিমন্ডলবেষ্টিত পরিবার থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা, বঙ্গবন্ধুর সাহচর্য; যেখানে তিনি ছিলেন জাতির জনকের সবচেয়ে একনিষ্ঠ শিষ্যা এবং পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে বারবার নিজেকে ঢেলে সাজানো নেত্রীই পারেন বাংলাদেশকে সংকট থেকে উদ্ধার করতে। আমরা যদি সর্বশেষ বৈশি^ক সংকট কভিড-১৯ এর দিকেও তাকাই, সেখানেও দেখব তাঁর নেতৃত্বের কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সবচেয়ে কম মৃত্যুর তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাতেও ছিল ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। সর্বশেষ বিনামূল্যে টিকাদানের কর্মসূচি জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তা নয়, বরং বিশ্বের অনেক সংকটের নেতৃত্বদানকারী ও অগণিত সংগঠনের শীর্ষমুখ তিনি। যখনই কোনো সংকট মুহূর্ত কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতি এসেছে, তখনই তিনি ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংকট দূর করেছেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর আজ পর্যন্ত প্রচন্ড দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়েছেন অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। প্রতিকূল পরিবেশ, সহকর্মীদের শত বাধা এবং সুশীল সমাজ কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চিন্তা-চেতনা সম্পূর্ণরূপে তাঁর বিপক্ষে থাকার পরও তিনি এগিয়ে গেছেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে আবার সংসদ থেকে বের হয়ে আসা একটি বিশাল ব্যাপার ছিল। ১৯৯১ সালের পর বিএনপিবিরোধী আন্দোলনে সফলতা, ১৯৯৬ সালের সরকারপ্রধান হিসেবে সাফল্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, তেমনি ১/১১-এর প্রেক্ষাপটে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া অনন্য সাধারণ। গণতন্ত্র রক্ষায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটিও তিনি নিজের দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে করেছিলেন। সুতরাং বৈশি^ক সমস্যায় জর্জরিত এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একমাত্র তাঁরই ক্ষমতায় আসা জরুরি, সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু জাতির ক্রান্তিকালে হাল ধরেছেন তা নয়, রাজনীতি-অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নেও তাঁর অবদান এক ও অনন্য। তিনি জানেন, কীভাবে বাংলাদেশের ভাগ্য বদলাতে হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের দুঃশাসন এবং পরবর্তীতে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্তৃত্বে দেশের সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যখন অন্ধকার নেমে এসেছিল; ঠিক তখনই প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা। একুশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো মূলত সেখান থেকেই শুরু। নানা অর্থনৈতিক সূচকে দেশ যেভাবে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে; তাতে সহজেই অনুমেয়- আগামীর বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশের সারিতে কাঁধ মেলাতে সক্ষম হবে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস ইনভেস্টরস সার্ভিস বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা চাপ থাকলেও তা কোনো ঝুঁকির কারণ নয়। সংস্থাটি বলেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ধকলে থাকা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দিগুণ মাত্রায় শ্লথ করেছে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট। এমন বাস্তবতায় আর্থিক সংকটের মধ্যে থাকা দক্ষিণ এশীয় দেশ শ্রীলঙ্কা এরই মধ্যে দেউলিয়া হয়েছে। আরেক দেশ পাকিস্তানেও সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সেই বিচারে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মুডিসের সিঙ্গাপুর শাখার রাষ্ট্রীয় (বিনিয়োগ) বিশ্লেষক ক্যামিলে শ্যঁতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্প্রতি উচ্চ স্তর থেকে নেমে এলেও বাহ্যিক দুর্বলতার সূচকে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত। ’

দুই. গত কয়েক মাস ধরে দেশে নির্বাচনের হাওয়া বইছে; যা দিন দিন আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ যেমন বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করছে, তেমনি থেমে নেই বিরোধী পক্ষ বিএনপি। সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির হাঁকডাক যাই হোক, নির্বাচন নিয়ে নিকট অতীত সবচেয়ে সুন্দর মন্তব্যটি করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ভাষায়, ‘দেশের মানুষ বিএনপির সময়ে কী পেয়েছে আর আওয়ামী লীগের সময়ে কী পেয়েছে, সেটার তুলনা করতে হবে। জনগণ কাকে ভোট দেবে, আওয়ামী লীগের বাইরে আর কে আছে? কারা, কেন, কী কারণে, কোন সুখের স্বপ্নে, কোন আশায় বিএনপিকে ভোট দেবে?’ ভোটের হিসাব-নিকাশ যদি বাদও দেওয়া হয় এবং বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়; তাহলে তাদের দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন কে? একদিকে একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। অন্যজন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে দেশান্তরে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির তুলনামূলক দু-একটি উদাহরণ দিলে পাঠকমহল বিষয়টি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা-পরবর্তী ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৯১.৬ বিলিয়ন ডলার; বর্তমানে তা বেড়ে ৪১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার; বর্তমানে তা বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২২ ২৩ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ৭ মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকবে। বিএনপি সরকারের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৩ বিলিয়নের কিছু ওপরে ছিল; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তা ৫ বিলিয়নের ওপরে এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সেটাকে ৪৮ বিলিয়নে দাঁড় করিয়েছে। দেশে দারিদ্র্যের হার যেখানে ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল, সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা এখন ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালে মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় ছিল, মুজিববর্ষে তা শতভাগ হয়েছে। দেশও এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইতোমধ্যে খাদ্য উৎপাদন ১.১ কোটি টন থেকে প্রায় ৪.০ কোটি টনে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। ’৯০-এর দশকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল আখ্যা দিয়ে গত ২৮ জুলাই ‘What Bangladesh can teach others about development.’ ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন সম্পর্কে অন্যদের যা শেখাতে পারে’ শীর্ষক এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত দ্য ফিন্যানশিয়াল টাইমস। লেখার শুরুটা হয়েছে এভাবে, ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনের একজন শিশু পাঁচ বছর পূর্ণ করার আগে মারা যেত, বর্তমানে সেই এই হার এখন ৩০ জনের মধ্যে একজনে নেমে এসেছে। যদি আরও বড় পরিসরে দেখা হয়, তবে হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা পাওয়া দেশটি এখন উন্নয়নের সফল এক দৃষ্টান্ত। সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য, নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশটি আজ অনেকটাই বদলে গেছে। মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে আট গুণ। নারীদের গড়ে সন্তান সংখ্যা দুজন। অর্থাৎ প্রতিটি সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তাদের ভালো রাখতে বাবা-মা এখন আরও বেশি ব্যয় করতে পারেন। ব্যাংকগুলোর কাছে শিল্প খাতে বিনিয়োগের মতো সঞ্চয়ও বেড়েছে।

মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া, অর্থনীতিতে দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচ দেশের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল ও ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ এবং সর্বশেষ ৭ নভেম্বর দেশের ২৫টি জেলায় নবনির্মিত ১০০টি সেতু ও রাস্তার উদ্বোধনসহ (দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৪৯৪ মিটার এবং নির্মাণ ব্যয় ৮ হাজার ৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা) দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন-সবই তার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে ক্যারিশম্যাটিক ও দূরদর্শী সফল নেতৃত্বের ফল। দেশবাসী কোনোভাবেই চায় না, ২০২৪ সালেও ২০০৬ ও ২০১৪ সালের দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি হোক। তাদের চাওয়া, শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল; যাতে জনগণ পছন্দসই দলকে বেছে নেবে। উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে কেউ একপক্ষ আরেকপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে না, যেমনটি বিএনপি-জামায়াত করেছিল ২০০১ সালের নির্বাচনের পর। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর- সর্বশেষ এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি যতই অভিযোগের তীর হানুক না কেন, নির্বাচনের পর দলের নেতা-কর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়নি। কাউকে জেলে তোলা হয়নি কিংবা কোনো সংখ্যালঘু এমনকি বিএনপির ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়নি।

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ যেমন সমার্থক শব্দ, তেমনি উন্নয়নের বাংলাদেশের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। সেই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকন্যার বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। সুতরাং শুধু বিশ্বাস নয়, যৌক্তিকভাবে আমাদের চাওয়া, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ একইভাবে শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখবেন। আগামীর বাংলাদেশ, উন্নত ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনা আছেন, শেখ হাসিনা থাকবেন।

আরও খবর

Sponsered content