প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২২ , ৫:৩৩:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।ঐতিহাসিক সাতুরিয়া গ্রামের মোগল আমলের নির্মিত একটি তৃতীয় তলা ভবনে জ্বীন-ভুতের আস্তানায় রূপ নিয়েছে;ভবনটি দীর্ঘ বছর যাবত পরিত্যক্ত ও যে কোন সময়ে ধসে পড়তে পারে।

ঝালকাঠি’র রাজাপুর উপজেলাধীন ঐতিহাসিক সাতুরিয়া গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার বংশ”মিঞা বাড়ি”তে মোগল আমলে নির্মিত একটি তৃতীয় তলা ভবন। এই ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন শেখ দ্রাজতুল্লা ধন মিঞা’র ভাই শেখ এনায়েত উল্লা মিঞা;ভবন নির্মাণকাল (১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দ)। স্হানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে,এই ভবনটি অনেক বছর যাবত জ্বীন-ভুতের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
গভীর রাতে ভবনের ভিতরে ও ছাদের উপরে জ্বীন-ভুত বিভিন্ন রূপ ধারণ করে।ভবনটিতে অনেক বছর আগে কেয়ারটেকার বসবাস করলেও এখন কোন লোকজন বসবাস করে না।ভবনটির মূল মালিকের উত্তরাধিকার এখন পর্যন্ত অনেক দূরে গড়িয়েছে ।
শেখ এনায়েত উল্লা মিঞা সাতুরিয়া’র জমিদারী ফেলে রেখে”ফরিদপুরের জালালাবাদ পরগনা”য় বিশাল জমিদারী খরিদ করে ফরিদপুর ও ঢাকায় বসবাস করতেন এবং ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত আরমানিয়ানদের দ্বারা বিশাল নির্মিত ভবন যা পরবর্তীতে “আহসান মঞ্জিল “নামে পরিচিত সেটি তিনিই প্রথমে খরিদ করে মালিক হয়েছিলেন ।
তার মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকারীরা এই ভবন ঢাকার নবাবদের কাছে বিক্রি করলে এর মালিকানা রদবদল হয়ে যায় এবং ঢাকার নবাবদের দ্বারা এই ভবনের নামকরণ করা হয় “আহসান মঞ্জিল “।শেখ এনায়েত উল্লা মিঞা সাতুরিয়া,ফরিদপুর ও ঢাকার প্রভাবশালী জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন ।তার পিতার নাম শেখ নাজিম উল্লা মিঞা ও পিতামহের নাম “হযরত শেখ শাহাবুদ্দিন মিঞা রঃ ।হযরত শেখ শাহাবুদ্দিন মিঞা রঃ-এর ৯পুত্র ও ২ কন্যা ছিল;তার পুত্র ও পৌত্ররা এবং পরবর্তী বংশধর পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার পার সাতুরিয়া গ্রাম,ঝালকাঠি’র রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ও শুক্তাগড় গ্রাম এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার রমানাথপুর গ্রামের শরীফ বাড়িতে(শরীফ উপাধি) স্হায়ী ভাবে বসতি নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
শেখ এনায়েত উল্লা মিঞা’র প্রথম বিবাহের ঘরের পুত্র শেখ আবদুল আলী মুনসুর মিঞা;শেখ মুনসুর মিঞা সাতুরিয়া গ্রামে বসবাস করতেন এবং তিনিও পিতামহ শেখ নাজিম উল্লা মিঞা’র মতো স্বনামখ্যাত প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন ।তার একমাত্র কন্যা(পিতা ও স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রভাবশালী জমিদার) মেহেরুননেছার বিয়ে হয় একই বাড়ির স্বনামখ্যাত জমিদার শেখ দ্রাজতুল্লা ধন মিঞা’র পুত্র শেখ আবদুল গফুর মিঞা’র সঙ্গে।শেখ আবদুল গফুর মিঞা ও মেহেরুননেছার একমাত্র কন্যা সামছুন্নেছা।
সামছুন্নেছার প্রথম বিয়ে হয় বরিশালের শায়েস্তাবাদ পরগণার বিখ্যাত মুসলমান জমিদার বংশের “সৈয়দ ওবায়দুল্লা চৌধুরী নসিব মিঞা”র সঙ্গে; ওবায়দুল্লা চৌধুরীর পিতা সৈয়দ আবদুল্লা চৌধুরী ছিলেন ঢাকার সেসন জজ ও তার বড় ভাই খান বাহাদুর ব্যারিস্টার সৈয়দ ইসরাইল হোসেন চৌধুরী ছিলেন হুগলির ডেপুটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
বৃহত্তর বরিশালের জেলার মুসলমানদের মধ্যে সৈয়দ ইসরাইল হোসেন চৌধুরী ছিলেন প্রথম ব্যারিস্টার এবং তার আপন চাচাতো ভাই সৈয়দ মোতাহার হোসেন চৌধুরী ছিলেন দ্বিতীয় ব্যারিস্টার( ইনি নবাব খান বাহাদুর সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী’র পুত্র; সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ছিলেন বৃহত্তর বরিশালের একমাত্র “নবাব”উপাধি প্রাপ্ত সম্মানিত ব্যক্তি)। সৈয়দ ওবায়দুল্লা চৌধুরী নসিব মিঞা ছিলেন বরিশাল জেলা বোর্ড ও পিরোজপুর লোকাল বোর্ডের মেম্বার,পিরোজপুরের সাব-রেজিস্ট্রার ও অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পিরোজপুর পৌরসভার কমিশনার। তার সমাধি সাতুরিয়া মিঞা বড় বাড়ির মেহেরুননেছা ও সামছুন্নেছার পারিবারিক কবরস্থানে।
সামছুন্নেছার প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পরে তাকে অনিচ্ছায় বিয়ে দেয়া হয় অবিভক্ত বাংলার আইজিআর ঢাকার বিখ্যাত ও প্রভাবশালী জমিদার”নবাব খান বাহাদুর সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন(নান্না সৈয়দ)”-এর দ্বিতীয় পুত্র এবং ফরিদপুরের প্রভাবশালী জমিদার- শিক্ষা ও সমাজসংস্কারক এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ-এর বংশধর “নবাব খান বাহাদুর শেখ আবদুল লতিফ”-এর মেয়ের ঘরের নাতি(দৌহিত্র) সৈয়দ আলী মেহেদী’র সঙ্গে।
সৈয়দ আলী মেহেদী অবিভক্ত বাংলার পোষ্ট অফিসের সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং ঢাকা ও কুমিল্লা’র কয়েকটি বৃহত্তর পরগণার জমিদার ছিলেন।তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠী ছিলেন এবং তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের শ্যালক ছিলেন।তার( সৈয়দ আলী মেহেদী) মাতা ছিলেন মোগল আমলের বাংলার বার ভুইঞা খ্যাত বিখ্যাত জমিদার ” ঈশা খাঁ ” এবং চট্টগ্রামের ফৌজদার ও কুমিল্লা(ত্রিপুরা) ও বাকেরগঞ্জের বিখ্যাত জমিদার বীর যোদ্ধা “আগা বাকর খাঁ”-এর বংশধর।
সামছুন্নেছা নিঃসন্তান অবস্থায় ও প্রথম স্বামীর জীবদ্দশায় তার সমস্ত সম্পদ ও জমিদারী সাতুরিয়া গ্রামে তার মাতা প্রতিষ্ঠিত স্কুল,মাদ্রাসা-মক্তব, এতিমখানা,মসজিদ,দাতব্য চিকিৎসালয়, পোষ্ট অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ওয়াকফ্ ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।দলিল মূলে দান করে যান।
















