সারাদেশ

তারেক রহমানের প্রোগ্রামের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি-পিরোজপুরে ভাইরাল ভিডিও, কাঠগড়ায় সাইফুল ইসলাম নয়ন

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ২:৫২:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মসূচির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজির অভিযোগে পিরোজপুরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে একটি ভিডিও।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি এবং টাকা না দিলে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর জেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তের নাম সাইফুল ইসলাম নয়ন।স্থানীয়ভাবে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পরিচিত।

কী দেখা গেছে ভাইরাল ভিডিওতে

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়—“তারেক রহমানের প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য টাকা লাগবে।”
ভিডিওতে দেখা যায়,তিনি একটি ভাঙারি দোকানে দাঁড়িয়ে দোকানিকে চাপের মুখে ফেলছেন এবং টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরিণতির ইঙ্গিত দিচ্ছেন।ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ: টাকা না দেওয়ায় হত্যার হুমকি

ভাঙারি ব্যবসায়ী,যিনি ভিডিওটি ধারণ করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে,তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী—প্রথমে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর হুমকি আরও বেড়ে যায়

ভুক্তভোগীর ভাষায়, “আমি গরিব মানুষ।দোকান চালিয়ে কোনোরকমে পরিবার চালাই।টাকা না দেওয়ায় আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।”

তারেক রহমানের নাম কেন ব্যবহার?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় তারেক রহমানের নাম ও কর্মসূচির দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে।

বিশ্লেষকদের প্রশ্ন—
👉 কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নাম ব্যবহার করে এসব কর্মকাণ্ড কি স্থানীয়ভাবে প্রশ্রয় পাচ্ছে?
👉 নাকি দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে?

আইনি বিশ্লেষণ: সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন,অভিযোগ সত্য হলে এখানে একাধিক গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের উপাদান রয়েছে—

দণ্ডবিধি ৩৮৫/৩৮৬: ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়

দণ্ডবিধি ৫০৬: প্রাণনাশের হুমকি

দণ্ডবিধি ৩৪/১০৯: সম্মিলিত অপরাধ বা প্ররোচনা

ডিজিটাল প্রমাণ আইন অনুযায়ী ভিডিওটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হতে পারে

একজন সিনিয়র আইনজীবীর মন্তব্য,

> “রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করলে সেটি আরও গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।এটি সরাসরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি।”

বিএনপির ভেতরেই অস্বস্তি

দলীয় সূত্রগুলো বলছে,এ ধরনের ঘটনায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।কারণ,এতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে চাঁদাবাজির সঙ্গে এক করে দেখছে।বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো এসব ঘটনা ব্যবহার করছে।তবে এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম নয়নের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা আসেনি।

অভিযুক্তের বক্তব্য নেই

এই অভিযোগের বিষয়ে সাইফুল ইসলাম নয়নের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপসংহার: প্রশ্নের মুখে রাজনীতি

ভাঙারি দোকানের মতো ছোট ব্যবসা থেকেও যদি রাজনৈতিক নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করা হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠছে—
👉 রাজনীতি কি এখন সাধারণ মানুষের কাছে ভয় হয়ে উঠছে?
👉 দলগুলো কি নিজেদের নাম ব্যবহার করে হওয়া অপরাধের দায় এড়াতে পারে?

রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের কাছে এখন একটাই দাবি—
ভিডিওভিত্তিক অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং দলীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা।

না হলে,এই ধরনের ঘটনা রাজনীতিকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দেবে।

আরও খবর

Sponsered content