প্রতিনিধি ২১ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:২০:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।চালের উচ্চ দাম কমাতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অভিযানের কোনো প্রতিফলনই নেই রাজধানীরে চালের বাজারে।বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই।

রোববার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গিয়েছে,খুচরা বিক্রেতারা বলছে পাইকাররা দাম বাড়াচ্ছে।
পাইকাররা বলছে মিলাররা দাম বাড়াচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর, ২ নম্বর, ১ নম্বর, ১১ নম্বর, ১৪ নম্বর সেক্টরের খুচরা বাচারে দেখা যায়,খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৩ থেকে বাজার ও ধরনভেদে ৭৫ টাকা টাকা; বিআর-২৮ এর প্রতি কেজি ৬০ টাকা; বাজার ভেদে একই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা।
স্বর্ণা প্রতি কেজি ৫২ থেকে ধরনভেদে ৫৫ টাকা; পায়জামের প্রতি কেজি ৫৫ টাকা।কাটারিভোগ প্রতি কেজির দাম ৮৫ থেকে ধরনভেদে ৯০ টাকা।
এক সপ্তাহ আগে যে দামে চাল বিক্রি হয়েছিল,একই দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার তদারকিতে নামার পর চালের দাম কমার কথা বলা হলেও বাজারে এর প্রতিফলন নেই।কোথাও কোথাও নতুন করে বেড়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান,চালের দাম কমার কথা বলা হলেও সেই চাল এখনও বাজারে আসেনি।আর যেটা কমানোর কথা শোনা যাচ্ছে বস্তাতে ৫০ টাকা কমানো হয়েছে।
মিরপুর-১৩ এর খুচরা চাল বিক্রেতারা আমিরুল ইসলাম জানান,৫০ কেজি চালের বস্তাতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।সরকারের তদারকির ফলে শোনা যাচ্ছে চালের দাম ৫০ টাকা কমানো হবে।কিন্তু সেই বাড়তি দামের চাল কেউ এনেছিল,কেউ আনেননি। অধিকাংশ খুচরা বিক্রেতা আগের চাল,আগের দাম বিক্রি করছে। নতুন দামের চাল বিক্রি শুরু করলে দাম বাড়াতে হবে।
একই চিত্র দেখা গেলো মিরপুর ১৪ ও ৩ নম্বর সেক্টরে। কোথাও কমার লক্ষণ দেখা যায়নি।নতুন চালের মৌসুম চলছে,কেন চালের দাম বাড়লো-তা জানে না আড়ৎদাররা।তাদের অধিকাংশের বক্তব্য অ-সময়ে চালের দাম বাড়ানোর জন্য দায় মিলারদের।তারা চালের দাম বাড়লে আমরা দাম না বাড়িয়ে পারি না।রোববার মিরপুরের পাইকারি চালের বাজারে অধিকাংশ দোকান বন্ধ।দুয়েকটি দোকান খোলা আছে।তারা এমনটাই জানায়।
বাজারে দেখা যায়,আগের কম দামে কেনা চাল বিক্রি করছে কিন্তু দেখাচ্ছে পরে বেড়ে যাওয়া দামে কেনা রশিদ।দাম কমার ক্ষেত্রে দেখানো হচ্ছে আগের বেশি দামের রশিদ।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে।
মিরপুর-১৪ কচুক্ষেতের পাইকারি বিক্রেতা ফারুক চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন,সরকার বাজার তদারকিতে নামার পর মিলাররা দাম কমাবে কি না তা আগামীকাল বোঝা যাবে।নতুন চাল আনার জন্য আজ টিটি করা করবে।কেউ কেউ কাল টিটি করবে।তখন বোঝা যাবে তারা কি দামে চাল বিক্রি করছে।সেইভাবে আমরাও বিক্রি করব।
মিরপুরের চাল বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়,চালের বাজার অস্থির করার সময় গলির খুচরা বিক্রেতা থেকে পাইকারি বাজার পর্যন্ত সবাই সুযোগ নিয়ে থাকে।জানা যায়,সবাই নিজেদের সক্ষমতা বুঝে মজুদ করে।খাদ্য পণ্য মজুদ করা এখন কম সময়ে বেশি মুনাফা করার প্রধান ব্যবসাতে পরিণত হয়েছে।এই সুযোগ নেয় মিলাররা।আবার মিলাররা যখন চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়,তখনও মাঠ পর্যায়ে মিলারদের সহযোগিতা করে। চালের বাজার অস্থির করতে একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে।
চালের দাম কমলেও কম আয়ের প্রান্তিক মানুষকে বেশি দামেই কিনতে হয় অনেকদিন।তারা সুফল পায় না। রাজধানীর বিভিন্ন গলি,মোড়ের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,খুচরা বাজারে একই চাল কম আয়ের প্রান্তিক মানুষের জন্য প্রতি কেজিতে দুই থেকে বাজার ভেদে তিন টাকা বেশি দিতে হয়।
এ বিষয়ে মিরপুর-১৩ এর চাল বিক্রেতা রসুল মিয়া এই প্রতিবেদককে জানান,চালের দাম কম-বেশি হওয়ার সঠিক কারণ আছে।যারা গরিব মানুষ তারা চাল কিনে ১/২ কেজি। এই ১/২ কেজি চাল মাপার সময় চাল নষ্ট হয়,সময় খরচ হয়,পুঁজিও দীর্ঘ সময় আটকে থাকে।এ কারণে দাম ২/৩ টাকা বেশি নিই।যারা সচ্ছল লোক তারা ২৫ কেজি একসঙ্গে কিনে,এতে সময় কম লাগে, মাপার সময় চাল নষ্ট কম হয়।আবার পুঁজিও আটকে থাকে না।
চালের দাম অস্থিরতা রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত তদারকির প্রয়োজন বলে মনে করছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।তারা বলছেন,একইসঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা এবং চালের উৎপাদন স্থল,আড়ত ও ভোক্তা পর্যায়ের বাজার পর্যন্ত একসঙ্গে তদারকি করতে হবে।যাতে একে অপরকে দোষ দেখাতে না পারে।

















