সারাদেশ

ড. ইউনূসের জোবরা গ্রামে আতঙ্কের নাম গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প

  প্রতিনিধি ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২:০৭:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।দেশের মানুষের কাছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রাম বিভিন্ন কারণে আলোচিত।এ গ্রাম থেকেই যাত্রা শুরু করা গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।অথচ এখনও এ গ্রামে আতঙ্কের নাম গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প।

স্থানীয়দের অভিযোগ,অর্থনৈতিক মুক্তি এবং জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করা হলেও,তিন যুগ পরও হয়নি জোবরা গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন।

সরেজমিন কথা বলে জানা যায়,দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে দুই দফায় ৫৬০ টাকা ঋণ নেন জোবরা গ্রামের সুফিয়া খাতুন।এটি ছিল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর আগে মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের আওতায় দেয়া প্রথম ঋণ।সুফিয়া খাতুন আজ বেঁচে নেই।কথা হয় সুফিয়া খাতুনের মেয়ে নুর নাহার বেগমের সঙ্গে। বেতের তৈরি মোড়াসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির জন্য সে সময় ঋণ নিয়েছিলের তার মা।

চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়।সেই সময় গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঘরের পাশের পাকা দালান দেখিয়ে ছবি তোলান। কিন্তু নিজেদের একটি ভালো ঘরে থাকার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি।জোবরা গ্রাম থেকে শুরু হওয়া ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প দিয়ে ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেলেও নিজেদের ভাগ্যের চাকার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বলে অভিযোগ সুফিয়া খাতুনের মেয়ে ও স্বজনদের।

সুফিয়া খাতুনের মেয়ে নুর নাহার বেগম বলেন, “প্রথম ঋণ নেন আমার মা।মাকে দেখে গ্রামের অন্যরাও নেন।যখন মা মারা গেলেন,সে সময় ড. ইউনূস বলেছিলেন ‘সুফিয়া খাতুনের দুই মেয়েকে আমার নিজের মেয়ে মনে করি।’ কিন্তু নোবেল পাওয়ার পর ফুলের তোড়া দেয়ার সময় চোখ তুলেও আমাদের দিকে তাকাননি।”

এদিকে দারিদ্র্য দূরীকরণের নামে ইউনূস ১৯৭৬ সালে ওই গ্রামে শুরু করেন তেভাগা প্রকল্পের কার্যক্রম।জোবরা এলাকার খালে বাঁধ দিয়ে তেভাগা খামার গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন ড. ইউনূস নিজেই।স্থানীয় নবযুগ ক্লাবে শুরু হয়েছিল এ কার্যক্রম।ধীরে ধীরে শুরু করেন ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। বর্তমানে নবযুগ তেভাগা খামার অফিসের অবস্থা অনেকটাই জরাজীর্ণ।দেখার যেন কেউ নেই।

গ্রামীণ ব্যাংকের অতিরিক্ত ও চক্রবৃদ্ধি সুদের চাপে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে অনেকের জীবন।ঋণের চাপে অনেককে হতে হয়েছে ঘরছাড়া।গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী নিজের অবস্থান তৈরি করলেও জোবরা গ্রাম অবহেলিতই থেকে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

চট্টগ্রাম হাটহাজারীর জোবরা গ্রামের নবযুগ ক্লাবের সভাপতি মো. হোসেন বলেন,জোবরা গ্রাম থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা।কিন্তু জোবরা গ্রামে উল্লেখযোগ্য কিছুই করেনি।ড. ইউনূস যখন নোবেল পেয়েছিলেন,সে সময় এসে উন্নয়নের কথা বলেছিলেন।’

ফতেহপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, সরকার সুদহার এক ডিজিটে আনার কথা বললেও গ্রামীণ ব্যাংকে সুদহার দুই ডিজিটের। ১৩ শতাংশ করে সুদ নেয়। এটা যখন কিস্তি আকারে দেয়া হয় তখন তা ৪২ শতাংশ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য ড.মুহাম্মদ ইউনুস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।

আরও খবর

Sponsered content