প্রতিনিধি ১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৪:৪২:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।দুই মাস পর নিলামের মাধ্যমে আবারও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।মূলত ডলারের দর পতন ঠেকাতে এবং দাম যাতে অনেক নিচে নেমে না যায়,সে জন্যই আবার ডলার কেনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১২২ টাকা ২৫ পয়সা দরে ৫৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এতে চলতি অর্থবছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ডলার কেনার পরিমাণ দাঁড়াল ২ বিলিয়নেরও বেশি।
বৃহস্পতিবার ডলারের দর ১২২ টাকা ১৭ পয়সায় নেমে যাওয়ায় নিলাম করল বাংলাদেশ ব্যাংক।এতে বাজারে এক ধরনের সংকেত দেওয়া হলো যে,ডলারের দর যেন ১২২ টাকা ২৫ পয়সার নিচে না নামে—এমনটিই বলেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী,ইন্টারব্যাংক বাজারে দুই সপ্তাহ আগে ডলারের সর্বনিম্ন দর ছিল ১২২ টাকা ৪৮ পয়সা; যা গত বৃহস্পতিবার নেমে আসে ১২২ টাকা ১৭ পয়সায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ডলার কিনেছিল ৬ অক্টোবর।চলতি বছরের জুলাই থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।ডলারের যোগান বেশি হলে দাম কমে,আর চাহিদা বেশি হলে দাম বাড়ে।
ডলারের দর কমার পেছনে কয়েকটি কারণ জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
প্রথমত,সরকারি বড় পেমেন্টের চাপ কমেছে।ফলে দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় ডলারের চাহিদাও কিছুটা কমেছে।
দ্বিতীয়ত,দেশে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য বা বিনিয়োগ কার্যত নেই। ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। এতে আমদানি, বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে।সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ,যা রেকর্ড সর্বনিম্ন।অর্থাৎ পর্যাপ্ত ডলার থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা আমদানিতে আগ্রহী নন।
তৃতীয়ত,মাসের শেষ দিকে বিদেশে স্যালারি প্রদানের সময় হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।এতে ব্যাংকগুলোতে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি দেখা দিয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মহবুবুর রহমান বলেন,ইতোমধ্যে সরকারি বড় বড় পেমেন্ট হয়ে গেছে।সামনে তেমন বড় পেমেন্ট নেই। তাই ডলারের ওপর চাপ কমেছে।ডলার দর কমে যাওয়ার প্রধান কারণ এটিই।”
“মাঝখানে ডলারের দর কিছুটা বেড়েছিল,তার বড় একটি কারণ ছিল বড় পেমেন্ট।বড় পেমেন্ট যত বেশি হয়, ডলারের ওপর চাপ তত বাড়ে,” বলেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন,দেশে নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকায় ব্যবসায়ীদের ডলার চাহিদাও কমেছে।মূলধনী যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজনও আগের মতো নেই।আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশল হচ্ছে ডলারের দর কিছুটা উঁচু রাখা,কারণ দর বেশি থাকলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ে। আমার মতে,এই কৌশল সঠিক।”
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে এবং ডিসেম্বরেও এই ধারা ইতিবাচক থাকবে।ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিনে ডলারের চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে পেমেন্টের চাপ বাড়তে পারে,তখন ডলারের দর আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,০কমার্শিয়াল পেমেন্ট সাধারণত বেসরকারি ব্যাংক করে,আর সরকারি পেমেন্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সম্পন্ন করে।এখন পেমেন্টের চাপ কম হলেও সামনে তা আবার বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত কয়েক মাসের তুলনায় ইতিবাচক প্রবাহ।
শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও দাবি করেন,ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার সরবরাহ রয়েছে।তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি,মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ডলার বাজার স্থিতিশীল করতে হবে। বর্তমানে ডলার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে,বরং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি স্থিতিশীল।”
আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে মৌসুমি চাহিদা মেটাতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এবং আমদানিকারকরা ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান জানান,রোববার তারা রেমিট্যান্স কিনেছেন ১২২ টাকা ১৫ পয়সায়।নিলামের পর রেমিট্যান্সের দর আরও বাড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স কিনছে ১২২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৪০ পয়সা দরে।











