অপরাধ-আইন-আদালত

টেকনাফে অপহরণকারী কে মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮জন

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:৫৩:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি।।টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজ পুরা গ্রামের ১ শিক্ষার্থী সহ ৮জন গ্রামবাসী জীবন পেল পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর ২০২২) বিকেলে কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।

গত রবিবার বেলা ১১টায় পাহাড়ী খালে মাছ ধরতে যাওয়া একি পরিবারের ৮জন সদস্যকে পাহাড়ী অপহরণ চক্র ধরে নিয়ে যায় গহীন জঙ্গলে,এরপর শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে মুঠোফোনে স্বজনদের কাছে জনপ্রতি মুক্তিপণ দাবি করেন ২/৫ লাখ টাকা।পরে এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানালে পুলিশ প্রশাসন শক্তিশালী ড্রোনসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তায় পাহাড়ী পাদদেশে অভিযান পরিচালনা করে, তাদের উদ্ধার করতে চেষ্টা করেন।

পরে এসব অপহরণ চক্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে আতংকে অপহৃতদের চাপ প্রয়োগ করে তাদের চাহিদামতো মুক্তিপণ না দিলেও ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ছেড়ে দেয়।

তবে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন পুলিশ।

এবিষয়ে ভিকটিমের স্বজনরা বলেন , ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় ডাকাত দল, তবে তাদের শারীরিক অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে,তার মধ্যে ২জনের অবস্থা মারাত্মক হওয়ায় তাদের টেকনাফ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়।

অপহৃতরা উপজেলার বাহারছড়া জাহাজ পুরা গ্রামের রশিদ আহামদের পুত্র মোহাম্মদ উল্লাহ,ছৈয়দ আমির পুত্র মোস্তফা কামাল, মমতাজ মিয়ার পুত্র রিদুয়ান, রুস্তম আলীর পুত্র সলিম উল্লাহ, ছৈয়দ আমির পুত্র করিম উল্লাহ,কাদের হোসেনের পুত্র নুরুল হক, রশিদ আহমদের পুত্র আবছার, ও নুরুল হকের পুত্র নুর মোহাম্মদ‌।

অপহৃতদের দেওয়া তথ্য মতে গহীন পাহাড়ে তাদের আস্তানা তৈরি করে অবস্থান নেয়া অপরাধী চক্রের হাতে রয়েছে অসংখ্য ভারী অস্ত্র।

এসব অপরাধীদের সংখ্যা ও ২০ থেকে ৩০জন হলে ও অস্ত্র ছিল ১০০ টির ও বেশি, এসব অপহরণকারী চক্রের ৩জন ছাড়া বাকি সবাই মুখোশ পড়া ছিলেন।

মুখোশ খোলা ৩জন রোহিঙ্গা বলে ও জানান তারা, তারা আরো বলেন মুখোশ পরিহিতদের মধ্যে একজন কে মেজর অপরজনকে কমান্ডো বলে ও সম্বোধন করেন।গহীন পাহাড়ে অবস্থান নেয়া এ চক্রের সদস্যরা ল্যাপটপ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ডিভাইস ব্যবহার করতে দেখেছেন অপহৃতরা।যে প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ,আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের আগাম তথ্য তারা জানতেন।

টেকনাফ থানায় দায়ের হওয়া অপহরণ মামলার বাদি হাবিব উল্লাহ জানান, ফেরার পর তারা যে তথ্য প্রদান করেছেন তাতে গহীন পাহাড়ে অপরাধীদের খাবার সরবরাহে একজন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। যিনি তাদের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে যান এবং মাঝে-মধ্যে রান্না উপকরণ নিয়ে গিয়ে রান্না করে দেন এই বয়স্ক লোক।যাকে সকলেই ‘বাবা’ বলে ডাকেন ৮ জন অপহরণের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ে অভিযান চালানোর সময় প্রায় কাছা-কাছি স্থানে পৌঁছে ছিলেন।আরও কিছু এগিয়ে গেলে হয়তো অপহরণকারিদের পাওয়া যেত।

হাবিব জানান,ফেরত আসা ৩ জনকে সাথে নিয়ে পুলিশ পাহাড়ের ওই আস্তানায় অভিযানে গিয়েছিলেন আজ বিকেলে।
এবিষয়ে,বাহাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, পাহাড় ঘীরে একটি অপরাধী চক্রের শক্ত অবস্থান রয়েছে।যারা গত ৫ মাসে বাহারছড়া ইউনিয়নের ১৫-২০ জনকে অপহরণ করেছে। এবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান দেখা গেছে।এটা অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম। ওই সময় অপহৃত ৮ জনকে ওখানে আনা হয়।

ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৩ দিন পর অপহরণকারি চক্রের কাছ থেকে ফেরা ৮ ব্যক্তির সাথে আলাপ করে পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করেছে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, মুক্তিপণ দাবী করলেও অপহৃতরা কোন মুক্তিপণ দেননি,অপহরণ চক্রে রোহিঙ্গা নেই সবাই স্থানীয়।পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেছে।আমরা পাহাড়ে ড্রোন উড়িয়ে দুর্বৃত্তদের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করেছি। দিনরাত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছি।অবশেষে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীদের ছেড়ে দেয়।

তবে ফেরত আসা নুরুল আবছার জানিয়েছেন,অপহরণকারি চক্রের সদস্যের মধ্যে রোহিঙ্গা রয়েছে।পুলিশ পাহাড়ে অভিযান চালানো শুরু করলে তাদের অন্য পাহাড়ে নিয়ে যায়।এই সময় আবছার সহ ২ জনকে আটকে রেখে ৬ জনকে টাকা আনতে ছেড়ে দেয়।

ওই সময় অপহরণকারিরা জানান রাতের মধ্যে টাকা না দিলে ২ জনকে মেরে ফেলা হবে। যে ৬ জনকে ছেড়ে দেয়া হয় তারা ঘরে এসে সকলের পরিবার থেকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আবার পাহাড়ে যায়। টাকা পাওয়ার পর এদের ছেড়ে দেয়া হয়।

ফেরত আসা মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, অপহরণকারিরা সশস্ত্র এবং বেশিরভাগ মুখোশ পরিহিত। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী রয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আরো জানান, অপরাধীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলমান থাকবে, এই চক্রের সদস্যরা মত কৌশল অবলম্বন করুক সনাক্ত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content