অপরাধ-আইন-আদালত

জুলাই যোদ্ধা’ নাকি মামলাবাণিজ্যের মুখোশ?তাহরিমা গ্রেফতার: ৫০ কোটি টাকার অভিযোগ রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত

  প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৯:৫৯:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।একটি রাষ্ট্র যখন আন্দোলনের নামে অপরাধকে আশ্রয় দেয়,তখন সেখানে ন্যায়বিচার কেবল শব্দ হয়ে পড়ে।‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে পরিচিত তাহরিমার গ্রেফতার সেই নির্মম বাস্তবতাকেই সামনে এনে দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে আসা অভিযোগ যদি সত্যের কাছাকাছিও হয় তবে এটি কেবল একজন ব্যক্তির অপরাধ নয়—এটি আইনের শাসন,রাজনৈতিক নৈতিকতা এবং নাগরিক নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ কাঠামোর ইঙ্গিত।

অভিযোগের প্রকৃতি: বিচ্ছিন্ন নয়,কাঠামোগত

তাহরিমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সাধারণ কোনো আর্থিক অনিয়ম নয়।অভিযোগের ধরন অনুযায়ী এটি পড়ে—

মামলাবাণিজ্য (Penal Code 1860-এর 211 ও 385 ধারা সংশ্লিষ্ট)

চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন (ধারা 383–386)

মানহানির হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়

ডিজিটাল ব্ল্যাকমেইল (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন)

অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (ধারা 120B)

আইনি বিশ্লেষণে স্পষ্ট—এগুলো প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আন্দোলনের পরিচয়: ঢাল না দায়?

আইন কোথাও বলে না যে আন্দোলনকারী হলেই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে।বরং সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান।

তাহরিমার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর প্রশ্নটি এখানেই—তিনি কি আন্দোলনের নৈতিক পুঁজি ব্যবহার করে একটি ভয়ভিত্তিক অর্থ আদায়ের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন?

যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়,তবে এটি আন্দোলনের সঙ্গে প্রতারণা, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে অপরাধ।

৫০ কোটি টাকার অভিযোগ: অলীক না পরিকল্পিত?

৫০ কোটি টাকা কোনো আকস্মিক লেনদেন নয়। এই অঙ্ক ইঙ্গিত দেয়—

দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন

একাধিক ভুক্তভোগী

প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা

এবং সম্ভবত নেপথ্যের সহায়তা

এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু তাহরিমাকে গ্রেফতার করা নয়, বরং প্রশ্ন তোলা—

> কে বা কারা তাকে এই ক্ষমতা দিল?
কোন প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক ছায়া তাকে এতদূর আসতে সাহায্য করল?

‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ দাবি: কতটা গ্রহণযোগ্য?

বাংলাদেশে ‘আমি ফাঁসানো’—এই বয়ান পুরোনো। কিন্তু আইন আবেগে নয়, প্রমাণে চলে।

যদি অভিযোগ মিথ্যা হয়—

ভুক্তভোগীরা কেন লিখিত অভিযোগ দিলেন?

ডিজিটাল প্রমাণ কোথা থেকে এলো?

তদন্ত কেন এতদূর এগোল?

এগুলো রাজনৈতিক স্লোগানে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সবচেয়ে ভয়ংকর দিক: ন্যায়বিচারের বিশ্বাস ভাঙন

যদি আন্দোলনের পরিচয় ব্যবহার করে মামলা দিয়ে মানুষকে জিম্মি করা যায়, তবে সাধারণ নাগরিকের জন্য আদালত পরিণত হয় আতঙ্কের স্থানে।

এটি Rule of Law নয়, Rule of Fear।

উপসংহার: ব্যক্তির বিচার নয়, ব্যবস্থার আত্মশুদ্ধি দরকার

তাহরিমা নির্দোষ হলে আদালত তা প্রমাণ করবে—এটাই আইন।
কিন্তু দোষী হলে শাস্তি হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক, যেন ভবিষ্যতে কেউ আন্দোলন, রাজনীতি বা আদর্শকে অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার সাহস না পায়।

রাষ্ট্র এখন এক পরীক্ষার মুখে—

> আইন কি পরিচয়ের কাছে হার মানবে, নাকি পরিচয়কে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরই ঠিক করবে,বাংলাদেশ আইনের রাষ্ট্র—নাকি মুখোশের রাষ্ট্র।

আরও খবর

Sponsered content