আন্তর্জাতিক

জি-৭ জোটে সম্মেলনে ৮টি দেশের প্রধান আমন্ত্রিত অতিথি

  প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২৩ , ৩:১৩:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।জি-৭ জোটে সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ৮টি দেশকে অতিথি হিসেবে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। (১৯ মে) জাপানের হিরোশিমায় শুরু হয়েছে এই সম্মেলন।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি বলছে, জি-৭ যদি কোনও নৈশভোজ হতো,তাহলে হয়তো নিমন্ত্রিত অতিথিরা খাবারের প্লেট ও চামচ খোঁজাখুঁজিতেই ব্যস্ত থাকতেন।ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কার ভাগে কতটুকু এলো,তা নিয়েই যেন সব দেশ ব্যস্ত।এদিকে সম্মেলনের বেশিরভাগ আলোচনা এমন দুই দেশকে নিয়ে,যাদের কেউই সম্মেলনটির অতিথি তালিকায় নেই।দেশ দুটি রাশিয়া ও চীন।

মূলত জি-৭ হলো অর্থনীতিতে শীর্ষ শক্তিধর ৭ দেশের একটি জোট।জোটটির সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র,জাপান, যুক্তরাজ্য,ফ্রান্স,জার্মানি,কানাডা ও ইতালি।সদস্য না হলেও সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।তবে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশকে অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ করে জোটটি।

তবে অর্থনৈতিক শক্তি হ্রাস পাচ্ছে জি-৭ জোটের।১৯৯০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি থাকতো এই ৭ দেশের হাতে,এখন তা নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে।তাই মিত্র তৈরির দিকে জোটভুক্ত দেশগুলো ঝুঁকছে বলে মনে করছেন অনেকে।ধারণা করা হচ্ছে,এ কারণেই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে অস্ট্রেলিয়া,ভারত,ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি দেশকে সম্মেলনে যোগদানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কিশিদা।

এছাড়া,গত ১৮ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ১৬টি দেশ সফর করেছেন কিশিদা।সফর করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত,আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ।মূলত চীনা ও রুশ সাহায্য ছাড়াও যে বিকল্প পথ খোলা আছে তা প্রমাণের উদ্দেশ্যেই ছিল এই সফর।

একটু খেয়াল করলে দেখা যায়,সম্মেলনের নিমন্ত্রিতরা এশিয়া,আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশ। আবার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে মিশ্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে দেশগুলোর।

রাশিয়াকে ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া

জি-৭ সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্যই হলো মস্কোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা।স্পষ্টতই সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন কিশিদা।তবে এ নিয়ে তাকে পোহাতে হবে বেশ কিছু প্রতিকূলতা।

আগ্রাসনের কারণে বারবার মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও বহাল রাখতে বিভিন্ন দেশকে উৎসাহিত করে চলেছে জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলো।সম্মেলনে বিভিন্ন দেশকে নিমন্ত্রণের এটি অন্যতম কারণ হলেও তা কতটা ফলপ্রসূ হবে এ নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।যেমন আমন্ত্রিত দেশ ভারত কখনোই রাশিয়ার এমন পদক্ষেপকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করে না।সুতরাং পশ্চিমাদের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে নারাজ ভারত।

এদিকে যুদ্ধের কারণে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তে থাকা দাম নিয়ে শঙ্কিত উন্নয়নশীল দেশগুলো।রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে কৃষ্ণ সাগরের শস্যচুক্তি থেকে দেশটির সরে যাওয়া নিয়েও ভয়ে আছে দেশগুলো,কেননা এতে ইউক্রেনীয় শস্য পাওয়া বন্ধ হবে এবং এর মাধ্যমে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

তবে এ ছাড়া রয়েছে বেশ কিছু বিষয়।রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ভিয়েতনামের।দেশটির অস্ত্রের প্রায় ৬০ শতাংশ ও সারের প্রায় ১১ শতাংশই আসে রাশিয়ার কাছ থেকে। আবার ইন্দোনেশিয়াও রাশিয়ার ওপর খুব নির্ভরশীল না হলেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলে।তবে দেশটির অস্ত্র ও আমদানির উল্লেখযোগ্য অংশ আসে মস্কো থেকে।সুতরাং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই প্রয়াস বিফল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চীনকে প্রতিহত করা:-

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর ঘিরে যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে তা নিয়ে সংকটের আশঙ্কা করছে জোটভুক্ত দেশগুলো। এ কারণে চীনকে প্রতিহত করতে উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।

তবে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বেশ প্রভাবশালী অবস্থায় রয়েছে চীন।তাই রাশিয়ার চেয়েও যেন চীনকে চ্যালেঞ্জ করা বেশি কঠিন বিষয়।চীনা পণ্যের ওপর নির্ভর করে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ।এ নিয়ে সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউরোপকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ চীনের ঋণে জর্জরিত অবস্থায় রয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও অনেক দেশ চীনের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার।তাই এই ক্ষেত্রেও জি-৭ সম্মেলনে চীনবিরোধী অবস্থান নেওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।

আরও খবর

Sponsered content