সারাদেশ

জমি অধিগ্রহণে আরডিএ’র বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ

  প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:২০:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ সুমন, রাজশাহীঃ- বর্তমানে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বাজেটের কাজ চলছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অধিনে। সরকারের এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে,জমি অধিগ্রহণ, একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর চত্ত্বর নির্মান, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী পার্ক সংস্কার, ফ্লাইওয়ারের সাথে নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস পযর্ন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ। বিগ বাজেটের এ কাজের শুরু থেকেই নেয়া হয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয়। এ কাজে প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে সরকারের সাথে প্রতারণা। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহন থেকে শুরু করে সব কাজেই।

অভিযোগ রয়েছে একাধিকবার প্রকল্প সংশোধন করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সরকারের লাখ লাখ টাকা। দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের টাকা পকেটে ভরা হলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৭ জুন নাটোর রোড থেকে (রুয়েট) রাজশাহীর বাইপাস পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। একনেকের সভায় ১২.১৭৭১ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমোদন পায়। এই জমি অধিগ্রহণে বরাদ্দ হয় ২৭ কোটি ১ লাখ ৭৮হাজার টাকা।

কিন্তু আরডিএ কর্তৃপক্ষ মাত্র ০.৮২৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে। যার ব্যয় হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ টাকা। অবশিষ্ট থাকে ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা। মূলত এখন থেকে দুর্নীতির শুরু। রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে একের পর এক প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। গত ৫ বছর আগে জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্প শেষ হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্প সমাপ্ত হলেও কাগজপত্র জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়নি। আরডিএ-এর জমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের অসংগতি পাওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম উল্লেখ করে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে আরডিএ চেয়ারম্যানকে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের নয়ছয় হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে তার কোনো কাগজপত্র নেই।

রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) সাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ৬.১২ হেক্টর (১৫.১১৬৪ একর) ও বাজেট অনুমোদন ২২ কোটি ৫৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ০৪/১৩-১৪ নং এল.এ অধিগ্রহণ করা হয় ৪.২৩২৫ একর ভূমি এবং ব্যয় হয় ১৮ কোটি ৮৯লাখ ৪৫হাজার ৯২ টাকা। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোডে ২৩ কোটি ৯২ লাখ ৫৪ হাজার ৯শ’ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করা হয়, যার প্রশাসনিক কোন অনুমোদন পত্র পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পের কার্যক্রম ৫ বছর আগে শেষ হয়েছে।

নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের অবশিষ্ট ২৩ কোটি ৯২ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৭ টাকা ৮৮ পয়সা সমন্বয়/ফেরত প্রদানের জন্য বলা হয়। কিন্তু দেখা যায় সংশোধিত প্রকল্পের জন্য ৫৬ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার টাকার বাজেট অনুমোদন রয়েছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত টাকার কোনো কাগজপত্র নেই। বাজেট বরাদ্দ থাকার পরেও ০৪/১৩-১৪ নং এল.এ কেসে অতিরিক্ত জমাকৃত অর্থ হতে সমন্বয়/ফেরত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে রুয়েট থেকে বাইপাস পর্যন্ত চারলেন রাস্তা, ওভারপাস, ড্রেন, কালভার্ট, রাস্তা ও ফ্লাইওভারে লাইটিং ও টিএনটি লাইন, গ্যাস সংযোগ লাইন স্থাপন সম্পন্ন কাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ না হলেও গত জুলাই মাসে পুরো কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে দুটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

বাস্তবে এ রাস্তার কাজ এখনো ৫০ভাগ অসমাপ্ত। তারপর আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক কাজ সম্পন্নের প্রতিবেদন দিয়েছেন।

একই সাথে ৫বছর আগে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন দেখানো হলেও এখনো অধিগ্রহণকৃত জমির বাড়িঘর ভাঙ্গা শেষ হয়নি। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে চলছে রাজশাহীর আরডিএ’র উন্নয়নমুলক কাজ।

এব্যাপারে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক স্পষ্টভাষায় জেলা প্রশাসকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়নি বলে রাস্তা নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত জায়গা ভাঙ্গতে পারিনি। তিনি জেলা প্রশাসকের চিঠির বিষয়ে বলেন, এধরনের কোনো চিঠি আমি দেখিনি বা পাইনি।

তবে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, আরডিএ কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণে পুরোটাই নয়ছয় করেছে। যার প্রতিবেদন আমরা দাখিল করেছি। আরডিএ কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে সব কাজেই সরকারের সাথে প্রতারণা করছে।

এব্যাপারে আরডিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো: রহমাতল্লাহ জেলা প্রশাসকের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই চিঠি নিয়ে কাজ চলছে, দ্রুতই জবাব দেয়া হবে। তবে জমি অধিগ্রহণে নয়ছয় হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

জানতে চাইলে আরডিএর চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের প্রেরিত চিঠির বিষয়ে কিছু জানি না। চেয়ারম্যানের নামে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে তাহলে কেনো জানেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব চিঠি দেখার সময় আমার থাকে না। জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

আরও খবর

Sponsered content