প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৩:০৯:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে “টাকা” নতুন কোনো বিষয় নয়—বরং এটি বহুদিন ধরেই ক্ষমতা, প্রভাব ও অস্বচ্ছতার প্রধান নিয়ামক।নির্বাচনের আগে কে কত টাকা খরচ করল,সেই টাকা এল কোথা থেকে,আর শেষ পর্যন্ত কার স্বার্থ রক্ষা হলো—এই প্রশ্নগুলো সাধারণত অন্ধকারেই থেকে যায়।ঠিক এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা–৯ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ডাঃ তাসনিম জারার প্রকাশ্য ফান্ডরেইজিং উদ্যোগ রাজনীতির সেই অস্বস্তিকর বাস্তবতাকে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।

মাত্র ২২ ঘণ্টায় প্রায় ৩৭ লাখ টাকা সংগ্রহ—এটি শুধু একটি অঙ্ক নয়,এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা।এই বার্তাটি স্পষ্ট: নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ আসতে পারে সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও,গোপন দাতা কিংবা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দয়া ছাড়াই।
ডাঃ তাসনিম জারা যে পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করছেন,তা বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির ঠিক বিপরীত। কোনো ক্যাশ নেই,একাধিক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নেই,কোনো অস্পষ্টতা নেই—সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে,অডিটযোগ্য এবং নির্বাচন কমিশন যাচাইযোগ্য।প্রশ্ন উঠছে—যদি একজন প্রার্থী এটি করতে পারেন,তবে বাকিরা কেন পারেন না?
বড় টাকার রাজনীতির বিরুদ্ধে নীরব চ্যালেঞ্জ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,এই উদ্যোগ মূলত “বড় টাকার রাজনীতি”-র বিরুদ্ধে এক ধরনের নীরব কিন্তু কার্যকর চ্যালেঞ্জ।বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে—নির্বাচনী ব্যয় আইনি সীমার বহু বাইরে চলে যায়, যার ফল ভোগ করে রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজ।নির্বাচনের পর সেই খরচ ওঠাতে গিয়ে শুরু হয় লুটপাট,দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার।
ডাঃ তাসনিম জারার মডেল সেই চক্র ভাঙার কথা বলে। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—নির্ধারিত ব্যয়ের সীমার বাইরে এক টাকাও নেওয়া হবে না,আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেই ফান্ডরেইজিং বন্ধ।এই ঘোষণাই অনেক পেশাদার রাজনীতিকের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনপ্রিয়তা বনাম রাজনৈতিক জবাবদিহিতা
সমালোচকরা বলছেন,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয়তা কি নির্বাচনী রাজনীতির যথেষ্ট ভিত্তি? প্রশ্নটি অমূলক নয়। কিন্তু আরও বড় প্রশ্ন হলো—এতদিন যে রাজনীতি টাকা ও পেশিশক্তির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল,তা কি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে?নাকি নাগরিকদের আরও দূরে সরিয়েছে?
বাস্তবতা হলো,ডাঃ তাসনিম জারার ফান্ডরেইজিং অন্তত একটি জবাবদিহিমূলক কাঠামো সামনে এনেছে।কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হবে—তা জানানো হবে,হিসাব প্রকাশ করা হবে,নির্বাচন কমিশনে নথি জমা দেওয়া হবে—এই প্রতিশ্রুতি রাজনীতিতে এখনো বিরল।
নির্বাচন কমিশনের জন্যও একটি পরীক্ষা
এই উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনের জন্যও একটি নৈতিক পরীক্ষা। কমিশন কি শুধু কাগজে ব্যয় সীমা নির্ধারণ করেই দায়িত্ব শেষ করবে,নাকি এমন স্বচ্ছ উদ্যোগগুলোকে নজির হিসেবে ব্যবহার করে বাস্তব তদারকি জোরদার করবে?যদি কমিশন সত্যিই সমান মাঠ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে,তবে এই ধরনের প্রকাশ্য হিসাবভিত্তিক রাজনীতিকে উৎসাহ দেওয়ার বিকল্প নেই।
উপসংহার
ডাঃ তাসনিম জারার ফান্ডরেইজিং উদ্যোগ তাঁকে নির্বাচনে জিতিয়ে দেবে কি না—তা ভোটাররাই ঠিক করবেন। কিন্তু এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়,এই উদ্যোগ বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে:
রাজনীতি কি জনগণের টাকায়,জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে করা সম্ভব—নাকি অন্ধকারই এর স্বাভাবিক আশ্রয়?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে শুধু একজন প্রার্থীকে নয়, পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই।
















