চাকরির খবর

ছুটির মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও বিদেশে অবস্থানরতদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ

  প্রতিনিধি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১২:৫৯:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিভাগীয় মামলা চালু হলেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ হবে।আর মামলার পরও ভেতন-ভাতা উত্তোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে।এছাড়া ছুটির মেয়াদ উত্তীর্ণের পরও বিদেশে অবস্থানরতদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছে।সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় বৈঠক থেকে এসব নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।সেখানে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলাগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এছাড়া এখন থেকে দাপ্তরিক প্রয়োজনে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী।

সূত্র আরও জানায়,ওই বৈঠকে সার্বিক রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।সেখানে দেখা গেছে অর্থবছরের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।এর মধ্যে প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। প্রথম দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় কমছে ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্বের বক্তব্যে সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন,যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ডিজারশন সংক্রান্ত বিভাগীয় মামলা চালু হওয়ার পরেও তারা বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করতে থাকে,এ বিষয়ে তদারকি করা প্রয়োজন এবং ডিজারশন সংক্রান্ত বিভাগীয় মামলা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বেতন-ভাতাদি বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ডিডিওকে নির্দেশ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।’

সূত্রমতে,বিভাগীয় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় ওই বৈঠকে।সেখানে দেখা গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর আওতাধীন বোর্ড প্রশাসন শাখায় ১১৬টি বিভাগীয় মামলা চলছে।এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বিভাগীয় মামলার মধ্যে কর প্রশাসনে ১টি,শুল্ক বিভাগে ২টি,সঞ্চয়পত্র বিভাগে ২টি। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর আওতাধীন বোর্ড প্রশাসন শাখায় ২টি বিভাগীয় মামলা অনিষ্পত্তি অবস্থায় আছে।শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসনের এক নম্বর শাখায় ৯টি অনিষ্পত্তি বিভাগীয় মামলা আছে।এর মধ্যে ছয় মাসের নিচে মামলা ৫টি,ছয় মাসের ঊর্ধ্বে ২টি এবং এক বছরের ঊর্ধ্বে ২টি।শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন ৩ নম্বর শাখায় ২৫টি অনিষ্পত্তি মামলা আছে।এর মধ্যে ছয় মাসের নিচে ২টি,ছয় মাসের ঊর্ধ্বে ১১টি এবং এক বছরের বেশি সময় ১২টি আছে।এছাড়া প্রশাসন চার শাখায় ১১টি,কর প্রশাসন শাখা এক নম্বরে ৩টি,শাখা-২ এ মামলা ৫টি এবং শাখা-৪ এ আছে ২৫টি। এছাড়া প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল মামলা আছে ১৯টি।

তবে এই মামলাগুলোর মধ্যে যেগুলো এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে সেগুলো কেইস টু কেইস ভিত্তিতে উল্লেখ করে প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। জানা গেছে,সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাও সংস্থার নিয়মবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়েন।পরবর্তী সময়ে এটি ধরা পড়ে।ফলে এ সংস্থার ৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যক্রম চলমান আছে।আরও জানা গেছে মহাপরিচালকের এখতিয়ারধীন ৪টি বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় বিভাগীয় মামলা হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। এখন তাদের এই সুবিধা বন্ধ করা হবে এমন নির্দেশনা পাওয়া গেছে।এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে তদারকি করা হবে।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর আওতাধীন বোর্ড প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ছুটি,প্রেষণে বা লিয়েন নিয়ে দেশে বা বিদেশে চাকরিতে আছেন।কেউবা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন।বৈঠকে ছুটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দেশে ফিরে না আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান,জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরে তল্লাশি দিয়ে দেখা গেছে ছুটি উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বিদেশে অবস্থান করছেন এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন এমন কর্মকর্তা বা কর্মচারী পাওয়া যায়নি। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের কারও সন্ধান পাওয়া গেলে নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্রমতে,বৈঠকে ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।সেখানে এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।সেখানে দেখা গেছে শুধু আগস্ট মাসে মামলা হয়েছে ৬১১টি। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৪৮টি এবং অনিষ্পত্তি অবস্থায় আছে ৭৯৪টি।বৈঠকে এসব মামলা নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content