প্রতিনিধি ২৩ অক্টোবর ২০২২ , ১:১৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।একসময় নায়ক ফারুকের ছবির প্রতীক্ষায় থাকতেন চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ। কবে মুক্তি পাবে ‘মিয়া ভাইর নতুন ছবি তা নিয়ে আগ্রহের থাকত উত্তুঙ্গে।চলচ্চিত্রের পর্দায় নেই বহু বছর, তবু এখন তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন অগুণতি ভক্ত-অনুরাগী। অপেক্ষা তার রোগমুক্তির, প্রতীক্ষা তার দেশে ফেরার।চলচ্চিত্রের মিয়া ভাইখ্যাত অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক দশ মাসের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঢাকার এই সংসদ সদস্যের শারীরিক অবস্থার কখনও উন্নতি, আবার কখনও অবনতি হয়েছে কয়েক মাস ধরে। ছিল নানা শঙ্কাও। তবে কখনও হাল ছাড়েননি তার পরিবারের সদস্যরা। চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা।

ফারুকের চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে বিক্রি করতে হয়েছে প্রায় পনেরো কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট।ব্যাংক অ্যাকাউন্টও শূন্য হয়েপাশাপাশি স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করতে হয়েছে।জনপ্রিয় এই অভিনেতা চার মাস ছিলেন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। সেমি কোমায় কেটেছে আরও চার মাস। মাঝে শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তাকে লাইফ সাপোর্টেও রাখা হয়েছিল। সে সময় মৃত্যুর গুজবও রটেছিল! তবে এখন ফারুকের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। একটু একটু করে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। পাঁচ মাস আগে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। তার সর্বশেষ অবস্থা জানতে কথা হয় তার স্ত্রী ফারহানা ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফারুকের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।
এখন নিজের পছন্দের সব ধরনের খাবার খেতে পারছেন।রক্তচাপ ও পূর্বের অন্যান্য যে সমস্যা ছিল, তাও এখন নিয়ন্ত্রণে। স্নায়ুতন্ত্রে নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা আগে ছিল না। চিকিৎসকরা বলেছেন, এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালাতে হবে।’ ফারুক কবে নাগাদ পুরোপুরি সুস্থ হবেন তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারছেন না চিকিৎসকরা। তবে ফারহানা আশাবাদী, দ্রুতই সুস্থ হবেন। তিনি বলেন, ‘কাজপাগল মানুষটি কাজ করতে চায়। সংসদীয় এলাকার অনেক কাজকর্ম জমা পড়ে আছে। আশা করছি, দেশে ফিরেই কাজগুলো করবেন। তার জন্য দোয়া করবেন সবাই।’হাসপাতালে কীভাবে সময় কাটছে ফারুকের- জানতে চাইলে ফারহানা পাঠান বলেন, ‘ইবাদত বন্দেগি করছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে চোখের পানি ফেসারাক্ষণই চিকিৎসকরা কেবিনে আসা-যাওয়া করছেন। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। দুই সন্তানকে ঢাকায় রেখে এক বছর ধরে একাই হাসপাতালে আছি। সন্তানদের জন্য সবসময় ফারুকের মনটা অস্থির থাকে। ভিসা জটিলতায় সন্তানরা তার বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারছে না।
টুরিস্ট ভিসা পেলেও একটু দেখে যেতে পারত। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।’ফারহানা জানান, ‘সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথে চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল, সে জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। সন্তানরা দেশে থেকে তার বাবার জন্য টাকা পাঠাচ্ছে। সহায়-সম্পত্তি সব চলে গেলেও আফসোস নেই।
আপনাদের মিয়া ভাই দ্রুত সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসুক, এটাই একমাত্র চাওয়া। ফারুক তো আমার একার নয়, পুরো বাংলাদেশের। দেশে সবাই তার অপেক্ষায় আছেন।তিনি আরও জানান, ‘চিকিৎসকরা ফারুককে যখন আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দেন ওই সময় আমাদের হাত একেবাঅনেক চেষ্টা করে করোনার কারণে উপযুক্ত দামে ফ্ল্যাটও বিক্রি করতে পারছিলাম না।
তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফারুকের চিকিৎসার জন্য প্রথমেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তার দেওয়া টাকা দিয়েই আইসিইউর প্রথম মাসের বিল পরিশোধ করেছি। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’ফারুকের একমাত্র ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ বলেন, ‘দীর্ঘদিন আব্বু সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে বারিধারার দুটি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি। সেখানে আমরা থাকিনি। এর আগেই বিক্রি করতে হলো। আব্বু হাসপাতালে বেশিদিন থাকলে আরও টাকা লাগতে পারে। স্বজনদের কাছ থেকেও দেনা করেছি। আব্বুর সুস্থতার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব। সরকারও সহযোগিতা করেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
যেটুকু সহযোগিতা পেয়েছি, তাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বিপদের সময় তিনি আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।’শরৎ বলেন, ‘আব্বুর সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়। তিনি আমাদের দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন। তার রোগমুক্তির জন্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে দোয়া চাচ্ছি। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে আট বছর ধরে চিকিৎসাসেবা নেন ফারুক। সর্বশেষ ২০২০ সালে অক্টোবর মাসের শেষদিকে চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসেন তিনি। এর কিছুদিন পর করোনায় আক্রান্ত হন।
চিকিৎসকেরা আগেই বলে দিয়েছিলেন, পুরোনো বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা থাকায় মাঝে মাঝে ফারুকের শরীর খারাপ হতে পারে। সে জন্য তিন মাস পরপর রুটিন চেকআপে থাকতে হবে।গত বছরের মার্চে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান ফারুক।

















