সম্পাদকীয়

গ্রেফতারের রাজনীতি: রাষ্ট্র কি এখন ভয় দেখানোর যন্ত্র?

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৪:৩২:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।বাংলাদেশে আজ গ্রেফতার আর আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়—এটি পরিণত হয়েছে একটি রাজনৈতিক অস্ত্রে।নারী,নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি,বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ—কেউই আর রেহাই পাচ্ছেন না।আইন প্রয়োগের নামে যে ধারাবাহিক গ্রেফতার চলছে,তা ন্যায়বিচারের নয়, বরং ভয়,দমন ও প্রতিশোধের রাজনীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

হিজলার অফেনুর মেম্বার,মুন্না মেম্বার,শ্রমিকলীগের ফারুক এবং মেমানিয়া ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসুদকে গ্রেফতারের ঘটনা এই বাস্তবতাকেই আরও স্পষ্ট করেছে।প্রশ্ন হলো—এই গ্রেফতারগুলো কি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ,গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে হয়েছে? নাকি পরিচয়ই অপরাধে পরিণত হয়েছে?

আইনগত প্রশ্ন: সংবিধান কোথায় দাঁড়িয়ে?

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করে এবং ৩২ অনুচ্ছেদ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জীবন সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়।পাশাপাশি ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) স্পষ্টভাবে বলে—গ্রেফতার কোনো শাস্তি নয়,এটি কেবল তদন্তের একটি সীমিত উপায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে,গ্রেফতারই হয়ে উঠেছে শাস্তির প্রথম ধাপ।

আরও ভয়াবহ হলো—বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনা ও আইনি ব্যতিক্রম উপেক্ষা করা হচ্ছে,যা সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশনার পরিপন্থী। এটি সরাসরি ক্ষমতার অপব্যবহার।

মানবাধিকার লঙ্ঘন: রাষ্ট্র কি আন্তর্জাতিক দায় এড়াতে পারবে?

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদ (ICCPR)-এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র।এই সনদ অনুযায়ী,নির্বিচার গ্রেফতার ও আটক গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। কাউকে রাজনৈতিক পরিচয় বা সংগঠনের নামের কারণে গ্রেফতার করা হলে তা স্পষ্টভাবে Arbitrary Arrest হিসেবে গণ্য হয়।

বিশেষ করে নারী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আরও বেশি।এসব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ নয়, বরং প্রতিহিংসা প্রয়োগ হলে রাষ্ট্র নিজেই অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়।

দায় কার?

এই গ্রেফতারগুলোর দায় কেবল মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নয়। এর দায় প্রশাসন,রাজনৈতিক নির্দেশদাতা এবং নীরব দর্শকেরও।কারণ আইনের শাসন ভাঙে একদিনে নয়—ভাঙে ধারাবাহিক অন্যায়কে স্বাভাবিক করে তোলার মাধ্যমে।

আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি—

অপরাধ থাকলে বিচার হোক,গ্রেফতার নয় আগে প্রমাণ।

রাজনৈতিক পরিচয় নয়,আইন হোক একমাত্র মানদণ্ড।

নারী,অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রে মানবিক ও আইনসম্মত আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।

এই গ্রেফতারগুলোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।একই সঙ্গে দাবি করছি—স্বচ্ছ তদন্ত,অবিলম্বে বিচারিক তদারকি এবং নিরপরাধদের মুক্তি।অন্যথায় ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে—এই রাষ্ট্র একসময় তার নাগরিকদের রক্ষা করেনি,বরং ভয় দেখাতেই ব্যস্ত ছিল।

আরও খবর

Sponsered content