রাজনীতি

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে-বিএনপি

  প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:৩২:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি।মেডিকেল বোর্ড সায় দিলেই যুক্তরাষ্ট্রে অথবা যুক্তরাজ্যে যাবেন তিনি।সেখানে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনসহ জটিল চিকিৎসাগুলো করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সমন্বয়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন,আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।যুক্তরাজ্যে নেওয়া হলে ৮ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে।যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়োজন ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা ফ্লাইং আওয়ার।কাজেই এই যাত্রার জন্য তাঁর শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তাই কিছুটা সময় লাগবে।বেশকিছু জটিল চিকিৎসা করাতে অনেকটা সময় তাঁকে বিদেশে থাকতে হবে।’

বিমানে লম্বা সময় ভ্রমণের মতো উপযুক্ত শারীরিক সুস্থতা না থাকায় তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।এজন্য কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা চলছে।ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানা গেছে।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. আল-মামুন বলেন,খালেদা জিয়ার জন্য দেশের বাইরে থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনা হবে।বোর্ডের আরেকজন সদস্য বলেন,কাতারের কাছ থেকে বিমান আনার চেষ্টা চলছে।নানা পর্যায়ে কথাবার্তা চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরেকটু ফিট হলেই দিন,তারিখ ঠিক করা হবে।খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ছাড়াও বেশ কয়েকটি জটিলতা রয়েছে।এসব বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’

এই চিকিৎসক বলেন,আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন করা।তবে এর আগে তাঁর পুরো শরীর চেকআপ করে অন্য জটিলতাগুলো কমিয়ে আনতে হবে। প্রথমেই লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।তাই শারীরিক অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন এখন কেমন আছেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন,আগের চেয়ে ভালো আছেন।প্রতিদিন চিকিৎসকরা নিয়ম করে বাসায় গিয়ে ফলোআপ করছেন।বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা আসছেন।তিনি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন।তাঁর ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক নিয়মে হচ্ছে।স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারগুলো সঠিক মাত্রায় রয়েছে।তবে বয়সের কারণে মাঝেমধ্যেই কিছু জটিলতা দেখা দেয়।’

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।গত জুনে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়।পরে তাঁর হৃদযন্ত্রে বসানো হয় পেসমেকার।

চিকিৎসা শেষে গত ২ জুলাই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সব শেষ গত ৮ জুলাই হঠাৎ প্রেশার ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন।সেই থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে তাঁর লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক।

চার বছর আগে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছে।গত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও এভারকেয়ার হাসপাতালে দেড় বছরেরও বেশি সময় ভর্তি থাকতে হয়েছে তাঁকে।

গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও শেখ হাসিনা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিনই খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে সরকার।

চিকিৎসকরা জানান,৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস,হৃদরোগ,ডায়াবেটিস,আর্থ্রাইটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।

এদিকে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় পৌঁছেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন পৌঁছেছেন।বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় প্রায় এক দশক আগে মারা যান। তার পর থেকে শর্মিলা রহমান সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে থাকছেন।সেখানে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সপরিবারে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।এর আগে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সব শেষ ঢাকায় এসেছিলেন শর্মিলা রহমান সিঁথি।সে সময় তিনি অসুস্থ শাশুড়ির শয্যাপাশে ছিলেন।

আরও খবর

Sponsered content