প্রতিনিধি ২ মে ২০২৩ , ১:১৪:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন,বাংলাদেশ পুলিশের সম্মান নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি না খেলে।সরকার আমাদের ইউনিফর্ম দিয়েছে,মর্যাদা দিয়েছে।সেই মর্যাদা কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।কোনো পুলিশ সদস্যের অন্যায়-অনিয়মের দায় কখনই বাহিনী নেবে না।
মঙ্গলবার (২ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। সম্প্রতি নিউমার্কেট অগ্নিদুর্ঘটনায় দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদের স্বীকৃতি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়।ডিএমপির ৩৩ পুলিশ সদস্য পুরস্কার পান।
তিনি আরও বলেন,পুলিশ বাহিনীর সুনাম যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়,সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।ইউনিফর্ম পরে কেউ এমন কোনো কাজ করবেন না,যাতে ৩২ হাজার সদস্যের ফোর্সের সম্মানহানি ঘটে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন,ভবিষ্যতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তবে পুলিশ কখনো হারেনি। ১৯৭১ সালেও পুলিশ হারেনি, ভবিষ্যতেও হারবে না। ১৯৭১ সাল থেকেই পুলিশ জনগণের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
তিনি বলেন, ২০১২-১৩ সালে আগুন সন্ত্রাসের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা নির্যাতন চালানো হয়েছে, পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রাজশাহীতে হেলমেট দিয়ে থেতলে পুলিশ সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সেসময়ও পুলিশ পিছু হটেনি। দেশমাতৃকা রক্ষা করেছে।
তিনি আরও বলেন,২০১৫-১৬ সালের দিকে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হলি আর্টিজানে হামলা,সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ছিল টার্গেট।তখনও পুলিশ পিছপা হয়নি। বিশ্বব্যাপী পুলিশ যে কাজটা করতে পারেনি,বাংলাদেশ পুলিশ কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
মহামারির সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন,ওই সময় পিতা তার পুত্রের এবং পুত্র তার পিতার লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিল,দাফন করার মানুষ ছিল না।তখন পুলিশই দাফন-কাফনের কাজ করেছে।মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে।
তিনি বলেন,নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে পুলিশ যে মানবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে,যে মানবিক কাজটি করেছে,তা নতুন কিছু নয়।তা পুলিশের দায়িত্ব মাত্র।১৯৭১ সাল থেকেই পুলিশ সদস্যরা যে কোনো ধরণের ঝুঁকি নিতে পারেন।এর প্রমাণ নিউ মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড।
তিনি আরও বলেন,আমরা সিনিয়র অফিসার,আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে।আমার পুলিশ,আমার সহকর্মীদের উৎসাহিত করা,অনুপ্রেরণা,সাহস দেওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্য। কারণ তারা দেশমাতৃকা রক্ষায় সদা জাগ্রত।মুখে বাঁশি,মাথায় বিশাল কাপড়ের বস্তা নিয়ে বের হওয়ার ছবি সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে।এটি ডিএমপির মর্যাদা অনেক দূর নিয়ে গেছে।ডিএমপির সদস্যরা যা করেছেন,তা পুরস্কার দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়।তবে ভালো কাজের স্বীকৃতি এটি।এটি ম্যাসেজ। বাকি সদস্যরা যেন এটি বোঝেন,উৎসাহিত হন।পুলিশ সদস্যরা ভবিষ্যতে যারাই ভাল কাজ করবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,পুলিশের অবদান অনেক সম্মানিত নাগরিক অনুধাবন করতে পারেন না।আমরা কষ্ট পাই,দুঃখ পাই।কারণ চামড়া পোড়া গরমে পুলিশ সদস্যরা সারাদিন ডিউটি করেন।কিন্তু কোন ট্রাফিক পুলিশ ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে কয় টাকা নেন,তার নিউজ করেন, ছবি প্রকাশ করেন।সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব,পুলিশ অনেক ভাল কাজ করে,তা প্রচার করুন।পুলিশের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরুন,জনগণ যেন বুঝতে পারে।
তিনি বলেন, ডিএমপির ৩২ হাজার ফোর্সের মধ্যে ২-১ জন ছাড়া বাকি সদস্যরা নগরবাসীর সেবাদানে নিয়োজিত ও আত্মত্যাগে প্রস্তুত।২-১ সদস্যের অপকর্মের,অন্যায়ের দায়-দায়িত্ব পুলিশ কখনোই নেবে না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,কেউ যদি অন্যায় করে,পুলিশ বাহিনীর সম্মান মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়?এটা কি কেউ মেনে নেবেন?
উপস্থিত সদস্যরা সমস্বরে বলেন,না কখনো মেনে নেব না।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন,সম্প্রতি যত ঘটনা ঘটেছে তারমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পুলিশ সদস্যদের মানবিক ভূমিকা। পুলিশের ভূমিকা শুধু দেশ নয়,পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমি সেই মানবিক পুলিশ সদস্যদের প্রতি সেলুট জানাই।
তিনি বলেন,আমি অনুপ্রাণিত।সামনে নির্বাচন।আমরা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবো।আগুনের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব,মতপার্থক্য ভুলে কাজ করতে হবে।আমরা যাই করি,জনগণের জন্য কাজ করি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম (অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন,নিউ মার্কেটের আগুনের ঘটনার দিন যখন পায়ে হাঁটা যাচ্ছিল না,পানি জমেছিল,তখন পুলিশ সদস্যরা বস্তার পর বস্তা মালামাল বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।বিপদের মুহূর্তে আমরা কতোটা পাশে থাকি,তা গুরুত্বপূর্ণ।পুলিশকে দেখে অন্যান্য বাহিনী কিন্তু বসে থাকেনি। তারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছে।সহকর্মীদের যেকোনো শ্রমের মূল্য দিতে পুলিশ কমিশনার উন্মুখ।ব্যবসায়ীরা আমাদের প্রিয়জন, কারো আত্মীয়-স্বজন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন,পুলিশ সদস্যরা যেভাবে নিউ মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে এগিয়ে এসেছিলেন তা অভূতপূর্ব।সেদিন যদি পুলিশ মানবিক পুলিশিংয়ের ভূমিকা না রাখত,তাহলে হয়তো আমরা আরেকটা বঙ্গবাজারের মতো ক্ষতির অগ্নিকাণ্ড দেখতাম।
সিরিজ অগ্নিকাণ্ড কিসের আলামত- এমন প্রশ্ন রেখে হেলাল বলেন,আমরা এই সিরিজ অগ্নিকাণ্ড দেখতে চাইনা।মার্কেটে পাহারার ব্যবস্থা করেছি,পুলিশও সহযোগিতা করেছে।ঈদের পাঁচদিনে কোথাও কোনো মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটেনি।