রাজনীতি

‘আল্লাহ যখন ২১ আগস্টের মতো ৫ আগস্টও বাঁচিয়েছেন, ইউনূস পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ’ — শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৫:৪১:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,তার রাজনৈতিক জীবনে বারবার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র হলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে আছেন।২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং সাম্প্রতিক ৫ আগস্টের ঘটনাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “আল্লাহ যখন আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন,তখন এই জীবন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই নিবেদিত থাকবে।”

সম্প্রতি দলীয় এক ফোনালাপে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির দখলে’ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।তার ভাষায়,দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে নয়,বরং পরোক্ষ ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

‘ইউনূস পতন’ বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,শেখ হাসিনার বক্তব্যে ‘ইউনূস পতন’ শব্দবন্ধটি একটি প্রতীকী রাজনৈতিক বার্তা।এটি কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়,বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও নীতিগত কাঠামোর বিরুদ্ধেই তার অবস্থানকে স্পষ্ট করে।এই কাঠামোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের অভিযোগ—এটি নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে ‘অদৃশ্য শক্তি’ ও আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ধারণা প্রচার করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন,এই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা একদিকে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ‘গণতন্ত্র রক্ষার দল’ পরিচয় পুনঃস্থাপন করতে চাচ্ছেন,অন্যদিকে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার কৌশল নিয়েছেন।

২১ আগস্ট থেকে বর্তমান সংকট: রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে আওয়ামী লীগ বরাবরই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত রাজনৈতিক সন্ত্রাস হিসেবে তুলে ধরে।শেখ হাসিনার বক্তব্যে সেই স্মৃতির পুনরাবৃত্তি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে একটি ধারাবাহিকতা তৈরি করে—যেখানে অতীতের মতো আজও গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি মনে করেন।

তার বক্তব্যে ৫ আগস্টের প্রসঙ্গ যুক্ত হওয়া নতুন এক রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করেছে,যা দলের ভাষ্য অনুযায়ী, আবারও নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে ভয় ও চাপ সৃষ্টি করার ইঙ্গিত বহন করে।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বনাম ‘নৈতিক শাসন’ বিতর্ক
শেখ হাসিনা বলেন,“আজ যারা নৈতিকতার কথা বলছে, তারাই গণতন্ত্রের প্রশ্নে জনগণকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায়।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে,এটি মূলত সেই শ্রেণির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ,যারা নির্বাচনবিহীন বা সীমিত নির্বাচনের মাধ্যমে ‘টেকনোক্র্যাটিক’ বা ‘নৈতিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার ধারণা তুলে ধরে।

এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের পুরনো অবস্থানকেই পুনরায় সামনে আনে—রাষ্ট্রক্ষমতার বৈধতা কেবল জনগণের ভোট থেকেই আসতে পারে,অন্য কোনো বিকল্প গ্রহণযোগ্য নয়।

দলীয় রাজনীতিতে প্রভাব

শেখ হাসিনার এই বক্তব্য ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে এই বক্তব্য নেতাকর্মীদের জন্য এক ধরনের ‘রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা’ হিসেবে কাজ করছে।

একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,“এটি শুধু বক্তব্য নয়, এটি আগামী দিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের ইঙ্গিত।”

সম্ভাব্য রাজনৈতিক ফলাফল

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তিনটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়— ১. দলটি এখনো সংঘবদ্ধ ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক।
২. গণতন্ত্র প্রশ্নে কোনো আপস করবে না।
৩. ভবিষ্যৎ রাজনীতি হবে ‘ভোট বনাম বিকল্প ক্ষমতা কাঠামো’-এর দ্বন্দ্বে কেন্দ্রীভূত।

শেখ হাসিনার এই বক্তব্যকে অনেকেই আবেগঘন রাজনৈতিক ঘোষণা হিসেবে দেখলেও বাস্তবে এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক অবস্থান।অতীতের হামলা থেকে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট—সবকিছুকে এক সুতোয় গেঁথে তিনি আবারও নিজেকে ও তার দলকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একমাত্র শক্তি’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন।

আরও খবর

Sponsered content