ইসলাম ও জীবন

আল্লাহর নাম ও গুণাবলি (আসমাউল হুসনা ও সিফাত) অস্বীকার করা,মনগড়া ব্যাখ্যা করা বা সাদৃশ্য আরোপ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

  প্রতিনিধি ৮ অক্টোবর ২০২৫ , ৬:৫৪:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলার অসংখ্য সুন্দর নাম ও গুণাবলির বর্ণনা রয়েছে,যা তাঁর পরিপূর্ণতা ও মহত্ত্বের প্রমাণ বহন করে।এই নামগুলোর প্রতি আমাদের সঠিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে,যেমনভাবে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই নামগুলোর কোনো বিকৃতি,অস্বীকৃতি,মনগড়া ব্যাখ্যা বা সাদৃশ্য আরোপ করা যাবে না।

আল্লাহকে সুন্দর নামে ডাকার নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর সুন্দর নামে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি বলেন,আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নামসমূহ,সুতরাং সেসব নাম ধরেই তোমরা তাঁকে ডাকো।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮০)

এ ছাড়া তিনি বলেন,‘বলো,তোমরা তাঁকে আল্লাহ বলে ডাকো অথবা আর-রাহমান বলে ডাকো,যে নামেই ডাকো, তাঁর জন্য রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ।’(সুরা ইসরা, আয়াত: ১১০); ‘তিনি আল্লাহ,যিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে সুন্দর নামসমূহ’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত: ৮); এবং ‘তিনি আল্লাহ,স্রষ্টা,উদ্ভাবক,গঠনকারী; তাঁর জন্য রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ২৪)

আল্লাহ আরও বলেন,আর তাদেরকে বর্জন করো,যারা আমার নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে।তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শিগগিরই পাবে।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮০)

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন তাঁকে এমন নামে ডাকতে,যা কোরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই।যারা তাঁর নাম বিকৃত করে বা মনগড়া নামে ডাকে,তাদের জন্য শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহর নামে বাঁকা পথ:তিনটি ভুল
তাফসিরে আহসানুল বায়ানে বলা হয়েছে,আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে বাঁকা পথ অবলম্বন তিনভাবে হতে পারে:

১. নামের পরিবর্তন করা: মুশরিকরা আল্লাহর নাম বিকৃত করে মূর্তির নামকরণ করত।যেমন, ‘আল্লাহ’ থেকে ‘লাত’ এবং ‘আল-আযিয’ থেকে ‘উযযা’ নাম তৈরি করা।

২. মনগড়া নাম সংযোজন:এমন নামে আল্লাহকে ডাকা,যা তিনি নিজে দেননি বা হাদিসে উল্লেখ নেই।

৩. নাম কমিয়ে দেওয়া: শুধু একটি নির্দিষ্ট নামে (যেমন, শুধু ‘আল্লাহ’) ডাকা এবং অন্যান্য গুণবাচক নাম ব্যবহার না করা।(শাওকানি,ফাতহুল কাদির,২/৩২১,দারুল কুতুবিল ইলমিয়া,বৈরুত, ২০০৪)

অনেকে শুধু ‘আল্লাহ’ নামে ডাকেন এবং অন্য গুণবাচক নামে ডাকতে অনীহা প্রকাশ করেন।অথচ আল্লাহর রয়েছে এক শরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ সুন্দর নাম।

১. আর-রাহমান—পরম দয়ালু, যাঁর দয়া অসীম ও সর্বব্যাপী।

২. আর-রহিম—পরম করুণাময়, বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণা দানকারী।

৩. আল-গফুর—অতীব ক্ষমাশীল, বারবার ক্ষমা করেন।

৪. আস-সামি’—সর্বশ্রোতা, সবকিছু শুনতে পান।

৫. আল-বাসির—সর্বদ্রষ্টা, সবকিছু দেখতে পান।

৬. আল-হাকিম—পরম প্রজ্ঞাময়, সবকিছু হিকমতের সঙ্গে করেন।

৭. আল-ওয়াদুদ—পরম স্নেহশীল ও মমতাময়।

৮. আল-কাদির—সর্বশক্তিমান, সবকিছুর ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।

৯. আস-সালাম—শান্তির উৎস, দোষ ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত।

১০. আস-সামাদ—চিরস্থায়ী, অমুখাপেক্ষী; সব সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণকারী।

নামের উসিলায় দোয়া
আল্লাহকে তাঁর সুন্দর নামের উছিলায় ডাকলে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বাড়ে।আল্লাহ নিজেই এই নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:

বিপদে: ‘ইয়া লতিফ’—হে অতি সূক্ষ্ম করুণাশীল,আমাকে এই কষ্ট থেকে রক্ষা করুন।

রিজিকের জন্য: ‘ইয়া রাজ্জাক’—হে রিজিক দানকারী, আমাকে হালাল রিজিক বাড়িয়ে দিন।

জ্ঞানের জন্য: ‘ইয়া আলিম’—হে সর্বজ্ঞ,আমাকে উপকারী জ্ঞান দান করুন।

ক্ষমার জন্য: ‘ইয়া গফুর’—হে অতীব ক্ষমাশীল,আমার গুনাহ ক্ষমা করুন।

আরোগ্যের জন্য: ‘ইয়া শাফি’—হে রোগমুক্তিদাতা,আমাকে সুস্থতা দান করুন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে,যে ব্যক্তি তা গণনা করবে,সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৭৩৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৭৭)

ইমাম নববি (রহ.) বলেন,এখানে ‘গণনা করা’ অর্থ মুখস্থ করা,নামগুলোর অর্থ জানা এবং তদনুযায়ী আমল করা। (শারহুন নববি ‘আলা সহিহ মুসলিম, ১৭/৪৮৩৬, দার ইহইয়া আত-তুরাস, বৈরুত, ২০০০)

কোন নামে আল্লাহকে ডাকা উচিত নয়
আল্লাহকে এমন নামে ডাকা নিষেধ,যা কোরআন বা হাদিসে উল্লেখ নেই,কিংবা যে নামগুলো মনগড়া এবং আল্লাহ নিজে যেগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেননি।আল্লাহ নিজে তাঁর সুন্দর নামে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিকৃত বা মনগড়া নামে ডাকতে নিষেধ করেছেন,তখন তাঁর পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে বাঁকা পথ অবলম্বন করা অপরাধ। যাঁরা জেনেশুনে তাঁর নাম বিকৃত করে বা মনগড়া নামে ডাকেন,তাঁদের বর্জন করতে হবে।তবে অজ্ঞতাবশত এমন ভুল হলে এবং পরে সংশোধন করলে আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহর নাম ও গুণাবলি (আসমাউল হুসনা ও সিফাত) অস্বীকার করা,মনগড়া ব্যাখ্যা করা বা সাদৃশ্য আরোপ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আরও খবর

Sponsered content