জাতীয়

আমরা শান্তি চাই, উন্নতি চাই-প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা

  প্রতিনিধি ২৪ নভেম্বর ২০২২ , ২:১৯:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।। শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা শান্তি চাই, উন্নতি চাই। আমাদের যুব সমাজ আমাদের ভবিষ্যত। তারাই এদেশের ছেলে-মেয়ে। সবাইকে এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে,এদেশের উন্নতি করতে হবে। সেই কথা মনে রাখতে হবে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দীর্ঘদিন কোনো জনসভায় অংশ নিতে না পারার বিষয়টি পাঠিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমার প্রথম জনসভা এই যশোরে।

নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতেই যশোরে জনসভা করে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত এক যুগে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি এটুকুই বলব যে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন,আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই যে আগামী নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।”

“দেবেন কি না, আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন,” শেখ হাসিনা বললে সমাবেশে উপস্থিত হাজারো মানুষ জনতা হাত তোলে। তা দেখে তিনি বলেন, “আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”দীর্ঘদিন পর ঢাকার বাইরে এমন জনসভায় সরাসরি উপস্থিত হয়ে বিগত সময়ের মতো ভবিষ্যতেও যশোরবাসী নৌকায় ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

যে স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটিকে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলার কথা বলে শেখ হাসিনা ছাত্র ও যুবসমাজের উদ্দেশে বলেন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা এবং লেখাপড়া করতে হবে।

“কী করবে তো সবাই,”- এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে, মাদক গ্রহণ চলবে না। যেটা একটা মানুষের জীবন শেষ করে দেয়। কাজেই মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে আর কেউ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসে লিপ্ত হতে পারবে না।”

“যে যশোরের মাটিতে আমার নানা শুয়ে আছেন, যে যশোর মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরাট অবদান রেখেছে, যে যশোর খেজুরের গুঁড়ের যশোর, ফুলের যশোর, উন্নয়নের একটা দৃষ্টান্ত সেই যশোরে জনসভা করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।”

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, “সব সময়ই এই যশোর গুরুত্বপূর্ণ একটা জেলা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোরের অবদান আমরা কোনোদিন ভুলতে পারি না। সব সময় তারা অবদান রেখেছে। অথচ এই যশোরের উন্নয়নে তারা (বিএনপি-জামায়াত জোট) তো কিছু করেনি।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “খুন করা, হত্যা করা, অত্যাচার করা, নির্যাতন করা, জেল-জুলুম মামলা দেওয়া ছাড়া তারা কিছুই দিতে পারেনি।”

দুর্নীতির মামলায় তারেক রহমানের সাজার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়াও জনগণের অর্থ মারার পাশপাশি এতিমের অর্থও মেরে দিয়েছে। জিয়া অরফানেজের টাকা মেরে সেও আজকে সাজাপ্রাপ্ত।

“আর সাজাপ্রাপ্তরা যে দলের নেতা সেই দল জনগণকে কী দেবে বলেন? তারা কিছুই দিতে পারে না। তারা শুধু মানুষের রক্ত চুষে খেতে পারে।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করে এগিয়ে চলার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “এই বাংলাদেশের একটি মানুষ না খেয়ে থাকবে না, একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না, একটি মানুষ রোগে-ধুঁকে মরবে না। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে। আমরা সেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং তা বাস্তবায়ন করেই বাংলাদেশকে এগিযে নিয়ে যেতে হবে।

“আর তার জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই, আপনাদের দোয়া চাই। আপনাদের আশীর্বাদ চাই।”

১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যের নির্মমভাবে হত্যা করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছিলাম। সেই হারাবার ব্যথা বেদনা, বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না, মামলা করার অধিকার ছিল না। বিচারহীনতার কালচার ছিল। সেই দুঃখ বেদনা নিয়েও এই বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলাম শুধু আপনাদের জন্য। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, যে মানুষের জন্য সারাটা জীবন আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উৎসর্গ করেছিলেন।”

মানুষের ভাগ্য গড়াই তার কাজ জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “কাজেই আমি আপনাদের দোয়া চাই যে, যতটুকু আমার সাধ্য আছে আমি আপনাদের পাশে থেকে আপনাদের সেবা করে যাব।”

বারবার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনিবলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার এই আঘাত থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছেন। বোধহয় আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছেন বাংলার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করবার। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ দরিদ্র থাকবে না, এই বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে। এই বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ করে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো।

“আজকে এই ওয়াদা দিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।”

জনসভায় উপস্থিত নারী, যুবক, বৃদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে অনেক দূরে দূরে মানুষ। সবাইকে দেখতে পারলাম না। কিন্তু দূরে থাকায় হয়ত না দেখলেও আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে।”

জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো.আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তব্য দেন।

আরও খবর

Sponsered content