অপরাধ-আইন-আদালত

আমতলীতে হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সমাজচ্যুত

  প্রতিনিধি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:০৯:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

আমতলী প্রতিনিধি।।হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বাদল সরদার ও তার পরিবারকে স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার ও তার সহযোগীরা সমাজচ্যুত করে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।সমাজচ্যুত বাদল সরদার এমন অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার,তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদারকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির দাবি করেছেন এলাকাবাসী।ঘটনাটি ঘটেছে আমতলী উপজেলার ছোট নীলগঞ্জ গ্রামে।

জানা গেছে,উপজেলার ছোট নীলগঞ্জ গ্রামের বাদল সরদারের মেয়ে আয়শাকে ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাপুর এলাকার সাইফ ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেন।ওই দম্পতির একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।২০২১ সালে পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়।ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সাইফ ইসলাম স্ত্রী আয়শাকে তালাক দেন।এ নিয়ে স্ত্রী আয়শা স্বামী সাইফের বিরুদ্ধে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।

আদালতের বিচারকের নির্দেশে আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান সিকদার ও নুরুল ইসলাম শানু গত বছর ২৬ ডিসেম্বর বৈঠকে বসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা করে দ্বিতীয় বিয়ে দেন;কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার,তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদার এ বিয়ে শরীয়ত সম্মত হয়নি বলে ঘোষণা করে মেয়ের বাবা বাদল সরদার ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে দেন।হিল্লা বিয়ে না পরানো পর্যন্ত তাদের সমাজচ্যুত করে এক ঘরে করে রাখা হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।

মেয়ের বাবা বাদল সরদার অভিযোগ করেন,হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার, তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদার আমাকে সমাজচ্যুত ঘোষণা দিয়ে একঘরে করে রেখে দিয়েছেন।আমার বাড়িতে কাউকে আসতে দিচ্ছেন না।কেউ আসলে তাকেও সমাজচ্যুত করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।প্রভাবশালীদের সমাজচ্যুত করার ঘোষণায় আমি একঘরে জীবনযাপন করছি।

তিনি আরও বলেন,তাদের ভয়ে এলাকার কেউ আমার সঙ্গে ওঠাবসা করছেন না এবং কথাও বলছেন না।আমি প্রশাসনের কাছে আমার প্রতি এমন ঘটনার বিচার দাবি করছি।

প্রতিবেশী আল মামুন হাকিম,রেজাউল কবির ও আলী হায়দার বলেন,বাদল সরদারের বাড়িতে কাউকে আসতে দিচ্ছে না।আসলে তাকেও সমাজচ্যুত করবে বলে আজিজুল সিকদার,তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদার হুমকি দিচ্ছেন।

তারা আরও বলেন,প্রভাবশালীরা এ বিয়ে শুদ্ধ হয়নি বলে ঘোষণা দিয়েছে।হিল্লা বিয়ে না পরানো পর্যন্ত বাদল সরদার ও তার পরিবারকে একঘরে করে রাখা হবে বলে তারা ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রভাবশালী তৈয়ব গাজী মোবাইল ফোনে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,শরীয়ত অনুসারে বিয়ে হয়নি।বাদল সরদারকে শরীয়ত অনুযায়ী মেয়েকে হিল্লা বিয়ে পড়ানোর জন্য বলেছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মৃধা বলেন, আদালতের নির্দেশমতো বিয়ে পড়ানো হয়েছে।এখানে দোষের কিছু নেই।তিনি আরও বলেন,বিষয়টি আমি জেনে স্থানীয়দের শান্ত করতে চেষ্টা করেছি।

আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন,বিষয়টি আমি জেনেছি।এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান বলেন,আদালতের মৌখিক নির্দেশে এবং স্বামী-স্ত্রী পুরনায় ঘর সংসার করায় আমরা তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়েছি।

আমতলী থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) রনজিৎ কুমার সরকার বলেন,অভিযোগ পাইনি।অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই।প্রচলিত আইন অনুসারে এটা হওয়ার কথা।জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content