প্রতিনিধি ১১ জানুয়ারি ২০২৩ , ১:৩১:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
তানজিম আল ইসলাম।।প্রায়ই প্রেমিক-প্রেমিকা কোর্টে আইনজীবীর চেম্বারে এসে বলেন,তাঁরা ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করতে চান।অধিকাংশ লোকেরই ধারণা ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করলেই বিয়ে হয়ে গেল।কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়।কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে পরবর্তী সময়ে অনেক আইনি ঝামেলাও পোহাতে হয়।
কোর্ট ম্যারেজ
আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিধান নেই এবং এর কোনো ভিত্তিও নেই।এটি একটি লোকমুখে প্রচলিত শব্দ। অধিকাংশ মানুষ কোর্ট ম্যারেজ বলতে সাধারণত হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই বুঝে থাকেন।এ হলফনামা নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হয়ে থাকে।
অনেকেই মনে করেন,এ হলফনামা করলেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল।আসলে কিন্তু তা নয়।হলফনামাটি সম্পন্ন করলেই আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে,এটি বলা যাবে না।এটি বিয়ের ঘোষণামাত্র,অর্থাৎ এ হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে এ মর্মে ঘোষণা দেন মাত্র।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক আইন অনুযায়ী প্রথমে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।তারপর তাঁরা ইচ্ছা করলে এ হলফনামা করে রাখতে পারেন।পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ে না করে শুধু হলফনামা সম্পন্ন করা উচিত নয়।
বিয়ের নিয়ম
মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।ছেলে-মেয়েকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।তাঁদের মধ্যে সম্মতি থাকবে এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষী থাকতে হবে।মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী,প্রতিটি বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে।কার সঙ্গে কার,কত তারিখে,কোথায়,কত দেনমোহর ধার্য,কী কী শর্তে বিয়ে সম্পন্ন হলো,সাক্ষী এবং উকিলের নাম প্রভৃতির একটা হিসাব সরকারি নথিতে লিখে রাখাই হলো নিবন্ধন।বর্তমান আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব মূলত বরের।বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।অন্যথায় কাজি ও পাত্রের দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
মুসলিম বিয়েতে কাবিননামা হলো বিয়ের চুক্তিপত্র।নিকাহনামা বা কাবিননামা হচ্ছে বিয়ের দলিল এবং কাবিননামা থাকলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।স্ত্রীর দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্য কাবিননামার প্রয়োজন হয়।এ ছাড়া সন্তানের বৈধ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এবং স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু হলে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি আদায়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি করা কাবিননামার প্রয়োজন হয়।এ ক্ষেত্রে কাবিননামা ছাড়া শুধু বিয়ের হলফনামা সম্পন্ন করা হলে বৈবাহিক অধিকার আদায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। বর্তমানে হিন্দু বিয়েতে নিবন্ধনের বিষয়টি ঐচ্ছিক করা হয়েছে।তবে বিয়ে নিবন্ধন করে নেওয়াই উচিত।প্রচলিত হিন্দুপ্রথা না মেনে হলফনামা করা হলেও এতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল বলা যাবে না।অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরও নিজস্ব আইনে ও রীতিতে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।কোর্টে গিয়ে শুধু হলফনামা করে কথিত কোর্ট ম্যারেজ না করে যথাযথ পদ্ধতিতে পারিবারিক আইনকানুন মেনেই বিয়ে সম্পন্ন এবং এ–সংক্রান্ত দলিলাদি সম্পাদন করা উচিত।
তানজিম আল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী