অপরাধ-আইন-আদালত

আইনগতভাবে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে দখল পুনরুদ্ধার সম্ভব

  প্রতিনিধি ২৭ অক্টোবর ২০২৫ , ১:৪২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।কাঁধ নেড়ে হতাশা পশ্চাদপসরণ করুন—বেদখল জমি ফিরে পাওয়া এখন একেবারেই অসম্ভব নয়। সাম্প্রতিকভাবে চালু হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন,২০২৩-এর বিধিমালা ও প্রচলিত আদালতীয় ব্যবস্থা মিলিয়ে মাত্র তিনটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই অনেক ক্ষেত্রেই জমি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে।চলুন জানি কীভাবে — ধাপে ধাপে।

গতকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমন সংবাদ মিলছে—প্রবাসী হলেও অথবা লম্বা সময় জমি দূরে রেখে দিলেও আইনগতভাবে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে দখল পুনরুদ্ধার সম্ভব।আজকের প্রতিবেদনে আমরা সেই তিনটি স্টেপ সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ করলাম।

প্রথম ধাপ — নতুন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন,২০২৩-এর বিধিমালার আওতায় এখন প্রশাসনিক স্তরেও জরুরী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।যদি কেউ জাল দলিল তৈরি করে বা প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল করে থাকে এবং তা প্রমাণিত হয়,আদালত সেই আদেশের কপি জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাবে।

এই পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে অবৈধ দখল প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ সংক্রান্ত আদান-প্রদান (প্রতিরোধ/উচ্ছেদ) আদেশ চাইতে পারবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার নির্দেশও দিতে পারবেন—এটির অর্থ,আদেশ থাকলে পুলিশ-সহায়কভাবে দখল প্রত্যাহার বা পুনর্বহাল কার্যকর করা সম্ভব হবে।

কী করবেন: সকল মূল দলিল,পরিচয়পত্র ও প্রমাণাদি নিয়ে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (অথবা যে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপ্রাপ্ত) বরাবরে আবেদন করুন এবং বিধিমালার প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

দ্বিতীয় ধাপ — দ্রুত জমি পুনরুদ্ধারের জন্য ধারা ১৪৫ অনুযায়ী মোকদ্দমা (সামারি/নজরদারি প্রক্রিয়া)

জমি দ্রুত ফিরে পেতে ধারা ১৪৫ (প্রচলিত বিধি-প্রকরণ অনুযায়ী) মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোকদ্দমা করা যেতে পারে—এটি এমন একটি তড়িঘড়ি প্রক্রিয়া যেখানে দখল প্রমাণ করা গেলে সে ভিত্তিতেই দ্রুত নির্বাহী আদেশ পাওয়া যায়।এই মোকদ্দমায় মূল বিষয়টি হলো ‘দখল আছে কি না’—কাগজপত্রের জটিলতা না থাকলেও বাস্তব দখলের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হতে পারে।

এই মামলায় ভূমি উপ-কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে এবং সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে রায় হতে পারে।যদি প্রতিবাদী পক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে দখল হস্তান্তরে ব্যর্থ হন,নির্বাহী আদেশ কার্যকর করা হয়।

কী করবেন: দ্রুত আপনার নিকটস্থ থানা/ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে ভূমি উপ-কমিশনারের কাছে তদন্ত ও ১৪৫ ধারায় আদালতে মামলা জমা দিন; প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ সঙ্গে রাখুন।

তৃতীয় ধাপ — চূড়ান্ত ও পুরনো মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষণামূলক মামলা (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার: সেকশন ৪২, Specific Relief Act, 1877 টাইপের পথ)

যদি ১৪৫ ধারায় রায় আপনার পক্ষে না আসে বা জমির মালিকানা বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী রায় প্রয়োজন হয়,তাহলে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা (মালিকানার মামলাও) দায়ের করতে হবে।প্রচলিত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ও সাধারণ দেওয়ানি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালত যদি আপনার মালিকানা ঘোষণা করে দেন,তখন সেটি চূড়ান্ত রায় হিসেবে কার্যকর—এমন রায়ে পুলিশ-সহ নির্বাহী কার্যক্রমের ভিত্তি তৈরি হয় এবং ভবিষ্যতে দখলদারকে অবস্থান ছাড়তে বাধ্য করা সহজ হয়।

কী করবেন: আপনার সমস্ত জরুরি দলিল (মূল দলিল, রেজিস্ট্রেশন কপি,প্রমাণ,সাক্ষীর বিবৃতি ইত্যাদি) নিয়ে একজন অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর মাধ্যমে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করুন।

বাস্তব উদাহরণ ও পরামর্শ

একজন কুমিল্লা থেকে জানিয়েছেন—নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে তিনি রায় পেয়েছেন,অথচ দখলদার জমি ছাড়ছে না।এমন ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশ থাকলে আপনি সেই আদেশের বলপ্রয়োগ চেয়ে পুনরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারবেন। আবার যদি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় ব্যাহত হন,তখন আদালতীয় ঘোষণামূলক রায়ই চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে।

জরুরি পরামর্শ:

সব মূল দলিল,খতিয়ান,গোপন/প্রমাণস্বরূপ চিঠিপত্র,সাক্ষীর বিবৃতি এবং পূর্বের প্রশাসনিক আবেদন সংরক্ষণ করুন।

প্রত্যেক ধাপে অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর পরামর্শ নিন—তারা কোন ধাপে কোন রুট নেবেন,সে সম্পর্কে স্পষ্টতা দেবেন।

দখল মুক্তির সময় নিজের নিরাপত্তা ও আইনগত সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রাখুন; কখনোই আত্মঘাতী বা অবৈধ পন্থা নেবেন না।

উপসংহার: ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন,কিন্তু বর্তমান আইন ও বিধিমালা অনুসরণ ও সঠিক ধাপ গ্রহণ করলে দ্রুতও সমাধান সম্ভব।প্রথমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ চাওয়া,প্রয়োজনে ধারা ১৪৫ মাধ্যমে দ্রুত পুনর্বহাল,এবং চূড়ান্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষণামূলক মামলা—এই তিনটি ধাপ যথোপযুক্তভাবে গ্রহণ করুন।

আরও খবর

Sponsered content