খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে যেকোনো সংস্করণেই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়

  প্রতিনিধি ১৬ জুলাই ২০২৫ , ৭:৪৪:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মেহেদী হাসান নাকি তানজিদ হাসান? সতীর্থ দুই ‘হাসান’কে এভাবে মুখোমুখি না করে বলে দেওয়া ভালো ‘দুজনই’।শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে যেকোনো সংস্করণেই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ে,তাঁরা ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান!’

পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কা,ডাম্বুলায় বাংলাদেশ।কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজকের শেষ টি–টোয়েন্টিটি রূপ নিয়েছিল অলিখিত ফাইনালে।যে জিতবে, ২–১–এ সিরিজ তাদের।পাল্লেকেলেতে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছিল এমনই আরেকটি সুযোগের সামনে। সেই ম্যাচে হয়নি,কিন্তু হয়েছে।ম্যান অব দ্য ম্যাচ যদিও মেহেদী হাসান,অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশের ৮ উইকেটের জয়ের নায়ক বলতে হবে মেহেদী–তানজিদ দুজনকেই।

মেহেদীর অবদান বল হাতে।১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে আজ নিজের ক্যারিয়ার–সেরা বোলিংটাই করলেন এই অফ স্পিনার।তাতে ১৩২ রানে ইনিংস শেষ করা শ্রীলঙ্কাকে টপকাতে বাঁহাতি ওপেনার তানজিদও খেললেন আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে নিজের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস।

নুয়ান তুষারার বলে এলবিডব্লু হয়ে যাওয়া ওপেনার পারভেজ হোসেনকে হারাতে হয়েছিল ইনিংসের প্রথম বলে।কিন্তু সেটাকে কোনো ধাক্কাই মনে হয়নি।দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক লিটন দাস আর তানজিদের ৭৪ রানের জুটিতে অনেকটাই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।২৫ বলে অপরাজিত ২৭ করা তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৫৯ রানের পরের জুটিতে তানজিদ ম্যাচ শেষ করে আসেন ১৭তম ওভারেই।

বিশেষ করে তানজিদ–লিটনের সৌজন্যে আগের মতো বড় জুটি বা বড় ইনিংস না হওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়নি,যেটা হলে ১৩২ রানও অজেয় হয়ে উঠতে পারত বাংলাদেশের জন্য।

কলম্বোয় ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬২ করার পর থেকেই ব্যাটে রানের দেখা পাচ্ছিলেন না তানজিদ।পরের দুই ওয়ানডেতে ৭ ও ১৭ এবং প্রথম দুই টি–টোয়েন্টিতে ১৬ আর ৫ রান। টিম ম্যানেজমেন্ট তবু আস্থা রেখেছিল তাঁর ওপর, তানজিদও যার দারুণ প্রতিদানই দিলেন।মাত্র ২৭ বলে ফিফটি করে তখনই এক বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কাও মেরে ফেলেছিলেন ৫টি।সপ্তম ওভারে দুটিই শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কার বলে লং অন দিয়ে।৪৭ বলে অপরাজিত ৭৩ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসে পরে তানজিদ ছক্কা মেরেছেন আরও একটি।

মেহেদীর গল্পটাও ফিরে আসারই। টি–টোয়েন্টির সহ–অধিনায়ক থেকে একেবারে নাই–ই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।নাই বলতে একাদশের বাইরে।গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরের দলে তিনি ছিলেন লিটন দাসের ডেপুটি। কিন্তু আমিরাতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে খেললেন দুটিতে,পাকিস্তানে শুধু প্রথম টি–টোয়েন্টিতে।

শ্রীলঙ্কায় এসেও টিম কম্বিনেশন মেহেদীকে খেলতে দিচ্ছিল না। প্রথম দুই ম্যাচে মেহেদী হয়ে থাকলেন দর্শক।একের পর এক ম্যাচ মাঠের বাইরে বসে থেকেই কিনা আজ মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় সুযোগ পেয়ে দুই হাত ভরেই নিলেন তা। নতুন বলে শরীফুল ইসলামের সঙ্গী হয়ে ১১ রানে ৪ উইকেট।

একদিকে মেহেদী,অন্যদিকে কখনো মোস্তাফিজুর রহমান, কখনো অফ স্পিনে শামীম হোসেন—শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের তটস্থ করে রেখেছিলেন তাঁরাই।উইকেটে কিছুটা টার্ন পাচ্ছিলেন স্পিনাররা,পেসার মোস্তাফিজও একবার আচমকা বাউন্সারে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কাকে বেশ চমকে দিলেন।

শ্রীলঙ্কাকে ১৩২ রানে আটকে দেওয়ার কৃতিত্ব বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মেহেদীরই বেশি প্রাপ্য। তবে রানটা ১৩২ না হয়ে আরও কম হলো না কেন,সেই প্রশ্ন থাকবে এবং তার উত্তর খুঁজতে চাইলে তাকাতে হবে শরীফুলের বোলিংয়ের দিকে।শ্রীলঙ্কার ১৩২ রানের মধ্যে ৪ ওভারে ১২.৫ ইকোনমি রেটে তিনি একাই দিয়েছেন ৫০!আরেক পেসার তানজিম হাসানও ২ ওভারে দিয়ে গেছেন ২৩ রান।

ইনিংসের শুরু আর শেষে শরীফুল ছিলেন খুবই খরুচে।প্রথম ওভারের শেষ বলে কুশল মেন্ডিসকে স্কয়ার লেগে তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচ বানিয়ে সাফল্য এনে দিলেও আগের ৫ বলেই দিয়ে দেন ১৪ রান।১৫.৪ ওভারে তিন অঙ্কে পৌঁছানো শ্রীলঙ্কার রানটা হঠাৎই বেড়ে গেছে শেষ ওভারে এবং সেখানেও শরীফুল।শেষ ৩ ওভারে আসা ২৭ রানের মধ্যে ওই ওভারেই তিনি দিয়ে দেন ২২, দুই ছক্কা আর দুই বাউন্ডারিতে যার ২০–ই নেন দাসুন শানাকা।

তারপরও মেহেদীর স্পিনে বিভ্রান্ত শ্রীলঙ্কা ৮৮ রানেই হারায় ৬ উইকেট। নিশাঙ্কার আগে কুশল পেরেরা,দিনেশ চান্ডিমাল আর আসালাঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তিনটিও পেয়েছেন তিনি। তখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রান তিন অঙ্কে যায় কি না,সেই সংশয় প্রেসবক্সের স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে।গ্যালারিভর্তি দর্শক যদিও স্বাগতিক খেলোয়াড়দের উদ্দীপ্ত করার চেষ্টায় কার্পণ্য করছিলেন না,কিন্তু শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংটাই হচ্ছিল না সে রকম।

মাঝে কামিন্দু মেন্ডিসের ১৫ বলে ২১ আর শেষ দিকে শানাকার ২৫ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংস দুটি ম্যাচের চেহারা একটু বদলে দিল,যাতে এ পাশ থেকে ‘অবদান’ শরীফুল আর তানজিমের।এ দুজনকে বাদ দিলে বাংলাদেশের বোলারদের কারও ইকোনমি রেটই ৫–এর ওপরে নয়। সবচেয়ে কৃপণ অবশ্য মেহেদী,টি–টোয়েন্টিতেও ওভারপ্রতি মাত্র ২.৭৫ করে দিয়েছেন এই অফ স্পিনার।

কামিন্দুকে ফিরিয়ে শানাকার সঙ্গে তাঁর ২০ রানের জুটি ভাঙার কৃতিত্বটা অবশ্য শামীমের। তানজিমের আগের ওভারের প্রথম ২ বলে চার ও ছক্কা মেরেছিলেন কামিন্দু। পরের ওভারের প্রথম বলেই তাঁকে পয়েন্টে তানজিমের ক্যাচ বানান শামীম।

শুরুর দিকেই ভেঙে পড়া শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা আরও কিছু সুযোগও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলার–ফিল্ডারদের,যদিও সহজ ছিল না কোনোটাই।শরীফুলের করা তৃতীয় ওভারেই নিশাঙ্কা দুবার ক্যাচের সুযোগ দিয়ে বেঁচে যান ১২ আর ১৬ রানে।

তানজিম আর মোস্তাফিজ অনেক চেষ্টা করেও নিতে পারেননি ক্যাচ দুটি।এর আগে একবার অল্পের জন্য রানআউট থেকেও বেঁচেছেন নিশাঙ্কা।

এত কিছুর পরও শেষটা বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কা থেকে অবশেষে একটা সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন ক্রিকেটাররা।

আরও খবর

Sponsered content