বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড ছাড়া ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না!

  প্রতিনিধি ১৪ জুলাই ২০২৫ , ৪:৪১:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড ছাড়া ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) নামের এক সংগঠনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সময় ৪ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না।পাশাপাশি প্রতিবছর কার্ড নবায়নের জন্য দেড় হাজার টাকা খরচ হওয়ায় অনেকেই ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড করেন না।ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।এর পরও বিভিন্ন ব্যাংক ফ্রিল্যান্সারদের অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড চাচ্ছে।

ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড ছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জটিলতার বিষয়ে আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন,যেকোনো ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড লাগবে,এমন কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ২০২০ সালের ফ্রিল্যান্সারদের ক্রেডিট কার্ড এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এ রকম কার্ড থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

মিজানুর রহমান নামের ভুক্তভোগী এক ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘দুই মাস আগে ব্র্যাক ব্যাংকের মিরপুর শাখায় ম্যাট্রিকস অ্যাকাউন্ট (ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষায়িত অ্যাকাউন্ট) খোলার জন্য গেলে তাদের প্রথম শর্ত ছিল ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড লাগবে।আমি তাদের আমার ফ্রিল্যান্স কাজের প্রোফাইল, সনদ,রেমিট্যান্স সনদ,ক্লায়েন্ট ইনভয়েস,ট্যাক্স রিটার্ন প্রমাণাদি দেওয়ার পরও তারা অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হয়নি।তাদের দাবি,বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ম্যাট্রিকস অ্যাকাউন্ট খুলতে ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ডের তথ্য দিতে হবে।আমার কাছে পুরোনো একটা ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড রয়েছে।তিন হাজার টাকা জমা দিয়ে ২০২০ সালে করেছিলাম কার্ডটি।কার্ডটি নবায়ন করতে হলে আমাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।আবার অপেক্ষা করতে হবে মাসের পর মাস।তাই ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নবায়ন না করে পুরোনো কার্ডটা জমা দিলেও আমাকে প্রাথমিকভাবে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।এরপর দুই–তিন মাস ধরে বিভিন্ন তথ্য জমা দেওয়ার পর কিছুদিন আগে অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছি।’

টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার ও আপওয়ার্ক বাংলাদেশ গ্রুপের অ্যাডমিন কাজী মামুন বলেন,ভুঁইফোড় সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) আইডি কার্ড না নেওয়ায় ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা।সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে ব্যাংকিং তথ্য হালনাগাদ করতে গেলে তারা ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নামের একটি সনদ চায়।এই কার্ড ছাড়া ভেরিফিকেশন করার পন্থা জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়,এই কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক।পরবর্তী সময়ে এসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা চাওয়া হলে তারা দেখাতে ব্যর্থ হয় এবং স্বীকার করে ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক নয়।ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড মূলত পুরোটাই ব্যক্তিগত সার্থ সিদ্ধির জন্য একটি মহল চালু করেছিল।দেশে রেমিট্যান্স নিয়ে আসার প্রক্রিয়া সহজ না করে কঠিন করে তুলছে এই সব অহেতুক সনদ।ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংকিং খাত দুর্নীতিমুক্ত করা হোক এবং এ ধরনের ভুঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’

কুমিল্লার জায়ান্ট মার্কেটার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাসুম বিল্লাহ ভূঁইয়া বলেন,‘ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তথাকথিত বেসরকারি সংগঠনের দেওয়া ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড কেন বাধ্যতামূলক করা হবে।একজন ফ্রিল্যান্সারের পরিচয় যাচাইয়ের দায়িত্ব বিএফডিএস কোন যোগ্যতায় পেয়েছিল,বিষয়টা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে।ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড যদি করতেই হয় তবে সরকার সরাসরি করুক।’

বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) সভাপতি তানজীবা রহমান বলেন,ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড দেয় আইসিটি বিভাগ।আমরা শুধু কারিগরি সমর্থন দিয়ে থাকি।এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের অনুমতি ছাড়া আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

অভিযোগের বিষয়ে ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান,ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কোন ধরনের জটিলতায় ভুগছেন এবং আগের সরকার কী ধরনের কাজ করেছে সে সম্পর্কে জানার জন্য ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করলে সবচেয়ে ভালো হবে।ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড বা বিশেষ পরিচিতির চেয়ে আমি গুরুত্ব দিই এনআইডিভিত্তক তথ্যভান্ডার তৈরি করাকে,যা একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।সেই তথ্যভান্ডারে নাম থাকলে ব্যাংকগুলো ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করবে।

ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জটিলতা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমার মনে হয় মতবিনিময় সভার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশনা উঠে আসবে।ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে সরকার খুবই আন্তরিক।আমরা ফ্রিল্যান্সারদের কথা শুনতে চাই। আর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে চাই।’

আরও খবর

Sponsered content