প্রতিনিধি ৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ৫:১৭:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।টানা দুই বছর ব্যাপক উল্লম্ফনের পর গত বছর কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বিদেশে কর্মসংস্থান।আগের বছরের তুলনায় গত বছর তিন লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান কমে গেছে।এ বছর তা আরও কমার শঙ্কা আছে।তবে আশার কথা হলো, বিদেশে কর্মী কমলেও বেড়েছে প্রবাসী আয়।

বড় আকারের তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদেশে কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন একমাত্র ভরসা হিসেবে টিকে আছে সৌদি আরবের শ্রমবাজার।
বাংলাদেশ জনশক্তি,কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার কর্মী।পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখের বেশি কর্মী।২০২৩ সালে তা আরও ২ লাখ বেড়ে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়।তবে গত বছর তা তিন লাখ কমে দাঁড়ায় ১০ লাখে।এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কর্মী গেছেন মাত্র পাঁচটি দেশে।এগুলো হচ্ছে সৌদি আরব,মালয়েশিয়া,কাতার,সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
তবে মালয়েশিয়া ও আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য আরেক বড় শ্রমবাজার ওমানেও কর্মী নিয়োগ বর্তমানে বন্ধ।ফলে চলতি বছর বিদেশে কর্মী পাঠানো আরও কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় ২০২৩ সালে কাজ নিয়ে যান সাড়ে তিন লাখের বেশি কর্মী।কিন্তু গত জুন থেকে দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে।গত বছর দেশটিতে সব মিলে কর্মী যেতে পেরেছেন এক লাখের কম।তার মানে আগের বছরের তুলনায় গত বছর দেশটিতে নতুন কর্মসংস্থান কমেছে দুই লাখের বেশি।ওমানে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন সোয়া লাখের বেশি।গত বছর শ্রমবাজারটি বন্ধ থাকায় কর্মী গেছেন মাত্র ৩৫৮ জন। আমিরাতে ২০২৩ সালে কর্মী গিয়েছিলেন প্রায় এক লাখ। গত বছর দেশটিতে কর্মী গেছেন ৪৭ হাজার।
তবে কর্মসংস্থান বেড়েছে সৌদি আরবে।দেশটিতে ২০২৩ সালে প্রায় ৫ লাখ কর্মী গেলেও গত বছর এটি বেড়ে সোয়া ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।এ বছর এমন ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।এরপর সৌদি আরবেও নতুন কর্মসংস্থান কমতে পারে।এ ছাড়া সৌদি আরব গিয়ে চুক্তি অনুসারে কাজ না পাওয়ার অভিযোগ আছে। এতে কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়ছেন এবং দেশটির পুলিশের হাতে আটক হয়ে দেশে ফিরে আসছেন।বিদেশ থেকে পাসপোর্ট ছাড়া শূন্য হাতে দেশে ফেরত আসা কর্মীদের মধ্যে শীর্ষে আছে সৌদি। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছে সৌদি আরব।বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়,দেশটিতে ফুটবল অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।এতে কর্মীর চাহিদা আসছে নিয়মিত।গত তিন মাসে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের বেশি হয়েছে সৌদিতে।আগামী জুনের পর দেশটিতে কর্মী পাঠানো কমতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকারিভাবে ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠানোর দাবি করা হলেও ২০২৪ সালে ১৩৫টি দেশে কর্মী গেছেন।তবে এর মধ্যে অধিকাংশ দেশে কর্মী গেছেন নামমাত্র।১৪টি দেশে কর্মী গেছেন মাত্র একজন করে।আরও ১৪টি দেশে কর্মী গেছেন দুজন করে। অন্তত ১০ হাজার কর্মী গেছেন; এমন দেশের সংখ্যা মাত্র ৮টি। আর লাখের বেশি কর্মী পাঠানো দেশ শুধু সৌদি আরব। বেসরকারি খাতে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন,সৌদি আরব ছাড়া প্রায় সব শ্রমবাজারই বন্ধ হয়ে আছে।একক বাজারনির্ভরতা নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।কোনো কারণে সৌদি আরব বন্ধ হয়ে গেলে বিপর্যয় তৈরি হবে।তাই এটি সতর্কতার সঙ্গে চালু রাখার পাশাপাশি বিকল্প শ্রমবাজার তৈরি করা জরুরি।
কর্মী কমলেও বেড়েছে প্রবাসী আয়:-
গত বছর সব মিলে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার।দেশের ইতিহাসে আগে কোনো বছর এত বেশি প্রবাসী আয় আসেনি।এর আগে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল প্রবাসী আয়।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টাকা পাচার কমেছে। আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা আছে। এতে হুন্ডি লেনদেনও কমে গেছে।ফলে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক খাতে টাকা পাঠানো বাড়িয়েছেন।
রামরু বলছে,শ্রমবাজারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো একক দেশনির্ভরতা।ঘুরেফিরে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারে সীমিত হয়ে আছে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান।এতে কর্মসংস্থান ধরে রাখা নিয়ে ঝুঁকি থেকে যায়।
রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন,নির্দিষ্ট শ্রমবাজারে নির্ভরতা সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।যেকোনো সংকটে সব সময় প্রবাসীরা বাড়তি টাকা পাঠান।সরকার পরিবর্তন হলে আশাবাদী হন।পট-পরিবর্তনের পর ব্যাংকের ওপর আবার আস্থা ফিরেছে।হুন্ডির চাহিদাও কমেছে আগের চেয়ে।সব মিলে প্রবাসী আয় বেড়েছে।তবে এককেন্দ্রিক বাজারনির্ভরতা থেকে বের হতেই হবে।এ খাতের বাজার ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া উচিত সরকারের।

















